নির্বাচন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে সেনাপ্রধানের দেখানো পথে এই সরকার হাঁটবে?
- পলাশ সরকার
- প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১২:৪৯ PM , আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ০৫:৩৮ PM

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার উজ জামান গত বুধবার অফিসার্স অ্যাড্রেসে জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করেছেন। তিনি দেশ পরিচালনায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারের ওপর আস্থার কথাও বলেছেন। একজন সেনাপ্রধান কেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, রাজনৈতিক সরকার ও ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো বেসামরিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি তার অফিসার্স অ্যাড্রেসে তুলেছেন- তা নিয়ে মৃদু প্রশ্ন তুলেছেন।
এটা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কিনা তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন করছেন। যারা এই দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাদের আসলে একটু পেছনে ফিরে তাকানো উচিত।
একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর। সরকারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিসমূহ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেনা সদস্য বা অফিসারদের নিজেদের মতাদর্শ, রাগ, বিরাগ, অনুরাগ প্রকাশ করার সুযোগ নেই। হয়তো সে কারণে বাংলাদেশকে অন্ধকার কূপের দিকে ঠেলে দেওয়া ২০১৪ সালের বিনাভোটের ইলেকশনের সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান ইকবাল করীম ভূঁইয়া কোনো আপত্তি বা প্রতিবাদ করেননি।
নির্বাচনটি বিতর্কিত হচ্ছে কিনা, এখানে সব দলের অংশগ্রহণ রয়েছে কিনা, জনগণের মধ্যে এর কী প্রভাব পড়বে-এসব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান না করে তৎকালীন সেনাপ্রধান সরকারের নির্দেশ পালনকেই সমীচীন মনে করেছেন।
এটা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না- তাই বিনা প্রশ্নে সরকারের চাহিদামতো ১৫ দিন নির্বাচনী দায়িত্বও পালন করেছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু তিনি যদি বলতেন। এই বিনাভোটের প্রহসনের নির্বাচনে সেনাবাহিনী জড়াবে না, কলঙ্কিত ইতিহাসের অংশ হবে না সেনাবাহিনী-তাহলে কেমন হতো? দেশের রাজনীতির ইতিহাস কি পরবর্তীতে এত তিক্ত হতো?
জুলাই-আগস্টে যখন নির্বিচারে ছাত্র হত্যা করা হচ্ছিল তখন পুরো জাতি সেনাবাহিনীর দিকে তাকিয়েছিল। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল এই পেশাদার বাহিনী যেন নিজেদের ভাইয়ের উপর গুলি না চালায়, রক্তপাতে না জড়ায়- নীরবে আদেশ পালন না করে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ও রাষ্ট্রের স্বার্থে সেনাবাহিনী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশ অমান্য করেছেন। বাংলাদেশে আরো একটি সম্ভাব্য রক্তাক্ত অধ্যায় কৌশলে এড়িয়েছেন।
জেনারেল ওয়াকার জুলাই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি হস্তক্ষেপ না করলে শেখ হাসিনার পতন এত সহজে হতো না। সরকার, দেশ, নির্বাচন প্রশ্নে মতামত ব্যক্ত করার যৌক্তিকতা তিনি অর্জন করেছেন তার সাহসী ভূমিকা দিয়ে।
৫ আগস্টের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে ভয়ানক সব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। অনেক ষড়যন্ত্র, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ তারা সামলাচ্ছেন। অনেক ভালো কাজ করেছে এই সরকার। কিন্তু একটি জায়গায় তাদের আরো বিশদভাবে কাজ করার সুযোগ ছিল, সেটা হলো দেশের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জন্ম দেওয়া, একটি আস্থার জায়গায় নিয়ে আসা।
কিন্তু গভীর দুঃখের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে দেশে যেন দুটি সমান্তরাল সরকার কাজ করছে।একটা উপদেষ্টাদের নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার অপরটি ছাত্রদের নিয়ে সরকার। ক্ষেত্রবিশেষে এই দুইয়ের মধ্যে আমরা সংঘাতও দেখতে পাচ্ছি। এ ভাবে একটি দেশ দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এত অস্থিরতা, বিনিয়োগহীনতা, বেকারত্বের বোঝা টানার মতো সক্ষমতা এখন বাংলাদেশের নেই।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি, বিদেশি কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা হস্তান্তর, রোহিঙ্গা ইস্যু, মানবিক করিডরের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতেও বর্তমান সরকার এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যার মাশুল দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে দিতে হতে পারে।
এই বিষয়গুলোতে ওয়াকার উজ জামান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মতানৈক্য প্রত্যাশা করেন।
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বর্তমান সেনাপ্রধানের সরব ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। তিনি একটা সমাধানের পথ দেখিয়েছেন, হাঁটা না হাঁটার বিষয়টি সরকারের।
লেখক:
পলাশ সরকার,
সাংবাদিক।