মাতুয়াইলসহ রাজধানীর ৪ স্থানে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ

মাতুয়াইলে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে
মাতুয়াইলে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে  © সংগৃহীত

সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে দলটির নেতাকর্মীরা। আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকেই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান করে তারা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি না থাকায় তাদেরকে অবস্থান করতে বাঁধা দেয় পুলিশ। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। রাজধানীর ধোলাইখাল, গাবতলী, মাতুয়াইল ও উত্তরায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমানসহ অনেক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

জানা যায়, রাজধানীর নয়াবাজার (বাবুবাজার ব্রিজের প্রবেশ মুখ) মোড়ে বিএনপি অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও এর বদলে ধোলাইখাল মোড়ে অবস্থান নেয় দলটি। এই মোড়ে বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। জবাবে ইট-পাটকেল ছোড়েন অবস্থানকারীরা। এতে পিছু হটেছে পুলিশ। অন্যদিকে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

ঘটনাস্থলে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামসহ অন্য নেতারা ছিলেন। তাঁরা নেতা-কর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তা সম্ভব হয়নি।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। পুলিশ তাঁকে একটি দোকানের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়া হয়। আব্দুস সালামকেও পুলিশ এখান থেকে আটক করে নিয়ে যায়। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে যাওয়ার আগে তাঁকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে পুলিশ। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। সে অবস্থায়ও তাঁকে লাঠিপেটা করা হয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে তাঁর শরীর থেকে রক্ত ঝড়ছিল। এদিকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধোলাইখালে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর পৌনে এক ঘণ্টা পর লাঠিসোঁটা হাতে সেখানে এসে মিছিল করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এসময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ছাত্রদলের ছয় নেতাকর্মী। আহতরা হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন রুবেল (৩০), কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সভাপতি জাকিরুল আলম (৩০), কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নাট্য বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক (৩০), কবি নজরুল ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান আবির (২৯), পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুল আজিজ (২৮) এবং যুবদল কর্মী ওবায়দুল (৪০)।

গাবতলী
এদিকে  আমান উল্লাহ আমানকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। শনিবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গাবতলী থেকে তাকে পুলিশের জিপে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও পুলিশ সেখানে থাকা বিএনপির অন্তত ২০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলে জানিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, সকাল থেকে গাবতলীতে পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি চলছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। এ সময় দুই দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী ধাক্কাধাক্কি হয়। এর একপর্যায়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান জ্ঞান হারিয় রাস্তায় পড়ে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এছাড়াও বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পরে আবারও দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের একটি দল বেড়িবাঁধের দিক থেকে মিছিল নিয়ে এলে সরকারি দলের কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। এ সময় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।

উত্তরা
ঢাকার উত্তরায়ও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা ১১টার কিছু পরে বিএনপির নেতাকর্মী উত্তরার বিএনএস সেন্টারের কাছে জড়ো হন। তাঁদের পুলিশ সরে যাওয়ার জন্য বলে। কিছুক্ষণ পরে বিএনপির আরও নেতাকর্মী সেখানে যান।

একপর্যায়ে তাঁরা রাস্তার মাঝখানে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তখন তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। তারপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং ধাওয়া দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা পিছু হটে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তাঁরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। পরে পুলিশ বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান করে।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আটজনকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের একজন উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদ আহমেদ। লাঠির আঘাতে তার মাথা ফেটে গেছে। বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। 

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসাধীন আছেন উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক হাবিবুল্লাহ, দক্ষিণখান থানা শ্রমিক দলের সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম, রামপুরা থানার নিলুফার ইয়াসমিন, উত্তরখান মধ্যপাড়া ইউনিটের সহসভাপতি আবেদ আলী ও উত্তরার একটি হোটেলের কর্মী মেহেদী।

মাতুয়াইল
ঢাকার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ীতে অবস্থান করার কথা থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাতুয়াইলে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের সঙ্গে।

শনিবার (জুলাই) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে পুলিশ। বিএনপি নেতাকর্মীরাও ইট-পাটকেল ছুড়ছেন। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়কের দুপাশেই যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে ফতুল্লা থানার শফিউল ইসলাম নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। তাকে উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার খবরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মিছিল করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন তারা।

তবে থেমে থেমে মাতুয়াইলে বিএনপি-পুলিশ, আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ