প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর থেকে কী আশা করছে বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মদি
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মদি  © সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে জি-২০ সামিটে অংশ নিতে আজ শুক্রবার (৯ সেপ্টম্বর) দিল্লি যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে এটি তার শেষ ভারত সফর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে এই সফরটি করছেন, যখন আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার কিছুটা আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে।

ফলে জি-২০ জোটের সদস্য না হলেও পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোর এ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ কোন রাজনৈতিক অর্জন ঘরে তুলতে পারবে কী-না তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেকদিন ধরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর দৃশ্যমান চাপ প্রয়োগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেরই ধারণা, নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বিপরীতে ভারতকে সক্রিয় করতে সক্ষম হবেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, জি-২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশের নেতারা আসবেন, যেখানে ‘বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভুল বুঝাবুঝি থাকলে সেটিরও অবসান হবে-এমন প্রত্যাশাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না’।

দলটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ বিবিসিকে বলেছেন, “আজকে যার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি, কে জানে কাল হয়তো তার অবসানও হতে পারে।”

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলছেন, দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুধু বাংলাদেশকেই সামিটে আমন্ত্রণ করা হয়েছে যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই সুযোগে বাংলাদেশ সাইড লাইনে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিজেদের বিষয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে নিতে পারবে।

“অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে বিশ্ব নেতারা কী ভাবছেন, সেটি যেমন জানার সুযোগ আসবে, তেমনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলার সুযোগ হবে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়। আমার মতে বাংলাদেশের জন্য এগুলো গুরুত্বপূর্ণ,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে - যার মধ্যে একটি করা হচ্ছে রুপি ও টাকায় বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার পারস্পারিক লেনদেন সহজ করার জন্য।

পাশাপাশি কিছু জরুরি নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে ভারত যেন বাংলাদেশের জন্য একটি কোটা সংরক্ষণ করে, এমন প্রস্তাবও মি. মোদীর সাথে আলোচনায় তুলে ধরবেন শেখ হাসিনা। এটি হলে ভারত কোন পণ্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশে সেটি আমদানি বন্ধ হবে না।

এদিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এর মধ্যেই নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিসহ কিছু সিদ্ধান্তে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ক্ষমতাসীন মহলে। কিন্তু শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারতের বর্তমান সরকারকে এসব বিষয়ে এখনো সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। যদিও আগের দুটি নির্বাচন, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা ছিলো অনেকটা প্রত্যাশিত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনের পেছনে ভারত সরকারের সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখন নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকী।

এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ইস্যুটি দিল্লি সফরে আলোচনায় উঠে আসবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, জি-২০ সামিট এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’র কথাই তুলে ধরবে।

“বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। ইন্দো প্যাসিফিকে কোনো প্রক্সি ওয়ার আমরা দেখতে চাই না। পাশাপাশি ভারতের সাথে তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ যতগুলো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আছে সবই আমরা তুলে ধরবো,” বলেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে অন্যদের চাপকে 'অপ্রাসঙ্গিক' উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত ১৪ বছরে আমরা ভালো কাজ করেছি। জনগণ পছন্দ করলে ভোট দিবে। আমরা চাই ফ্রি, ফেয়ার ও স্বচ্ছ নির্বাচন। কোন ধরণের কারচুপি চাই না। আমরা সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন চাই। সেখানে কেউ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে স্বাগত জানাবো। কিন্তু কেউ যদি মাতব্বরির ভূমিকা চান, সেটা হবে না। শেখ হাসিনা কাউকে ভয় পায় না।”

“অন্যরা পছন্দ করলেন কী করলেন না, সেটা বিষয় নয়। কে কোন চাপ দিলো এটি অপ্রাসঙ্গিক। এ দেশের মানুষই এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে”।


সর্বশেষ সংবাদ