চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দক্ষতাকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না?

কল্লোল মোস্তফা
কল্লোল মোস্তফা  © টিডিসি সম্পাদিত

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করার অর্থ এই না যে, টার্মিনালটি সাইফ পাওয়ার টেকের হাতেই রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজেরই সক্ষমতা আছে টার্মিনাল পরিচালনা করার। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দক্ষতাকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না? আপনারা বিদেশি উদাহরণ দিচ্ছেন, তাহলে সিঙ্গাপুরের মডেল কেন ফলো করা হবে না? সিঙ্গাপুরের বন্দরগুলো তো পরিচালনা করছে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি পিএসএ ও জুরং পোর্ট কর্পোরেশান। তাহলে বাংলাদেশের বন্দর কর্তৃপক্ষ কেন পারবে না?

আরও পড়ুন: জুলাই হত্যাকাণ্ডে দল হিসেবে আ. লীগের দায় ও বিচার প্রসঙ্গ

উদাহরণস্বরূপ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কথাই ধরা যাক। কথা ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেই এটি পরিচালনা করবে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরপরই সিপিএ পতেঙ্গা টার্মিনালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সে বছরের নভেম্বরে মায়ানমার থেকে চালবোঝাই জাহাজের বার্থিং এবং পরের বছর জানুয়ারিতে আরেকটি জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে সফল ট্রায়াল অপারেশন অনুষ্ঠিত হয়। এটি দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালটি নিজস্ব পরিচালনার সক্ষমতার প্রমাণ দেয়। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পতেঙ্গা টার্মিনালের জন্য একটি বিদেশি অপারেটর নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে টার্মিনালের কার্যক্রম ২২ বছরের জন্য সৌদি আরবের কোম্পানি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল (আরএসজিটিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মজার ব্যাপার হলো, যারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিদেশি কোম্পানি কত ভালোভাবে বন্দর পরিচালনা করছে তার দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, তারা কিন্তু বাংলাদেশে সৌদি কোম্পানি রেড সির পারফরমেন্স নিয়ে কোন কথা বলছেন না। এর কারণ কি জানেন? তাহলে বিদেশি কোম্পানি মানেই দক্ষতা বৃদ্ধি এই বিভ্রম ভেঙে পড়বে। কারণ রেড সি কোম্পানি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল(পিসিটি) ভালোভাবে চালাতে পারছে না।

পিসিটি নন-গিয়ারড জাহাজ পরিচালনা করতে পারে না, কারণ অপারেটর কোম্পানির কাছে জাহাজ থেকে কনটেইনার আনলোড করার জন্য ক্রেনের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। স্ক্যানার না থাকায় এটি আমদানিকৃত পণ্যও হ্যান্ডেল করতে পারছে না। এর কার্যক্রম শুধু কয়েকটি রপ্তানি কনটেইনার পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

আরও পড়ুন: আবেগ নয়, সময় ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী আইনের সংস্কার হওয়া উচিত

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা পতেঙ্গা টার্মিনালটি নিজেই পরিচালনা করতে সক্ষম এবং প্রতিদিন বৈদেশিক মুদ্রায় ১.৬ কোটি টাকা আয় করতে পারবে। টার্মিনালের তিনটি বার্থে কনটেইনার পরিচালনা করে এক বছরে তা ৫৪৬ কোটি টাকায় পরিণত করা সম্ভব ছিল। এজন্য মাত্র ৪৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনতে হতো। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলে বন্দরকে এই বিনিয়োগটুকু করতে দেওয়া হয় নাই। ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে জেটিসহ টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারল কিন্তু তাকে ৪৬০ কোটি টাকা খরচ করে যন্ত্রপাতি কিনে অপারেট করতে দেওয়া হলো না।

এর ফলাফল কি হলো? বিদেশি কোম্পানি রেড সি এখন প্রতিশ্রুতি বিনিয়োগ করে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি কিনছে না, বরং বন্দরের আয় থেকে টাকা জমিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার চেষ্টা করছে। এর ফলে পতেঙ্গা টার্মিনালটির সুফল থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, বন্দেরর আয়ও কম হচ্ছে। পতেঙ্গা টার্মিনালের দৈনিক ১,৩৬৯ টিইইউ পরিচালনা করার সক্ষমতার বিপরীতে এটি প্রতিদিন গড়ে মাত্র ১৭৮ টিইইউ পরিচালনা করতে পেরেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ পিসিটির কনটেইনার হ্যান্ডলিং থেকে মাত্র ১৮ ডলার আয় করে, যা চট্টগ্রাম বন্দরের অন্যান্য টার্মিনালগুলোর চার্জ করা ৮০-৯০ ডলারের তুলনায় অনেক কম। 

কাজেই নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশের বিভিন্ন বন্দরের তুলনা না দিয়ে বাংলাদেশেরই পতেঙ্গা টার্মিনালে বিদেশি কোম্পানি দিয়ে কি লাভ হলো তার হিসাব নিকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ। আসলে সবকিছু নির্ভর করে মূলত রাষ্ট্রের গভর্নেন্স বা তদারকির উপর। যথাযথ তদারকি না থাকলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। আবার ঠিকঠাক তদারকি করা হলে দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকেও ভাল ফলাফল আদায় করা যায়।

কল্লোল মোস্তফা: লেখক ও গবেষক


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence