আগ্রহ থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা, প্রথমবারেই সহকারী জজ ইবির জয়

নাহিদ হাসান জয়
নাহিদ হাসান জয়  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান জয়। তিনি নাটোর জেলার লালপুর থানার অর্ন্তগত ধনঞ্জয়পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং নাটোর থেকেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ থেকে শেষ করেন। মাত্র ৫ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট জয় মা এবং বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে যান। ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন পেরিয়ে প্রথম পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। শিক্ষা জীবন শেষের শুরুতেই এমন সাফল্যের পেছনের গল্প তুলে ধরতে নাহিদ হাসান জয় মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি— ওয়াসিফ আল আবরার


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রস্তুতির শুরুটা কেমন ছিল? কবে থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করেছিলেন?
নাহিদ হাসান জয়: আমি প্রথম বর্ষ থেকেই একাডেমিক পড়াশুনা ভালোভাবে করেছি। বিজেএসের সিলেবাসের সাথে সম্পর্কিত আইনগুলো ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিজেএসের প্রস্তুতি শুরু করেছি তৃতীয় বর্ষ থেকে। প্রথম ৩ বছর আমি ডিপার্টমেন্টে প্রথম, দ্বিতীয়-র মধ্যেই থাকতাম। পরবর্তীতে জুডিশিয়ারির দিকে ফোকাস করতে গিয়ে ডিপার্টমেন্টের চুড়ান্ত রেজাল্টে আমি ডিপার্টমেন্টে তৃতীয় হই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিদিন গড়ে কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন এবং কোন পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিতেন?
নাহিদ হাসান জয়: যখন থেকে পড়াশুনা শুরু করেছি তখন থেকে গড়ে ১২-১৪ ঘন্টা পড়াশুনা করেছি ধারাবাহিকভাবে। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমি আইনকে ভালোবেসে পড়তাম এবং গভীরভাবে জানার জন্য পড়তাম। এর জন্য আমি প্রচুর রেফারেন্স বই পড়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হওয়ার জন্য কোন কোন বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন?
নাহিদ হাসান জয়: প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম জেনারেল অংশ দিয়ে। আমার মনে হয় গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক অংশে খুব সুন্দর একটা মার্কস পেলে এ যাত্রায় ভালো ফলাফল করাটা অনেকটা সহজ হয়ে পড়বে। তবে আইন অংশে ভালো করার কোনো বিকল্প নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে কী পার্থক্য ছিল?
নাহিদ হাসান জয়: লিখিত পরীক্ষা হলো জুডিশিয়ারির মূল পরীক্ষা যেখানে নিজেকে অন্যদের থেকে পার্থক্য গড়ে দেয়। লিখিত পরীক্ষা খুব ভালো হলে আপনার জুডিশিয়ারির যাত্রা অনেকাংশ সহজ হয়ে পড়বে। অন্যদিকে মৌখিক পরীক্ষা হলো নিজের আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা, নিজের ধৈর্য্যের পরীক্ষা। এখানে আইনের বাহিরেও বাংলাদেশ-আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী এবং নিজের মতামত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এজন্য এই পরিসরে আইনের বাহিরেও জ্ঞানার্জনের কোনো বিকল্প নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতির সময় কীভাবে মানসিক চাপ সামলেছেন এবং মোটিভেশন ধরে রেখেছেন? কখনও পিছু হটতে ইচ্ছে করেনি বা হতাশা ঘিরে ধরেনি?
নাহিদ হাসান জয়: আমার পুরো জার্নিটা ছিল ধৈর্য্যের পরীক্ষা। এখানে প্রতিনিয়ত আমাকে আমার সাথেই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে। পড়তে পড়তে হতাশ হয়েছি বারংবার, কিন্তু আল্লাহতায়ালা প্রতিবারই মনে আশা জাগিয়ে তুলেছেন যে আমাকে থেমে থাকলে চলবেনা। আমার ভাইভা পরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাল্টের আগে অবধি আমার পুরো জার্নিটা নিজে নিজে ভাবলে এটাই মনে আসতো যে, এর থেকে বেশি পরিশ্রম করা আর আমার পক্ষে সম্ভব হবেনা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার পুরো যাত্রায় তিক্ত/মধুর কোন স্মৃতি এই মুহুর্তে মনে পড়ছে? শেয়ার করুন প্লিজ।
নাহিদ হাসান জয়: সুখ-দুঃখ মিলিয়েই আমাদের এ জীবন। এ যাত্রায় কত আনন্দ, স্মৃতি, দুঃখ ত্যাগ করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হয়! গত বছর পবিত্র রমজান এবং ইদ ক্যাম্পাসেই কাটাতে হয়েছে জুডিশিয়ারির পরীক্ষার জন্য। আজকে পরিবারের সাথে কাটাতে পারছি এটাই আল্লাহর অশেষ রহমত। প্রতিবার ঢাকা যেয়ে এক্সাম দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছি প্রিলি, রিটেন, ভাইভার পর। তারপরও আল্লাহকে ঢেকে আমি হতাশ হইনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভবিষ্যতে যারা সহকারী জজ হতে চান, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
নাহিদ হাসান জয়: নতুনদের জন্য পরামর্শ হলো যাদের জুডিশিয়ারির প্রবল ইচ্ছে আছে তাদের খাতায় লিখার মান বাড়াতে হবে। খাতার পৃষ্ঠার সংখ্যা বৃদ্ধি না করে মান বৃদ্ধি করতে হবে। বিনয়ী হতে হবে এবং ধৈর্যশীল হতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে পরিশ্রম করে যেতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ