আড়াইশো-তিনশো টাকায় ১ কেজি ফল মধ্যবিত্তের জন্য নয়

ফলের বাজার
ফলের বাজার  © টিডিসি ফটো

ডলার সংটের কারণে এলসি খুলতে না পারা, বৈশ্বিক মন্দাভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানান কারণে দেশের বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়েছে বিদেশি ফলের দাম। দেশীয় ফলেও নেই স্বস্তি। মোটকথা মধ্যবিত্ত এবং গরিবের যেন ফল ধরতেই মানা। অনেকেই খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, আবার অনেকেই প্র্রয়োজনে সীমিত পরিমাণে কিনে খাচ্ছেন। অপরদিকে ইফতারে ফলের চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরাও সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন পুরোপুরি। ছোট-বড় ফলের দোকানে ভালো মানের বিদেশি ফল আড়াইশো-তিনশো টাকার নিচে মিলছেনা। দামের আধিক্যতার কারণে অনেক ক্রেতাই বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা দাম শুনেই ফলের দোকানের সামনে থেকেই ঘুরে চলে যাচ্ছেন। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি ফলের মধ্যে সারাবছরই সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে আপেল, আঙ্গুর, কমলা, মাল্টা, ডালিম ও নাশপাতির। বিভিন্ন কারণে আমদানি কমে যাওয়ার জেরে এসব বিদেশি ফলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া ডলার সঙ্কটের কারণে বিদেশি প্রসাধনী, ফুল ও ফল আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে গিয়ে খুচরা বাজারেও পড়েছে বড় ধরণের প্রভাব। সাথে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, কন্টেনারের বাড়তি ভাড়া, পণ্য খালাসে অতিরিক্ত লেবার খরচসহ আনুষঙ্গিক বাড়ন্ত ব্যয়ও ফলের দাম বাড়ার বড় নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমভেদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আপেল, মাল্টা সহ অন্যান্য বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। বিশেষ করে আপেল আমদানি হয় চীন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। মাল্টা আসে মিশর ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এছাড়া আঙ্গুর. ডালিম আসে চীন, মিশর ও ভারত থেকে। এসবের পাশাপাশি বেবি ম্যান্ডারিন, পাম, নেকটারিন, কিউই, সুইট মিলন, রাম্বুঠান, এভোকাডোর মত কিছু অপরিচিত ফলও আমদানি করা হয় যা সাধারণত অভিজাত এলাকার ফলের দোকান ছাড়া অন্য কোথাও চোখে পড়েনা। 

আজ সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, ফার্মগেট এলাকার খুচরা ফলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে দোকানগুলোতে মাঝারি ও বড় মানের সাউথ আফ্রিকান আপেল ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের চীনা আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৭০ টাকায়। একই রকম দামে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় কমলাও। এছাড়াও ভারতীয় সাদা আঙুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়। ভারতীয় কালো আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। এছাড়াও বড় বেদানা ও ডালিম মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪২০-৫৫০ টাকায়।

নিউমার্কেটের ইউসুফ ফলভান্ডারের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, আপেল, কমলা, আঙুরের দামটা বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতার পরিমাণ কম। সেজন্য এসব ফল কমিয়ে তরমুজ এনেছি। অন্যান্য বছর রোজায় যেমন বিক্রি হতো এবার তেমনটা নেই। আমাদের ও  কিছু করার নেই। পাইকারি দামেই বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।

বিদেশি ফলের এমন দাপুটে বাজারে পিছিয়ে নেই দেশীয় ফলের দামও। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির কল্যাণে সারাদেশে ফলের উৎপাদন ভালো হলেও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে দেশী ফলের বাজারও বর্তমানে অনেক চড়া। তবুও এমনসময়ে বিদেশি ফলের বাড়তি বাজারে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বিভিন্ন দেশীয় ফল। যারমধ্যে রয়েছে বরই, পেয়ারা, কলা, আনারস, তরমুজ, পেঁপে, বাঙ্গি, সফেদা ও বেল। 

দেশীয় ফল বিক্রেতারা বলছেন, আপেল, কমলা ও মাল্টার বেশি দাম শুনে সহনীয় দামে দেশীয় ফলেই ঝুঁকেছেন ক্রেতারা। ইফতারের আগে পেয়ারা, কলা, বরই বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে বরইয়ের মৌসুম প্রায় শেষ হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক বেশি। একইসাথে বাজারে প্রচুর আনারস ও তরমুজ আসায় দামটা খুবই স্বাভাবিক রয়েছে। শুরুতে তরমুজের দাম কিছুটা বেশি থাকলেও এখন সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। 

সাধারণ ক্রেতারাও বলছেন, বিদেশি ফলগুলো এখন আর তাঁদের নাগালের মধ্যে নেই। আপেল কমলার অতিরিক্ত দামের কারণে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা অনেকেই ফল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে কিনলেও কমিয়েছেন তার পরিমাণ। তাই সাধ্যের মধ্যে দেশীয় ফলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। নিউমার্কেটে ফল কিনতে আসা এনামুল হাসান নামের এক ক্রেতা বলেন, আপেল কমলা কেনা বাদ দিয়েছি অনেকদিন আগেই। আড়াইশো-তিনশো টাকা দিয়ে এক কেজি ফল কিনে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষজনের পোষায় না। বাচ্চারা খেতে চাইলে দুইটা-তিনটা করে কিনে নিয়ে যাই৷ তবে এই পুরোটা সময় জুড়েই আমাদের নির্ভরতা বেড়েছে দেশীয় ফলে। মোটামুটি সবফলের মৌসুম শুরু হওয়ার পর দাম কিছুটা বেশি থাকলেও পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। যদিও রোজার কারণে কিছু দেশী ফলের বাজারও বেশ চড়া। ভালোমানের পেঁপে কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে৷ বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে কলা ও বেলও। তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশীয় ফলেই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। 

রোজিনা বেগম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ফলের বাড়তি দামের কারণে একান্ত প্রয়োজন বা অতিথি আপ্যায়ন ছাড়া ফল কেনা হয়না। বাড়িতে সদস্যদের খাওয়ার জন্য দেশী কলা, পেয়ারা, পেঁপেই যথেষ্ট। ঘুরেফিরে সারাবছরই কমবেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া শীতের সময়মতো পাহাড়ি মাল্টা, ছোট কমলা দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমদানি নির্ভরতা থেকেও আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।

দেশের বাজারে আমদানি করা ফলের দাম কেন এমন বাড়তি এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকার ফল আমদানিতে শুল্কের পরিমান ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে। যার কারণে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেশি। আগে আমাদের ২০ কেজি আপেলের প্যাকেটে সরকারকে ভ্যাট দিতে হতো ৩০০ টাকা, এখন দিতে হচ্ছে ১৪০০ টাকা। আঙুর, মাল্টাসহ অন্যান্য বিদেশি ফলেও এমন অতিরিক্ত ভ্যাট দিতে হচ্ছে। যার কারণে দাম এমন বেশি। তবে এই মুহূর্তে ফলের বাজারদর কমতির  দিকে রয়েছে। তিনদিন আগেও যে দামে বিক্রি হয়েছে আজ সেই দর কমেছে।  

বর্তমান ফলের পাইকারি বাজারদর সম্পর্কে তিনি বলেন, আপেলের ২০ কেজির বাক্স সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা চার হাজারের নিচে নেমেছে। মাল্টা এক কার্টুন দুইহাজার আটশ টাকায় বিক্রি হলেও আজ দুইহাজার তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইন্ডিয়ান সাদা আঙুর ছোট ক্যারেট দুই হাজার থেকে দুই হাজার একশ টাকা, ইন্ডিয়ান সাদা আঙ্গুর বড় ক্যারেট তিন হাজার সাতশ থেকে তিন হাজার আটশ টাকা এবং ইন্ডিয়ান কালো আঙুর ছোট ক্যারেট দুই হাজার আটশ টাকা থেকে দুই হাজার নয়শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আঙুরই প্রকারভেদে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩৬০ টাকা দামে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে খেজুরের বাজার। একইসাথে প্রতিদিনই ১০০-২০০ ট্রাক নিয়মিত বাদামতলী বাজারে ফল নিয়ে আসছে ও স্বাভাবিক সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে এখনও দেশের বাজারে ফলের ঘাটতি আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফল আমদানিতে গত বছর প্রচুর এলসি ছিল। এ বছর সেটি নেই। তবে রোজাকে কেন্দ্র করে  দেরিতে হলেও আমরা এলসি করতে পেরেছি। এখন বাজারে ফলের কোন সংকট নেই। কোন সমস্যা নেই। সাপ্লাই চেইন ঠিক আছে এবং মার্কেটে যথেষ্ট পরিমাণে ফলের সরবরাহ ও মজুদ রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence