বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে-কলেজে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়াতে দুবাইয়ে শিক্ষামেলা

গত বছর অনুষ্ঠিত শিক্ষা ফোরামে উপস্থিত কয়েকজন অনাবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
গত বছর অনুষ্ঠিত শিক্ষা ফোরামে উপস্থিত কয়েকজন অনাবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।  © সংগৃহীত

দুবাইয়ে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম বা শিক্ষামেলা। আমিরাতভিত্তিক ২৫ হাজার অনাবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং ১০ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে দেশের ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১৫টি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে উদ্বুদ্ধ করতে এবং দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষার বিষয়টি তুলে ধরতে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের ক্রাউন প্লাজায় আগামী ১৪ অক্টোবর (শনিবার) এ প্রদর্শনী শুরু হয়ে পরদিন ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। 

উদ্যোক্তারা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬৩৯টি পাবলিক, ৫৮০টি প্রাইভেট স্কুলে মোট ২৫,০০০ অনাবাসিক বাংলাদেশী (এনআরবি) শিক্ষার্থী এবং ১০ লক্ষেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এবারের আয়োজনে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফোরামটি আয়োজনে সহযোগিতা করছে অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিস অব বাংলাদেশ (এপিইউবি)।
 
বাংলাদেশ এডুকেশন ফোরাম ২০২৩ এর আয়োজক প্যান এশিয়ান মিডিয়া অ্যান্ড অর্গানাইজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, অপেক্ষাকৃত কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ উদীয়মান দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।  দেশে ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১৫টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে যেখানে ৪৬ লাখ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ১৪ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ীমূল্যে উচ্চশিক্ষা দিচ্ছে।
 
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান থেকে চার বছর মেয়াদী অনার্স (সম্মান) ডিগ্রী পেতে একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সেমিস্টার প্রতি সর্বনিম্ন ৫০০ মার্কিন ডলার খরচ হবে। অর্থাৎ চার বছরের কোর্সে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হবে। আবার ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলারে পাঁচ বছর মেয়াদী এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করা যাবে, যা বর্তমান আন্তর্জাতিক মানের এমবিবিএস ডিগ্রীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ।  

এপিইউবি’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সামাজিক-আর্থিক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা খাত ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা খাতের একটি যেখানে ৩০ লাখের বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে এবং ২ হাজার ৫০০টির বেশি কলেজ এবং বিশেষায়িত কলেজে ৪৬ লাখ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষা ফোরাম আমাদেরকে জিসিসি দেশগুলোর (সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমান) ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। আমরা তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী উচ্চশিক্ষার শিক্ষা সেবা দিতে স্বাগত জানাতে চাই।
 
সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষা পরামর্শদাতাদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং মেডিকেল কলেজগুলোর কাছাকাছি নিয়ে আসার লক্ষ্যে আয়োজিত হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। সংগঠকরা বাংলাদেশ শিক্ষা ফোরামের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জিসিসিতে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার প্রচারের জন্য বড় আকারে এ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। 

আরও পড়ুন: চলতি বছরই একক ভর্তি পরীক্ষা, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ শিগগিরই

এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিস অব এশিয়া অ্যান্ড দ্যা প্যাসিফিকের (এইউএপি) প্রেসিডেন্ট এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, বাংলাদেশ উচ্চমানের এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শিক্ষাসেবা প্রদান করায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন অনুযায়ী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সর্বনিম্ন টিউশন ফিতে ভাল মানের শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয়।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের উচ্চ কর্মসংস্থানের হার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের নেতৃত্ব, উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তিগত স্টার্ট-আপে শিক্ষার্থীদের সাফল্য বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্যকে নির্দেশ করে। ভাল একাডেমিক এবং গবেষণা সুবিধার পাশাপাশি, সবচেয়ে কম খরচে ভাল বাসস্থান, ভাল খাবার এবং ভাল সামাজিক সুবিধা পেলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।”

উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারতে পাড়ি জমানোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার কারণে এখন আফ্রিকা, মধ্যপূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার বেশকয়েকটি দেশের শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ। 

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (এআইইউবি) চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আবেদিন বলেন, আমরা জিসিসি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য স্বাগত জানাতে চাই। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ শিক্ষা ফোরামে নথিভুক্ত জিসিসি শিক্ষার্থীদের জন্য একগুচ্ছ প্রণোদনা এবং বৃত্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
 
এক গবেষণায় দেখা গেছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ডেন্টাল এবং সাধারণ কলেজগুলি ৪৬ লাখ ছাত্রছাত্রী শিক্ষা সেবা প্রদান করতে পারবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বাজারের আকার ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কারণে এটি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। 

শিক্ষা ফোরামটির যৌথ উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে দুবাই ভিত্তিক মার্কেটিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক রিলেশনস ও মিডিয়া সংস্থাগুলোর জোট প্যান এশিয়ান গ্রুপ এবং ঢাকা ভিত্তিক ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং পরামর্শ সংস্থা স্পাইরাল ওয়ার্ল্ড। এছাড়া অনুষ্ঠানে টাইটেল স্পন্সর হিসেবে রয়েছে এআইইউবি। 


সর্বশেষ সংবাদ