পরিশ্রম-অধ্যবসায়েই বিজেএস যুদ্ধ জয় ঐশীর, বিচ্ছিন্ন ছিলেন স্যোশাল মিডিয়া থেকে

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন আশরিফা আকন্দ ঐশী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সম্প্রতি তার সাফল্য ও শিক্ষা জীবন নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন—নুসরাত জান্নাত তালবিয়া
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় আপনি সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার অনুভূতি কী?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: ভীষণ ভাল লাগছে স্বাভাবিকভাবেই। কঠোর পরিশ্রম করেছি। অনেক সাধনার পরেই আসলে সহকারী জজ হওয়া যায়। কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, সাথে ভাগ্যও লাগে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আমার বাবা আছেন তবে মা নেই। আমরা তিন বোন। তিন বোনের মধ্যে আমার বড় বোন বিসিএস হেলথ ক্যাডার ও ছোট বোন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রার গল্প শুনতে চাই।
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আমি পড়াশোনা করেছি রাজধানীর শেরে বাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। সেখানে আমি জেএসসির প্রথম ব্যাচ ছিলাম। সেসময় আমি বৃত্তি পেয়েছিলাম। এসএসসিতে আমার জিপিএ-৫ ছিল, সারাদেশে ৯৫তম হয়েছিলাম। এইচএসসি দিয়েছি হলি ক্রস কলেজ থেকে। সেখান থেকেও জিপিএ-৫ পেয়েছি। এসএসসি, এইচএসসি দুটোই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি এবং এলএলএম দুটোতেই আমার ফার্স্ট ক্লাস ছিল। এরপর আমি প্রথমবার বার কাউন্সিল পরীক্ষা দেই। সেখানেও আমি উত্তীর্ণ হই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পড়াশোনার প্রস্তুতি কেমন ছিল?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আমি একদম ব্যক্তিগত প্রস্তুতি নিয়েছি প্রিলি, রিটেন সবকিছু মিলিয়ে। নিজেরমতো রুটিন করেছি, প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করেছি। সোশ্যাল সাইটগুলো থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেছি। নিজের মতো করে সবকিছু ম্যানেজ করেছি। আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। কোনো কোচিং সেন্টারের সাহায্য নেইনি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বিচারক হওয়ার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: প্রথমত মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া। কারণ তিনি না চাইলে হতো না। পরবর্তীতে আমি বলব, আমার পরিবার- আমার বাবা, আমার বোন। আমার মা নেই ৭ বছর। অনেক স্ট্রাগলিং লাইফ গেছে। অনেক খারাপ সময় গেছে। কিন্তু আমার বাবা আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। আমি আমার বন্ধুদেরও স্মরণ করব। তারা আমাকে অনেক সাহস দিয়েছে, মনোবল দিয়েছে। সবশেষে বলব, আমি নিজেও অনেক পরিশ্রম করেছি। আর মহান আল্লাহর কাছে চেয়েছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হিসেবে আপনি দেশের জন্য কী অবদান রাখতে চান?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আমি দেশকে আমার সর্বোচ্চ দেওয়া চেষ্টা করব এবং সততা বজায় রাখবো। অনেক ছোট জীবন। অনেক ধরনের সমস্যা থাকে। দেশের বিচার ব্যবস্থা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি ভাইভা কতবার দিয়েছেন এবং কততম বার সফল হয়েছেন?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আমি গতবার প্রথম (১৬তম) ভাইভা দিয়েছি। এবার আমি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। মাঝখানে আমার বার কাউন্সিল পরীক্ষা ছিল। সেটাও পাশ করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইভার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে এবং আপনি কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: ভাইভার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে শান্ত রাখা। সব উত্তর হয়ত দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু সেক্ষেত্রে মনোবল হারানো চলবে না। আপনি যা জানেন তা মাথা ঠান্ডা রেখে সম্মান দেখিয়ে উত্তর করবেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি বলতে চান?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আইন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর। হতাশ হওয়া যাবে না। সাথে সাথে অবশ্যই সেকেন্ড অপশন খোলা রাখতে হবে। ভাগ্য এবং কঠোর পরিশ্রম দুটো মিলেই সফলতা আসে। অবশ্যই সর্বাত্মক চেষ্টা রাখতে হবে সকল বিষয়ে অবগত থাকা এবং হাল ছেড়ে না দেওয়ার।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইন নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভাল নাকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: প্রাইভেট এবং পাবলিক দুটোর মধ্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো পার্থক্য পাই না। আইন পড়ার জন্য নিজের মনোবল দরকার, নিজের সদিচ্ছা দরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হয়ত আগে থেকে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করে। আমি অনেক প্রাইভেটের মেধাবী স্টুডেন্ট দেখেছি। তারা অনেক সম্ভাবনাময়। আমি পড়ার ক্ষেত্রে কোনো আলাদা বিষয় দেখব না। অনেকে হয়ত চেষ্টা করে না বা নিজের মেধাকে বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে প্রাইভেট এবং পাবলিক কোনো পার্থক্য নেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখে তারা কোন বিষয়গুলোতে ফোকাস করলে ভাল বিচারক হতে পারবে?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: তাদেরকে আমি বলব যে, ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। মনোবল হারানো চলবে না। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইতে হবে। মানসিক এবং শারীরিকভাবে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আইসোলেটেড থেকে, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। প্রত্যেকটা বিষয় নিজের মতো করে প্ল্যান করে পড়তে হবে। প্রত্যেকেরই আলাদা প্ল্যান থাকা উচিত।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব কতটুকু?
আশরিফা আকন্দ ঐশী: একাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব আসলে খুব বেশি নেই। কারণ রিটেনের ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আসলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সিজিপিএ অনেক কম আসে। অনেকের জীবনে অনেকরকম সমস্যা থাকে। টিউশন করায়, পরিবার দেখে। ভালো রেজাল্ট হয়ত হয় না। দেখা গেছে, যাদের অনেক ভালো সিজিপিএ তাদেরও হয়নি। আবার অনেকের মোটামুটি কম সিজিপিএ তাদেরও হয়েছে। ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মহান আল্লাহর দয়া এবং নিজের চেষ্টার উপর।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগল। আপনাকে আবারো অভিনন্দন এবং শুভকামনা।
আশরিফা আকন্দ ঐশী: আপনাকেও ধন্যবাদ।