ফ্যাসিস্টদের দোসররা গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত: খালেদা জিয়া

বেগম খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া   © টিডিসি ফটো

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের দোসররা ও বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর পর আপনার আবারও ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শাসকদের নির্মম দমন-নীপড়নের কারণে গণহত্যায় শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা ও আহতদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এসময় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিহত সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন খালেদা জিয়্। 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরো উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। এসময়  শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি "ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়" মনে করিয়ে দেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যারা গণতন্ত্রের জন্য ও আমার মুক্তির জন্য আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন,  মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনও আদালতের বারান্দায় ন্যায় বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।

তিনি বলেন, দেশ সংকটময় সময় অতিক্রম করছে।  আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্টরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা। 

খালেদা জিয়া আরও বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে।

নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহতভাবে গড়ে তুলি।

দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আসুন প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নয়, পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।

দীর্ঘ ৭ বছর পর ডাকা বিএনপির বর্ধিত সভা বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রথম   পর্ব শেষ হয়ে এখন সভার দ্বিতীয় পর্ব চলছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সভায় সারাদেশ থেকে সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমাদের শেষ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই প্রমাণ্যচিত্র তৈরি করেছে ‘বর্ধিত সভা বাস্তবায়ন মিডিয়া উপ-কমিটি’। এছাড়া বর্ধিত সভা উপলক্ষ্যে ‘আস্থা’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করে বিএনপি।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত এই বর্ধিত সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সব কর্মকর্তা ও সদস্যরা অংশ নিযেছেন। দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরাও অংশ নেন। সভায় মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা উপস্থিত রয়েছেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ‘লা মেরিডিয়ানে’ বিএনপির বর্ধিত কমিটির সভা হয়। যেখানে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এর ৪ দিন পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায় আওয়ামী লীগ সরকার।


সর্বশেষ সংবাদ