সাদর সম্ভাষণ, মহিমাময় মাস

কবি বলেছেন,
প্রিয় সৃষ্টিকর্তা,
তুমি দূরে থেকেও কাছে..
তুমি জানার বাইরে অজানা!
তুমি দেখায় অদেখা,
তুমি চেনার পরও অচেনা..
তাই তোমায় খুঁজে ফিরি
স্বপ্নের সকালে, দূরন্ত দুপুরে,
বিবর্ণ বিকেলে, রূপকথার রাত্তিরে!
তুমি চেয়েছিলে সকলেই
ফিরে আসুক সত্যের পথে..
তাই এতদিন পর
আমরা ফিরে আসি একসাথে!
তোমার পথে হাটতেই হৃদয়ের খুব গভীরে
অনন্ত মুগ্ধতায় অপার্থিব প্রশান্তি বসবাস করে!
আর তাই
রমাদানের কোমলতায়
সংযমের দিনরাত..
তুমি উপহার দিলে
রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাত!!

পশ্চিম আকাশের এক ফালি পবিত্র চাঁদ জানান দিচ্ছে; রহমত, মাগফেরা আর নাজাতের সওগাত নিয়ে মহিমান্বিত ও আধ্যাত্মিক মাস আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। আহলান সাহলান, খোশ আমদেদ মাহে রমাদান।

হে তাকওয়া অর্জনের মাস! টানা ত্রিশ দিন সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধিতে উজ্জীবিত পবিত্র আত্মা ও নাফরমানী আত্মার মধ্যে পার্থক্যকারী ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের অন্যতম ব্যক্তিগত ও শারীরিক ইবাদতের নাম সিয়াম। হাজার বছরের চেয়েও উত্তম রজনী সমৃদ্ধ মাস তোমায় স্বাগতম। ঈমানদারদের আকাঙ্ক্ষিত, ইসলামের বহু ঘটনার সাক্ষী কুরআন নাযিলের মাস তোমায় স্বাগতম। কুরআন নাযিলই এ মাসকে অন্যন্য বৈশিষ্ট্যে উদ্ভাসিত করেছে।

আশরাফুল মাখলুকাত থেকে অন্য প্রাণীদের পার্থক্য হচ্ছে, আশরাফুল মাখলুকাতের একটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চরিত্র রয়েছে। নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক ভুলেই আশরাফুল মাখলুকাত "বালহুম আদল" পর্যায়ে উপনীত হয়। আর মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে পার্থক্যকারী দিক স্মরণ করিয়ে দিয়ে রমাদান নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতার চর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।

আর পঙ্কিলতায় ও অননুমোদিত কাজে উৎসাহদানকারী শয়তান এ মাসে বন্দী থাকায় নিশ্চয় ধরনীর বুকে আশরাফুল মাখলুকাতদের মধ্য পবিত্র আত্মারা রমাদানের সুকোমল, স্নিগ্ধ ও পবিত্র চাঁদ দেখে কোরাসে গাইছে; মাহে রমাদানের আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম!

এ পর্যায়ে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন। রমাদানকে স্বাগত জানানোর মানে তথাকথিত বর্ষবরণের মত বর্ষের প্রথম দিনকে নৃত্য-সঙ্গীতে আনুষ্ঠানিক বরণ নয়। বরং, ঈমানদারদের রমাদানকে স্বাগত জানানোর মানে হল রমাদানের গুরুত্ব ও ফজিলত উপলব্দি করে আত্ম পরিশুদ্ধতার নিয়ত করা, পঙ্কিলতা থেকে মনকে দূরে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর হওয়া, তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হয়ে পরওয়ারদেগারের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কার্যকর মানসিকতায় উপনীত হওয়া, সর্বোপরি আল্লাহর নির্দেশিত রমাদানের সিয়াম যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার ইরাদা করা। তবে, শুভ কাজ ও শরীয়া অনুমোদিত আনুষ্ঠানিক বরণও দোষের কিছু নয়। মধ্যপ্রাচ্যে দেখা যায় রমাদান মাস আসার আগেই রমাদানকে স্বাগত জানিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের মূল্য ছাড়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। রমাদান আসার আগে রমাদানকে স্বাগত জানিয়ে রমাদানের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সেমিনার করা যায়। দিনে হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ রাখার জন্য জনসচেতনতামূলক কাজ করা যায়।

এসো মুমিন মুসলমান! আমরা ইফতার, সেহেরি, তারাবি, কিয়ামুল লাইল, ইতেকাফ, যাকাত, সাদাকাতুল ফিতর ও ঈদকে যথাযোগ্য পালন ও উদযাপন করার মাধ্যমে রমাদানকে বলি - আহলান সাহলান।

লেখক: আবছার তারেক
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
১০ম ব্যাচ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!