নিজস্ব কৌশলে যেভাবে ঢাবির ব্যবসায় ইউনিটে মানবিক থেকে প্রথম রাইয়ান

রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান  © টিডিসি ফটো

রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ২০২২-২৩ সেশনে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে মানবিক থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। সম্প্রতি তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন— জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা কি ছিল?
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান: যখন ক্লাস নাইন-টেনে পড়তাম সিনিয়িরদের দেখতাম একেকজন অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে, আমারও মনে হতো আমি যদি তাদের মতো ভালো করতে পারতাম। সেই সাথে বাবা-মা ও চাইতেন আমি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো কিছু করি। তাদের ইচ্ছা এবং নিজের আগ্রহে ছোট ছোট প্রচেষ্টা থেকে এই ফলাফল করি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্ততি কীভাবে নিয়েছেন?
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান: একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালে আমি একদিন একটা প্রশ্নব্যাংক অ্যানালাইসিস কিনি। সিনিয়িরদের কাছ থেকে সাজেশন নেওয়া শুরু করি কীভাবে ভালো করা যায়। শুধু চান্স পাওয়াটাই আমার ইচ্ছা ছিল না। আমার পরিকল্পনা ছিল একটু ভালো ফলাফল করার। যেন যে কোনো সাবজেক্টে আমি পড়তে পারি। এইচএসসি দেওয়ার পর ভর্তিযুদ্ধে যখন আসলাম তখন দেখি যে আমি আগে যা পড়ে রেখেছিলাম তা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। এই সময়ে একটু ডিপ্রেশন কাজ করে, সে সুযোগ যেন না হয় তাই সতর্ক ছিলাম। নিজস্ব স্টাইলে আমি পড়তাম যেন পড়তে পড়তে একঘেয়েমি না চলে আসে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতিকালীন সময়ের দৈনন্দিন রুটিন কি ছিল?
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান: ওইসময় আমি আমার সব ফোকাস শুধু পড়াশোনার দিকেই দিয়েছিলাম। আমার অনেক আউট বই পড়ার অভ্যাস ছিল কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার জন্য সব বাদ দিয়ে দেই। নিজের সম্পূর্ণ চেষ্টাটাই দিয়েছিলাম যেন পরে আফসোস করতে না হয়। সে সময় পড়া নিয়ে কোনো কিছুকে আমি অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম না। নিজে তথ্য যাছাই-বাছাই করে তারপর পড়তাম। একটা কথা বলবো যে কোচিং গুলো পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে, এটাই মুখ্য নয়। নিজের কৌশল থাকতে হয় যা আমাদের এগিয়ে থাকতে সাহায্য করে। সিলেবাসকে আমি ভাগ করে নিতাম ও কখন কী পড়বো এটা লিখে রাখতাম। সেগুলো শেষ করতাম এবং এগুলো ভালোভাবে শেষ করেই অন্য টপিকে যেতাম। আমি বিষয় ভিত্তিকভাবে পড়তাম। উচ্চমাধ্যমিকে থাকাকালেই একটু একটু করে পড়তাম বলে অনেকখানিই এগিয়ে থাকে আমার পড়া যা ওই তিনমাসে সম্ভব না। 

এইচএসসি পরীক্ষার পর আরেকটা বিষয় দেখা যায় যে সবাই ঢাকার দিকে ঝুঁকে পরে। সেখানে কোচিংয়ের জন্য যায়। তবে আমার মনে হয় অনেকে অন্য শহর থেকে এসে এখানে নিজেকে খাপ খাওয়াতে গিয়ে অনেক সময় পার করে ফেলে যা প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটায়। আমি আমার সব পড়া রংপুর থেকেই পড়ি এবং এটা আমাকে অনেক সাহায্য করে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোনো বিষয়ে পড়ার পরিকল্পনা আছে?
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান: আমি ‘সি’ ইউনিটে প্রথম হলেও আমার ইচ্ছা আইন বিভাগ বা অর্থনীতিতে পড়া। একসাথে একাধিক ইউনিটে সুযোগ পাওয়ার কারণে এখনো ঠিক করতে পারছি না কোথায় পড়বো। তবে যে বিষয়েই পড়ি না কেন আমার চেষ্টা থাকবে সেটার উপর ভালো দক্ষতা রাখার। আইন বিভাগে পড়ার ইচ্ছা আছে কারণ বিশ্বের বড় বড় যত নেতা আছেন বা নেতৃত্ব দেওয়া বড় ব্যক্তিত্বের মানুষ তারা বেশিরভাগই আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তাই আমার ইচ্ছা আমি এখানে পড়বো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ বা পরামর্শ কি ?
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান: যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে ইচ্ছুক তাদের শুধু বলবো প্রিপারেশনের সময় যে তিন মাস সময়টা পাওয়া যায় এটা যেন হেলায় না ফেলে। সিলেবাস অনেক বড় থাকে এই সময়ে কখনোই সম্ভব হবে না ভালোভাবে পড়ার। চেষ্টা করতে হবে ইন্টারমিডিয়েটে পড়া সময় থেকেই একটু একটু করে পড়া এগিয়ে রাখার। এ তিন মাসে সে শুধু পড়াগুলো গোছাবে এবং আরও পাকাপোক্ত করবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রেদোয়ানুল করিম রাইয়ান: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখন ইচ্ছা আছে আইন বিভাগে পড়াশোনা করে যদি বিচারক হতে পারি তাহলে এক সুযোগে অর্থনীতির উপর মাস্টার্স করবো। যেন দুই বিভাগের উপরই ভালো দক্ষতা থাকে এবং পিএইচডি করতে পারি। যে প্রফেশনেই যাই ইচ্ছা আছে একটাতে অনার্স করলে আরেকটাতে মাস্টার্স করবো। 

 

সর্বশেষ সংবাদ