ন্যুড বীচে যাবেন, নারী সঙ্গ নেবেন; সমালোচনাও করবেন

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম

দু’জন এডাল্ট মানুষ, নিজেদের ইচ্ছায় যৌন কর্মে লিপ্ত হতেই পারে। এই নিয়ে অন্তত আমার কোন রকম মাথা ব্যথা নেই। তিনি কেন অফিসে যৌন কর্মে লিপ্ত হলেন, এই নিয়েও আসলে কিছু বলতে চাইছি না।

যেই দেশে, ঠিক সপ্তাহ দুয়েক আগে এক নারী খোদ থানার ভেতরে পুলিশের ওসি আর অন্য পুলিশ সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে; এবং এর চাইতেও বড় ব্যাপার, ওই ধর্ষিতা নারীকেই এখন উল্টো জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে অন্য আরেকটি মামলা করে! সেই দেশে অফিসে কেন যৌন কর্মে তিনি লিপ্ত হলেন, এই আলোচনায়ও যেতে চাইছি না!

আমি এও বলতে চাইছি না, ওই ডিসি ভদ্রলোক তার বউ কিংবা সন্তানকে প্রতারিত করেছে বা এই টাইপ কিছু! তার যৌন চাহিদা থাকতে’ই পারে; এটা তার এবং তার পরিবারের বিষয় সমাধান করার। এই নিয়েও আমার কোন মাথা ব্যথা নেই।

বছর পাঁচেক আগে একটা লেখা লিখেছিলাম বিদেশে আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে। বাংলাদেশ থেকে বিসিএস ক্যাডার বেশ কয়েকজন এসছিল কি একটা ট্রেনিং করতে। তো এদের কাউকেই আমি চিনি না তেমন। বিদেশেই পরিচয়। প্রথম পরিচয়েই এরা আমার কাছে জানতে চেয়েছে

-ভাই এখানকার ন্যুড বীচ’টা কোথায়? একটু নিয়ে যান না। চিন্তা করে দেখুন, প্রথম পরিচয়েই এরা আমাকে এই প্রশ্ন করে বসেছে! এরপর আরেকজনকে আমার সামনেই বলতে শুনলাম

-এই দেশের মেয়েগুলো তো একেকটা মাল!

ন্যুড বীচে যে কেউই যেতে পারে, এতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। এদেরই দুই একজন (আমি বলবো না, ওই ডিসি মশাই এদের মাঝে ছিলেন কিনা) দেশে গিয়ে ভাব করেন- উনাদের মতো পবিত্র মানুষ আর দুনিয়াতে নেই। এমনকি একজন তো ফেসবুকে সেবার লিখেছিলেন

-মেয়েদের উচিত নিজেদের পোশাক সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

আপনি নিশ্চিত জেনে রাখুন, যেই ওসি থানাতেই এক নারীকে ধর্ষণ করেছে, সে হয়ত পার্কে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের ধরে নিয়ে আসছে, কেন তারা পার্কে বসে প্রেম করছিল! কিংবা যেই ছেলেটা একটু ফ্যাশন করে চুল কেটেছে, তাকে হয়ত কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে! এটাই আমাদের সমাজ আর আমাদের ভিআইপি মানুষজন।

বেশিদূর যেতে হবে না, এই আজই পত্রিকায় এসছে বিএনপির এক সাংসদ নাকি সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন, যদি তাকে ঢাকায় ১০ কাঠার একটা প্লট দেয়া হয়!

অথচ এই ভদ্রমহিলা, উঠতে-বসতে বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলে বেড়াচ্ছেন। অথচ সেই সংসদের কাছেই তিনি প্লট চেয়ে বসেছেন! আমার এই অংশটুকু পড়েই নিশ্চয় আপনার মনে হচ্ছে- ব্যাটা একটা সরকারের দালাল।

যদি আপনার মনে এই প্রশ্ন এরই মাঝে চলে আসে, তবে জেনে রাখুন, দেশের এতো সব খারাপ অবস্থার জন্য আপনিও দায়ী। কারন আপনি একজন অন্ধ মানুষ।

আর হ্যাঁ, শুধু বিএনপির ওই সাংসদ না, আজ এক্ষুনি যদি আপনি সাংসদদের ভিআইপি মর্যাদা কেড়ে নেন, ট্যাক্সমুক্ত দামী গাড়ি, বাড়ি, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে যদি বলেন সরকারী দলের ব্যবসায়ীদের সাংসদ হতে। দেখবেন কেউ তখন হতে চাইবে না।

এদের কেউ আসলে মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতি করে না। এরা রাজনীতি করে নিজদের জন্য। ঠিক তেমনি, এই যে আপনি আপনার পছন্দের রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কোন কিছু গেলেই অন্যকে দালাল মনে করেন, এই আপনিও স্রেফ নিজের সুবিধার জন্যই রাজনীতি করেন।

ঠিক একইভাবে এই যে ছেলেপেলেরা সবাই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়- কেউ পুলিশ, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা ডিসি! এরা কেউ দেশ সেবা করতে চায় না।

এরা চায় নিজদের ব্যাংক ব্যাল্যান্স বাড়াতে; সেই সঙ্গে ওই ডিসি'র মতো আনন্দ ফুর্তিতে মেতে উঠতে। কেন, ভুলে গেলেন নাকি, এই তো কয়েকদিন আগের কথা, এক আইজি প্রিজনের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল। এটাই আমাদের দেশ। আর এটাই আমরা!

এই নিয়েও আমার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে আপনি বিদেশে গিয়ে ন্যুড বীচে যাবেন, পর্দার আড়ালে অন্য নারীর সঙ্গে বিছানায় যাবেন আর প্রকাশ্যে এসে বলবেন- মেয়েদের উচিত নিজদের পোশাক সম্পর্কে সচেতন হওয়া! অবশ্য আপনার তো হিজাবী নারীই পছন্দ!

আপনি তো দু’মুখো সাপ। আপনি কেবল বিষই ছড়াতে পারবেন।

সমস্যা হচ্ছে এমন দু’মুখো সাপের সংখ্যাই এই দেশে বেশি। এরা পর্দার আড়ালে করে এক আর প্রকাশ্যে এসে বলে বেড়ায় আরেক। সমাজটা তো আর এমনি এমনি এতো বিষাক্ত হয়ে যায়নি। হয়েছে এই ধরনের দু’মুখো সাপগুলোর বিষাক্ত বিষে!

[লেখক ইউরোপে শিক্ষক করছেন। সাবেক শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]


সর্বশেষ সংবাদ