শওকতকে বরখাস্তের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে: সিএমপি

শওকত হোসেন
শওকত হোসেন  © ফাইল ছবি

অসহায়দের সহযোগিতা করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কনস্টেবল শওকত হোসেন। পেয়েছিলেন মানবিক পুলিশের খ্যাতিও। তবে সেই শওকত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ওইদিন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ কমিশনার শাকিলা সোলতানা স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।

শওকতের চাকরিচ্যুতের এ খবর ‘বিভ্রান্তি’ ছড়িয়েছে অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এর সাবেক কনস্টেবল মো. শওকত হোসেনকে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদ থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। 

‘‘প্রচার মাধ্যমে তার অতীতের কার্যক্রমের বিষয়ে আলোকপাত করা হলেও কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি গত ০৯/১১/২০২১ খ্রিঃ থেকে ২০/০১/২০২২ খ্রিঃ পর্যন্ত কর্মস্থলে (বন্দর বিভাগ, সিএমপি) ইচ্ছাকৃতভাবে গরহাজির থাকেন। কোন যৌক্তিক কারণ এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে গরহাজির থাকা যেকোন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য গর্হিত অপরাধ, যা চূড়ান্ত অসদাচরণ হিসেবে গণ্য।’’

চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আরো জানায়, শওকত হোসেনকে গত ০৮/০২/২০২২ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর আদেশে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিস থেকে গত ১৩/০৩/২০২২ খ্রিঃ তারিখে কুমিল্লা জেলায় বদলি করা হলে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেননি এবং রহস্যজনকভাবে গরহাজির থাকেন। তার গরহাজির সম্পর্কে কোন তথ্য কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেননি।

আরও পড়ুন: চাকরিচ্যুত হলেন মানবিক পুলিশ খ্যাত শওকত হোসেন

পরবর্তীতে ৩৫৩ দিন পরে কুমিল্লা জেলায় যোগদান করেন। বস্তুত তিনি ৪২৪ দিন কর্মস্থল থেকে গরহাজির থাকেন। কুমিল্লা জেলায় গরহাজির থাকায় তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা জেলায় গরহাজির হওয়ার প্রতিবেদনে অসুস্থতাজনিত কারণে হাজির না হওয়ার কথা বললেও কোনো চিকিৎসা সনদ উপস্থাপন করতে পারেননি। তবে তিনি চাকরিতে গরহাজির থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবসময়ই হাজির ছিলেন এবং তাকে কোন সময়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ মনে হয়নি।

চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আরো জানায়, এক বছরের বেশি সময় কর্মস্থলে গরহাজির থাকা কেউ পুলিশের মতো একটি শৃঙ্খলা বাহিনীতে সংযুক্ত থাকতে পারেননা। এহেন অপেশাদার, শৃঙ্খলা বহির্ভূত কার্যক্রমের পরেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তিনি নিজেই অভিযোগের ব্যপারে আত্মসমর্থনমূলক বক্তব্যে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে অভিহিত করেছেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং মানবিক কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এর আগে শওকতের চাকরিচ্যুতের আদেশে বলা হয়েছে, ‘৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়া মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়Ñ এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’

শওকত হোসেনের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায়। তিনি ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন। 


সর্বশেষ সংবাদ