প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি ইসলামী আন্দোলনের

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ  © সংগৃহীত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, শিক্ষার প্রাইমারি স্তর থেকে সর্বোচ্চ মাস্টার্স পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। নাস্তিক্যবাদী সিলেবাস বাস্তবায়নে সরকার মরিয়া হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।

আজ শনিবার ৮ অক্টোবর বেলা ১০টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউ অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত 'কারিকুলাম ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১' ধর্মীয় শিক্ষার অবস্থান' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন: আগামী বছর থেকে ৩০০টি স্কুলে চালু হবে কুমন শিক্ষাক্রম: পলক

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসাইন। বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুরআন শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনসহ প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, মহিলা ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা এবিএম জাকারিয়া।

আলেচনা সভায় ২০ দফা দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হলো 

১. আগামী প্রজন্মকে সু-নাগরিক, নীতিবান ও দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ২. আলীয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখার স্বার্থে দাখিল পর্যায়ে ৫০০ নম্বরের আরবি শিক্ষা পূর্বের ন্যায় বহাল রাখতে হব। ৩.শিক্ষানীতি, শিক্ষা কারিকুলামে ইসলামী স্কলারদের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। ৪. ইসলাম শিক্ষা পাঠ্যবইয়ের নাম ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা’ কিংবা অন্য কিছু নয়, ‘ইসলাম শিক্ষা’ই রাখতে হবে। অন্যান্য ধর্মশিক্ষার ক্ষেত্রেও স্ব-স্ব ধর্মের নামে থাকতে হবে। ৫. ১০ম শ্রেণিতে, ১. বাংলা, ২. ইংরেজি, ৩. গণিত, ৪. বিজ্ঞান ও ৫. সামাজিক বিজ্ঞান-এর মতোই ইসলাম শিক্ষা তথা ধর্মশিক্ষা বিষয়টিকে সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা পাবলিক পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক রাখতে হবে। ৬. একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ‘মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, সংগীত, এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞান’ শাখায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়টিকে পূর্বের ন্যায় বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং উভয় শ্রেণিতেই বিষয়টিকে বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৭. বার্ষিক পিরিয়ড সংখ্যা বা শিখন-ঘণ্টার বিষয়ভিত্তিক বণ্টনে ধর্মশিক্ষা, প্রায় সব ক্লাসে যে অবর্ণনীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তা পরিপূর্ণরূপে দূর করতে হবে। ৮. যে সমস্ত শ্রেণিতে (৯ম থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত) চার্লস ডারউইন-এর অপ্রমাণিত বিবর্তনবাদকে পাঠ্য করা হয়েছে, সেই সমস্ত শ্রেণিও পাঠ্য থেকে এই অবৈজ্ঞানিক ও বিতর্কিত তত্ত্ব, যা ধর্মবিরোধী ও নাস্তিক্যবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা বাতিল করতে হবে। ৯. ২০২৩ থেকে নতুন কারিকুলাম-এর আলোকে নতুন পাঠ্য ও সিলেবাস বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেখানে ধর্মশিক্ষার সূতিকাগার তথা মাদরাসা শিক্ষার জন্যে আলাদা কারিকুলাম এবং আলাদা পাঠ্যপুস্তক-কমিটি করতে হবে। ১০. উচ্চশিক্ষাসহ শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ১১. বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, বুয়েটসহ সব ধরনের ভর্তি পরীক্ষায় এবং বিসিএসসহ সবধরণের চাকুরির পরীক্ষায় সাবজেক্ট ও পরিস্থিতিভেদে ধর্মশিক্ষা বিষয়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রশ্ন বা নম্বর বাধ্যতামূলক রাখতে হবে। ১২. সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য দূরীকরণে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে হবে। ১৩. বাংলাদেশে প্রদেয় শিক্ষার সাথে কর্মের সংযোগ খুবই দুর্বল। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকছে। তাই অবিলম্বে শ্রমখাত ও শিল্পনীতির সাথে সমন্বয় করে সামগ্রিক পাঠ্যসূচি ঢেলে সাজাতে হবে। ১৪. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা পশ্চিমা জ্ঞানের চর্বিত চর্বণ মাত্র। এর পরিবর্তে স্বজাতি-স্বভূমিজাত জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে হবে। ১৫. উচ্চশিক্ষার মাধ্যম ক্রমেই ইংরেজি নির্ভর হয়ে পড়ছে। অথচ সাম্প্রতিক উন্নয়নের স্বাক্ষর রাখা দেশগুলো নিজস্ব ভাষাতেই উচ্চশিক্ষা দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই কারণে উচ্চশিক্ষার ভাষা বাংলা করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক রাজনীতি ও ক্ষমতাসীনদের ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বার্থান্বেষী হানাহানীপূর্ণ রাজনীতি বন্ধ করতে হবে; গঠনমূলক রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ১৭. উচ্চশিক্ষায় গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। ১৮. ইউজিসির করা প্রতিবেদনেই বলা হচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী প্রতি বরাদ্দ অতিমাত্রায় বৈষম্যপূর্ণ। এই ধারা রোধ করে শিক্ষার্থী প্রতি সমবরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। ১৯. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক মনোভাবে পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। এগুলোকে শিক্ষার্থীদের সামর্থ্যের অনকূল করতে হবে। ২০. কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হয়েছে। এখন দেওবন্দ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে আমাদের ছেলেরা পড়তে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

আলোচনা সভায় দাবি আদায়ে ৩ দফা কর্মসূচি প্রদান করা হয়। সেগুলো হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমূখে গণমিছিল ১০ নভেম্বর, সকাল ১০টায় ব্য়াতুল মেকাররম উত্তর গেটে জমায়েত। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষাবিদ ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের সাথে মাসব্যাপী মতবিনিময়। গণ-সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা।

মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, ইসলামী শিক্ষা নিয়ে যে কোন ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, ইসলামী শিক্ষা আছে, থাকবে। ইসলামী শিক্ষা না থাকলে এদেশের স্বাধীনতাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি শিক্ষার সকলস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান। ইসলামী শিক্ষা ছাড়া সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অশ্লীলতা বেহায়াপনা বন্ধ করা যাবে না।

বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বরাবরই বলে আসছেন, ইসলামী শিক্ষা ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু সিলেবাসে রেখে পরীক্ষা না হলে সে শিক্ষার কোন গুরুত্ব থাকে না। এভাবে ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করে দেয়া হয়েছে। চলতি বছর এসএসসি পাবলিক পরীক্ষায় ইসলামী শিক্ষা পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। দেশের ভবিষ্যত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নাস্তিক্যবাদের দিকে ঠেলে দিতেই ইসলাম শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence