বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ AM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ AM
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জন করা এবং জাতিসমূহের কর্মকাণ্ডকে সমন্বয় করার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করাসহ একাধিক উদ্দেশ্য নিয়ে জন্ম হয় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রপুঞ্জ নামে সংস্থাটি পরিচিত।
জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৫ সালে এবং বাংলাদেশ ১৩৬তম সদস্য দেশ হিসেবে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্ত হয়। সে হিসেবে এবছর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী। বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের দীর্ঘ এ পথচলার সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শরণার্থীদের সহায়তা দানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল জাতিসংঘ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তাকে তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট ‘মানব ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীদের ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী, ইউনিসেফ প্রভৃতি জাতিসংঘ-সংস্থা তাদের জন্য সহায়তায় কাজ শুরু করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। যোগদানের এক সপ্তাহ পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান বাংলায় ভাষণ দেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ দু’বার নির্বাচিত হয়, প্রথমবার ১৯৭৯-১৯৮০ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০০০-২০০১ সালে। এছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষস্থানে থাকা দেশসমূহের অন্যতম বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ৭২৪৬ জন কমান্ডো বাহিনীতে যুক্ত হয়েছিল। যা ছিল জাতিসংঘকে ব্যক্তি সরবরাহের দিক থেকে তৃতীয়।
বিশ শতকে জাতিসংঘের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রধান সম্মেলনের সবগুলোতে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সবার জন্য শিক্ষা সম্মেলন (জোমটেইন, ১৯৯০), শিশু বিষয়ক বিশ্ব শীর্ষ সম্মেলন (নিউইয়ক,র্ ১৯৯০), ধরিত্রী সম্মেলন (রিওডি জেনিরো, ১৯৯২), পুষ্টি সম্মেলন (রোম, ১৯৯২), বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন (ভিয়েনা, ১৯৯৩), আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলন (কায়রো, ১৯৯৪), বিশ্ব সামাজিক উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলন (কোপেনহেগেন, ১৯৯৫), চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন (বেইজিং, ১৯৯৫), দ্বিতীয় বিশ্ব আবাসন সম্মেলন (ইস্তাম্বুল, ১৯৯৬) এবং বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন (রোম, ১৯৯৬)।
জাতিসংঘের রয়েছে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। এসব অঙ্গসংগঠনের কাজের ক্ষেত্রগুলো হল- অর্থনীতি, বিদ্যুৎ শক্তি, পরিবেশ, জরুরী সহায়তা, শিক্ষা, দুর্যোগ, খাদ্য, জেন্ডার ইস্যু, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, অভিগমন, পুষ্টি, অংশীদারিত্ব, জনসংখ্যা, দারিদ্র, শরণার্থী, শহরায়ন, কর্মসংস্থান এবং জীবনধারণ।
এসব অঙ্গসংগঠনেরও সদস্য হয় বাংলাদেশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তাকারী কাঠামোর (আনডাফ), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি), জাতিসংঘ শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি), জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (এইএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা (আইএমএফ), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) অন্যতম।
আরও পড়ুন: প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন আজ
জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইউনেস্কো) উদ্যোগে বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এবং কিছু ঐতিহাসিক স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পনেরো শতকে নির্মিত পাহাড়পুর বিহার এবং বাগেরহাটের বিভিন্ন মসজিদের সংরক্ষণের লক্ষ্যে ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে এক আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। এছাড়াও ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ''২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'' এর স্বীকৃতি দেয়। যার ফলে ২০০০ সালের প্রথমবারের মতো বিশ্বের ১৮৮ টি দেশ ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আজ (২৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসাবে আসছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ; সড়ক পরিবহণ ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসাবে ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদল আসছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতও অল্পসংখ্যক প্রতিনিধিদল নিয়ে কোনো সরকারপ্রধান জাতিসংঘে আসেননি।
জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে সাইড লাইনে বিশ্বের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে রয়েছেন বাহরাইনের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী সালমান বিন হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা।