বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য যা যা করণীয়

বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য পরামর্শ
বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য পরামর্শ  © টিডিসি সম্পাদিত

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) লিখিত পরীক্ষা এমসিকিউ পাস করা প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ—এটি একজন আইনজীবী হওয়ার শেষ ধাপ। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী কাজী তাসনিম জাহান। পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস আর সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যে কেউ এই ধাপটি সফলভাবে পার হতে পারেন। নিচে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

পরীক্ষার কাঠামো ও বিষয়ভিত্তিক বিভাজন
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সেই সাতটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। তবে এগুলো ছয়টি ভাগে বিভক্ত থাকে। ক বিভাগে দেওয়ানি কার্যবিধি- ১৯০৮ এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন- ১৮৭৭ এই দুটি বিষয় থাকে। এখানে দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক এবং এই বিভাগটির জন্য বরাদ্দ নম্বর ৩০। বাকি প্রতিটি বিভাগ থেকে দুটি প্রশ্ন দেওয়া হয়, যার মধ্য থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, এবং প্রতিটি প্রশ্নের মান ১৫ নম্বর। খ বিভাগে ফৌজদারি কার্যবিধি -১৮৯৮, গ বিভাগে দণ্ডবিধি-১৮৬০, ঘ বিভাগে সাক্ষ্য আইন-১৮৭২, ঙ বিভাগে তামাদি আইন-১৯০৮ এবং চ বিভাগে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার অর্ডার আ্যন্ড বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২ অন্তর্ভুক্ত থাকে যেটির জন্য বরাদ্দ নম্বর ১০।

প্রশ্নের ধরণ যেমন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণ তিন ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত, একটি সমস্যাভিত্তিক প্রশ্ন থাকে, যেখানে একটি কল্পিত ঘটনা দেওয়া হয় এবং একজন আইনজীবী হিসেবে কীভাবে আইনের ধারা অনুযায়ী উপযুক্ত পরামর্শ দিতে হয় তা জানতে চাওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন থাকে যেখানে আইনের ব্যাখ্যা, মূলনীতি ও উপাদান আলোচনা করতে হয়। তৃতীয়ত, মুসাবিদা বা ড্রাফটিং অংশ থাকে, যা পরীক্ষার্থীর আদালতভিত্তিক দরখাস্ত লেখার দক্ষতা যাচাই করে। ড্রাফটিং অংশে সাধারণত মামলার আরজি, সময় প্রার্থনার দরখাস্ত, লিখিত জবাব, অভিযোগপত্র, বা বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালে কোনো অভিযোগের খসড়া তৈরি করতে হতে পারে। তাই এসব দরখাস্তের ভাষা, কাঠামো এবং উপস্থাপন অনুশীলন করে নিতে হবে। এখানে ফরম্যাট জানা অত্যন্ত জরুরি। যেমন, আদালতের নাম, এখতিয়ার, বাদী ও বিবাদির নাম এবং বিষয়বস্তু সংক্ষেপে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয় তা ভালোভাবে আয়ত্তে রাখা উচিত।

সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে
লিখিত পরীক্ষার সময়সীমা চার ঘণ্টা। এই চার ঘণ্টায় সাতটি বিষয়ের উত্তর লিখতে হয়। তাই সময় ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে অনুশীলন করতে হবে। হাতের লেখাকে দ্রুত এবং পরিষ্কার করতে প্রতিদিন লিখে প্র্যাকটিস করা উচিত। আইনের ধারা মনে না থাকলে ভুল ধারা না লিখে শুধু আইনের সাল উল্লেখ করে এবং ধারায় কী বলা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে উত্তর লিখতে হবে। বরং ভুল তথ্য দিলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোনো প্রশ্ন বাদ দেওয়া যাবে না। সময় স্বল্পতা থাকলেও মূল বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

সর্বোপরি, এই পরীক্ষায় সফল হতে হলে শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয়, বিশ্লেষণ, কাঠামোবদ্ধ উপস্থাপন এবং সময় সচেতনতা এই তিনটি গুণই আপনাকে এগিয়ে রাখবে। একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে এটি আপনার বড় একটি পদক্ষেপ। সঠিক প্রস্তুতিই হতে পারে সাফল্যের চাবিকাঠি। আপনার চেষ্টাকে ফলপ্রসূ করতে এই সময়টুকু কাজে লাগান মনোযোগ, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাস দিয়ে।

লেখক: প্রভাষক, আইন বিভাগ, ফেনী ইউনিভার্সিটি এবং আইনজীবী, ঢাকা জজকোর্ট।


সর্বশেষ সংবাদ