মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৪ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৪ PM
জাতি হিসেবে বাঙালির গৌরব ও আত্মত্যাগের মাস হিসেবে পরিচিত একুশে ফেব্রুয়ারি আবারও হাজির হলো। প্রতিবছরের মতো এবারও পুরো বিশ্বকে সাথে নিয়ে যথাযথ মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হবে এদিন। এ উপলক্ষে শিল্পীর রং-তুলি আর আলপনায় সেজেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহিদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নতুন সাজসজ্জায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে আত্মত্যাগের শহিদ মিনার। আলপনার হরেক রকমের রঙে সেজেছে মিনারের মূল বেদিসহ আশেপাশের সকল রাস্তা। তবে এবার মিনারের পাশের দেওয়ালগুলোতে ভাষা কেন্দ্রীক নতুন কোন গ্রাফিতি আঁকা হয়নি। এর বিপরীতে দেয়ালগুলোর উপরে শোভা পেয়েছে ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক ও মনীষীর উক্তি। নতুন ফুল গাছ লাগানো হয়েছে ঢাবির কলা অনুষদের দেয়ালের সামনে। দৃষ্টিনন্দন এসব ফেস্টুন-আলপনার সাথে ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা।
আগ থেকেই শহিদ মিনারের মূল বেদির চারপাশ নিরাপত্তার বেষ্টনি দিয়ে ঘিরে রেখেছে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে প্রবেশাধিকারেও। তাই দূর থেকেই শহিদ মিনারের সাথে ফ্রেমবন্ধি হতে হচ্ছে দূর থেকে আসা দর্শনার্থীদের।
কথা হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্নের দায়িত্বে থাকা সিটি কর্পরেশনের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের সাথে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, আমি পরিচ্ছন্নের বিষয়টা দেখছি। এখনও কাজ বাকি আছে। রাত বারোটার আগ পর্যন্ত ছোটখাটো কাজ গুলো চলতে থাকবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে শহীদ মিনারের চারপাশের এলাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, বিকাল ৫টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। রাত ৮টার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীদের রাত ৮টার মধ্যে আবাসস্থলে ফেরার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো তারা। বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে নিরাপত্তা পাশ ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন।
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে অমর একুশে পালন উপলক্ষে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, প্রতিবছরের মতোই আমরা সুষ্ঠভাবে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এর সংশ্লিষ্ট সংগঠন এবং আমাদের দিক থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো আশঙ্কা করছি না। আমরা মনে করছি এটি সুশৃঙ্খনভাবেই হবে। সবাই আমাদের ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সুন্দরভাবে পুষ্পস্তবক অর্পন করবে।
তিনি আরও জানান, ছাত্রলীগ একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। তাদের নিজস্ব ব্যানার ব্যবহার করে এখানে আসার কোন সুযোগ নেই। এবং সেই ধরণের কোন অপচেষ্টা যদি তারা চালায় তাহলে আমরা ধারণা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটার যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। এবং সেই ভাবেই সরকারেরও নির্দেশনা আছে আমরা সেই ভাবেই প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ একটা রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নয়তো আত্মগোপনে আছেন। জনসম্মুখে এসে রাজনৈতিক ব্যানারে কর্মকান্ড পরিচালনার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। ফলে তারা যদি আসে এবং তাদেরকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি জনিত ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে সেটাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবাল করবেন।