জনসংখ্যা অনুপাতে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ বেশি ৫২টি

জনসংখ্যার তুলনায় দেশে মেডিকেল কলেজ বেশি
জনসংখ্যার তুলনায় দেশে মেডিকেল কলেজ বেশি  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। দেশে ১৭ কোটি মানুষের জন্য মেডিকেল কলেজ ১১৫টি। অথচ সমানসংখ্যক মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫টি, যুক্তরাজ্যে ৮০, ভারতে ৬৩ ও চীনে ১৭টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে।

উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন সূত্রমতে, ভারতে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৪১ কোটি। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৫৩৪টি। সে হিসেবে ১৭ কোটি জনসংখ্যার জন্য মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৩টির বেশি। অথচ একই সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজ ১১৫টি।

ঢাকায় একটি সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষা: আমরা কি ঠিক পথে আছি’ শীর্ষক অধিবেশনে অধ্যাপক মাহমুদ হাসান আরও বলেন, গর্ববোধ করতাম আমি, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখাতে চাইতাম। যদি এগুলোর মান ভালো হতো।’ নতুন মেডিকেল কলেজ না করে মানহীন কলেজ বন্ধ করার কথা বলেন তিনি।

রোববার বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন আয়োজিত ২২তম আন্তর্জাতিক কংগ্রেস ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা বক্তব্য রাখেন। রাজধানীর একটি হোটেলে গত শুক্রবার সম্মেলন শুরু হয়। এক হাজারের বেশি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এতে অংশ নেন। সম্মেলনে ৭২ জন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে মেডিকেল কলেজগুলোর দুর্বল অবকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষকস্বল্পতা প্রকট। মেডিকেল শিক্ষা চলছে পুরোনো পাঠ্যসূচিতে। দ্রুত সবকিছু ঢেলে না সাজালে ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের উন্নত বিশ্বে পেশা চর্চা করা কঠিন হবে।

অধিবেশনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দেশের স্নাতক পর্যায়ের মেডিকেল পাঠ্যসূচিতে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ কম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার আগ্রহের পেছনে কারণ, শুধু এমবিবিএসে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীও একই কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন শাহরিয়ার নবী বলেন, দেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দুর্বলতা ও বৈষম্যও আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর চেয়ে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি শিক্ষার্থীর নম্বর অন্তত ৪০ কম থাকে। এতো পার্থক্য থাকা উচিত নয়।

এ সময় ভর্তি পরীক্ষা কঠিন করার পক্ষে তিনি মত দেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, এমবিবিএস পাস করে পেশা চর্চা শুরুর আগে ‘লাইসেন্সিং’ পরীক্ষা হওয়া দরকার।

বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি এবং বিশিষ্ট স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে শুধু মেধাকে গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। সামগ্রিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকা দরকার। মেডিকেলে শিক্ষার্থীর আগ্রহ কতটুকু আছে, তার দক্ষতা-যোগ্যতা কী—এসব যাচাই করে ভর্তি করলে ভালো মানসম্পন্ন চিকিৎসক পাওয়া যাবে।

বিএমডিসির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিপিএস বা বিএমডিসি যে পরামর্শ দেয়, সেগুলো শোনা উচিত সরকারের।


সর্বশেষ সংবাদ