কমেছে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা, উদ্বেগে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

 কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট
কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট  © সংগৃহীত

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক টানাপোড়েনের ফলে চলতি বছরের জুলাই থেকে কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পর্যটকের অভাবে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও খুচরা দোকান ব্যবসায়ীদের।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, 'বাংলাদেশি নাগরিকেরা ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়মিত যাতায়াত করেন।কলকাতার অর্থনীতির একটা বড় অংশ, বিশেষ করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং হাসপাতালগুলো বাংলাদেশের পর্যটকদের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে এসব ব্যবসা ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মারকুইস স্ট্রিট ও সাডার স্ট্রিট এলাকায় হোটেলের বুকিং ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, এবং নিউমার্কেট এলাকার দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোতে বিক্রি কমে গেছে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ।

ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অঞ্জনি ধানুকা বলেন, ‘বর্তমান অস্থিরতার কারণে পর্যটন, উভয় প্রচলিত ও স্থানীয় পর্যটন, এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত বাংলাদেশির জন্য ভারত একটি সহজলভ্য বিদেশি গন্তব্য, যা চিকিৎসা এবং ধর্মীয় পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে ভাষা, খাবার ও খরচের কোনো বড় বাধা নেই। পরিস্থিতি না বদলালে সবাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

কলকাতা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনতোষ সরকার বলেন, 'জুলাই থেকে মারকুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র চার বা পাঁচটি কক্ষ বাংলাদেশি অতিথিদের দখলে আছে। অথচ বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনার পতনের আগে সেখানে আমার হোটেলের ২৬-২৮টি কক্ষেই বাংলাদেশি অতিথিরা ছিলেন।'

তিনি আরও বলেন, 'ছোট কয়েকটি হোটেল সাময়িকভাবে বন্ধও হয়ে গেছে, কারণ তারা মাত্র এক বা দুজনের বেশি অতিথি পাচ্ছিল না। ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় লকডাউনের কারণে আমরা যে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম, এখন সেরকম পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে।'

নিউমার্কেটের চকো নাট নামের একটি দোকান কর্তৃপক্ষ জানায়, 'তাদের বিক্রি দিনে সাড়ে ৩ লাখ রুপি কমে ৩৫ হাজারে নেমেছে। শুধু মেডিকেল ভিসায় আসা কয়েকজন গ্রাহকই এখন আমাদের দোকানে আসেন। কিন্তু ভ্রমণকারী বা যারা নিউমার্কেট থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন, তাদের আগমন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।’

একই চিত্র বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে, কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্তে। এই অচলাবস্থা কবে কাটবে তার জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন গুনছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমের ছন্দপতন ঘটে। সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম শুরু হলেও ভারত জানিয়ে দিয়েছে যে, চিকিৎসার জন্য ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা তারা ইস্যু করবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশিদের কলকাতা ভ্রমণ ব্যাপক হারে কমে যায়। আর তাতেই ধস নামে মিনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে।


সর্বশেষ সংবাদ