এসএসসি পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বহালসহ ৮ দাবি ওলামা মাশায়েখের

এসএসসি পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বহালসহ ৮ দাবি ওলামা মাশায়েখের
এসএসসি পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বহালসহ ৮ দাবি ওলামা মাশায়েখের  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুসরণ করে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিবে; তাদের বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা বহাল রাখা, ‘বিতর্কিত’ জাতীয় পাঠ্যক্রম বাতিল, পাঠ্যপুস্তক থেকে অনৈসলামিক শব্দ ও অশ্লীল চিত্র মুক্ত রাখা এবং মাদরাসা শিক্ষা কারিকুলামে সংশ্লিষ্ট আলেম ও শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। 

বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে “বিতর্কিত জাতীয় পাঠ্যক্রম; দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকদের করণীয়” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি জানান সংগঠনটি। এসময় সংগঠনটি আট দফা দাবি এবং তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজ করছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ নৈরাজ্য। যে শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষিত, মার্জিত, দেশপ্রেমিক ও ধার্মিক একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে গড়ে ওঠার কথা, সে শিক্ষাব্যবস্থায় ভাষাগত, নীতিগত ও চরিত্রগত এমন সামগ্রিক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, যা দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও মননের সাথে সাংঘর্ষিক এক শিক্ষাব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে।

বক্তারা বলেন, শিক্ষা একজন নাগরিককে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পেশাগত জীবনে সৎ, দায়িত্ববান, ধর্মপরায়ণ ও দেশপ্রেমী হতে সাহায্য করে। আর এটা নিশ্চিত করা হয় দেশের জনগণের বোধ-বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে সংগতি রেখেই। কিন্তু বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় তা উপেক্ষিত থেকে গেছে। বরং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা হতে ধর্ম ও নৈতিকতাকে সরিয়ে ফেলে, মৌলিক দর্শন হিসেবে ব্রাহ্মণ্যবাদ, সেক্যুলারিজমকে ও ধর্মহীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজীর উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক মুফতী রেজাউল করীম আবরারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসাইন। এ সময় বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, সহ-সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতী হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শামসুদ্দোহা আশরাফী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মাওলানা মুফতি ইসমাঈল সিরাজী আল মাদানী, হাফেজ মাওলানা কামাল উদ্দিন সিরাজ, মুফতি রফিকুন্নাবী হক্কানী, মুফতী আব্দুল আজিজ কাসেমী, মাওলানা শাহজাহান আল হাবিবী, মাওলানা মঈনুদ্দীন খান তানভীর, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, মুফতী জোবায়ের আব্দুল্লাহ কাসেমী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান আশরাফী।

দাবিগুলো হলো

১. বিতর্কিত জাতীয় পাঠ্যক্রম বাতিল করা। ২. বিদেশের অন্ধ অনুসরণ নয়; বরং যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ ওলামায়ে কিরামের সমন্বয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করা। ৩. পাঠ্যপুস্তক হতে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদাবিরোধী বিষয়সমূহ বাদ দেয়া। স্কুল ও মাদরাসার সকল পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতি, অনৈসলামিক শব্দ এবং অশ্লীল চিত্র মুক্ত রাখা। ৪. মাদরাসা শিক্ষা কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা ও আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন করা। ৫. দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্ব-স্ব ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ৬. প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা। ৭. সমাজে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা। ৮. “কৃষি শিক্ষা” ও “গার্হস্থ্য বিজ্ঞান” শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক।

তিনটি কর্মসূচি হলো

১. জুলাই মাসব্যাপী জেলায়-জেলায় বিতর্কিত পাঠ্যক্রম ইস্যুতে ওলামা, শিক্ষাবিদ ও সূধী সম্মেলন। ২. আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর থানায় থানায় ওলামা ও সূধী সম্মেলন। ৩. সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বিতর্কিত পাঠ্যক্রম বাতিলের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় সম্মেলন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সেই শিক্ষার ভীত যদি দুর্বল, জাতিসত্তা বিরোধী ও নৈতিকতাহীন নিরেট বস্তুবাদী হয়। তাহলে জাতি ভুল পথে পরিচালিত হবে। আদর্শ শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে যেভাবে দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস, ধর্মীয় আদর্শের প্রতি লক্ষ্য রেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার দরকার ছিল, দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার অর্ধশতক পরও শিক্ষা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সুচিন্তিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কখনোই সেভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। শিক্ষাখাতে বার্ষিক বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। শিক্ষকদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত। অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা কতটা নাজুক তা শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর দিকে তাকালে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

তাছাড়া বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা বিকশিত হবার পরিবর্তে অনেকেই নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা। এমতাবস্থায় নীতি-নৈতিকতার প্রধান চালিকাশক্তি ধর্মীয় শিক্ষাকে পরিকল্পিতভাবে সংকুচিত করাসহ নানারূপ অসঙ্গতিপূর্ণ বিতর্কিত কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে, যা ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত ছিলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence