সরকারের উদ্দেশে যা বললেন লাঞ্ছিত সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা

আবদুল হাই কানু
আবদুল হাই কানু  © সংগৃহীত

‘আমাকে বিবস্ত্র করার জন্য লুঙ্গি ধরে টানাটানি করেছে। আমার সঙ্গে এমন আচরণ করে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধার মানহানি ও অপমান করা হয়েছে। আমি সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ আক্ষেপের সুরে এমনটা বললেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হেনস্তার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু।

গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে ফেনী শহরে ছেলের বাসায় আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগী এই মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আবদুল হাই কানু বলেন, তাদের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের দ্বন্দ্বের কারণ দেখছি না। আমার দোষ একটাই, তা হলো আমি মুক্তিযোদ্ধা। তাদের কোনো নির্দেশ আছে কি না জানি না। আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করি।

তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থবোধ করলে স্থানীয় বাজারে গিয়ে পলাশের ফার্মাসিতে বসি। সেখানে ডায়াবেটিস-প্রেশার পরীক্ষা করার সময় আকস্মিক আবুল হাশেম মজুমদার এসে মোটরসাইকেল থেকে নেমে আমার গলা ধরে টান দেয়। পরে সে বলে, ‘(অপ্রকাশিত বাক্য)... তোরে আজকে ছাড়া যাবে না, জীবনের শিক্ষা দিমু। তোরে আর তোর ছেলেরে টুকরো টুকরো করে ছিটিয়ে দিমু, যাতে কেউ খুঁজে না পায়। তুই এই এলাকা থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা।’ এভাবে টেনে ধরে আমাকে কুলিয়ারা স্কুল মাঠের দিকে নিয়ে যায়। 

তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমি তাকে বলেছি, আমি কেন চলে যাব? গত ৯ বছর তো এলাকায় ছিলাম না। তারা আমাকে ৫টার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে। তখন হাশেম বলেছে, ‘স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দে, নাহয় তোরে জবাই করে টুকরো টুকরো করব।’ ছুরি তো বসিয়েই দিয়েছিল আমার শরীরে। ওই ভিডিও এখনো পাননি, হয় তো কোনো দিন ছাড়বে, পাবেন। সাংবাদিকদের কাছে এ সত্য উদঘাটনের দাবি জানাব।’

আবদুল হাই কানু বলেন, ‘আমি চোরের বিচার চাই, কিন্তু ভালো লোক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটার বিরোধিতা করি। এই সরকারের সময়ে যদি ভালো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তারা কোথায় দাঁড়াবে? আমিই বা কোথায় দাঁড়াব?’

ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মতো এ বয়সের লোককে কেন মাঠে এমন করা হলো? কেন পায়ের নিচে দিল? কেন লাথি-ঘুষি দেওয়া হলো? কেন পানিতে চুবাতে বলা হলো? কেন জুতার মালা বানিয়ে গলায় দিল? কেন এভাবে অপমান করা হলো? আমি জানি না।’

ঘটনার সময় হাশেমের সঙ্গে ওহিদুর রহমান মজুমদার, রাসেল, নয়ন মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন ছিলেন বলে জানান তিনি।

এদিকে ঘটনার দিন বিকেলে নিরাপত্তার কারণে বাড়ি ছেড়ে ফেনীতে চলে যান আবদুল হাই কানু। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সেখানেই ছেলের বাসায় বিশ্রামে আছেন। পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ফেরার কথা জানিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে দেশজুড়ে এ নিয়ে তীব্র ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের সমর্থক প্রবাসী আবুল হাশেমের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল এ ঘটনা ঘটায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা এলাকার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তিনি বিগত আট বছর এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence