কোচিং না করে ভালো ফলাফল করা যায়, যার উদাহরণ আমি

জুয়াইরাহ পারভীন জুহি
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি

জুয়াইরাহ পারভীন জুহি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ২০২২-২৩ সেশনে ‘এ’ ইউনিটে ৮ম স্থান অধিকার করা ছাত্রী। নিজের ভর্তি প্রস্তুতির সময় প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে এই ছাত্রী পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন বিভাগে। সম্প্রতি তিনি তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন— আমান উল্যাহ আলভী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য আপনি কীভাবে পড়েছেন, দৈনন্দিন রুটিন কী ছিল?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: আমি কখনোই রুটিন করে পড়তে পারি না। দৈনন্দিন রুটিনও আমার নেই। দিনের মধ্যে যখনই সময় পেতাম, বই নিয়ে বসে পড়তাম। আর বই-পুস্তক আলাদা ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে প্রস্ততি নিয়েছিলাম, সেটাই ছিল। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা যদি বলি। সবার শুরুতে প্রশ্নব্যাংক নিয়ে পড়া শুরু করি। তারপর নির্দিষ্ট টপিক নির্বাচন করে অন্যান্য বই থেকে সেই টপিক নির্ণয় করে পড়েছি। 

ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়ার কোনো সহজ টেকনিক আছে কী?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: কথায় বলে না, সফলতার কোনো সহজ টেকনিক নেই। যেটা আছে সেটার নাম নিয়মিত পড়া। একজন শিক্ষার্থী যদি পড়াশোনায় নিয়মিত না হয় এবং পরিশ্রম করার উদ্যম তার মধ্যে যদি না থাকে, তাহলে তিনি সফলতা পাবেন না। বরং তার পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পৃথিবীতে যারাই সফল হয়েছেন প্রত্যেকে নিজ জায়গা থেকে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বলেই সফলতার স্বাদ পেয়েছেন।

ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? 
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা একটা প্রতিযোগিতামূলক জায়গা। সেখানে কোচিং করাটা প্রায় সবাই জরুরি বলে মনে করেন। তবে আমি কোনো কোচিংয়ে পড়িনি। একটা কোচিংয়ের সাথে নামমাত্র যুক্ত থেকে শুধু নোট সংগ্রহ করেছিলাম।

যদিও আমার কাছে নোট এতো বেশি ফলপ্রসূ মনে হয়নি। আমি নিজ থেকেই বই থেকে নোট করে মুখস্থ করতাম, পড়তাম। কোচিং না করেও যে একটা ভালো ফলাফল করা যায়, তার উদাহরণস্বরূপ আমাকেই ধরুন। যাদের কোচিং করার সুযোগ নেই, তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো ভালো বই কিনে বাসায় সময় দেন, পড়ার টেবিলে নিয়মিত পড়েন।

পাঠ্যবই নাকি গাইডবই, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: অবশ্যই পাঠ্যবই। বোর্ড প্রকাশিত বইয়ের পাশাপাশি আমার কাছে ছিল বিভিন্ন সহায়ক বই। এসবই মোটামুটি আয়ত্তে এনেছিলাম, তারপর আল্লাহর অশেষ রহমতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। 

অনেক শিক্ষার্থীকে একইসঙ্গে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। এমন শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ কী?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় উচিত এলোমেলো করে না পড়ে গুছিয়ে পড়ার চেষ্টা করা। অনেক সময়ই শিক্ষার্থীদের হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একসাথে একাধিক ইউনিটের প্রস্তুতি কোথায় থেকে শুরু করবে, কি পড়বে; যারা এমন হতাশায় ভোগেন তাদের জন্য পরামর্শ হলো, তারা যেন একটা সঠিক গাইডলাইন ফলো করেন। আর নিজের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা রাখেন।

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় সাধারণত কী ধরনের ভুল করে থাকেন শিক্ষার্থীরা?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: আত্মবিশ্বাস একজন শিক্ষার্থীকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। আর সবসময় মনে যদি ভয় থাকে, তবে কোথাও চলা সম্ভব হবে না। প্রস্তুতি গ্রহণের শুরু থেকেই চেষ্টা করতে হবে সময় নষ্ট না করে নিয়মিত পড়াশোনা করার। পরিশ্রমী মন-মানসিকতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে।

অনেক শিক্ষার্থীই আছেন, যাদের রিভিশনের অভ্যাস খুবই কম। কোনো পড়া অনেকদিন পর পড়তে নিলে ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে সেই পড়াই যদি নিয়মমতো পড়া বা চর্চার ওপর রাখা যায়, তাহলেই প্রতিটি অধ্যায় সহজ হয়ে যাবে।

পরীক্ষা চলাকালীন সময় কোন ভুলগুলো করা উচিত নয়?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা পরীক্ষার হলে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে যান। এই ভাবনা থেকেই তারা উত্তর করতে ভয় পান এবং সবশেষে তার অর্জন খুব একটা আশানুরূপ হয় না। এজন্য শিক্ষার্থীদের নিজের ওপর বিশ্বাস রাখলে তবেই কেবল সফল হওয়া যায়। আত্মবিশ্বাসী মনোভাব থাকতে হবে প্রতিটি শিক্ষার্থী মনে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আপনার অবস্থান কত ছিল?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: আলহামদুলিল্লাহ, আমার অবস্থান ছিল অষ্টম (৮ম) ৷ আমি কখনো ভাবতেও পারিনি যে, এতো ভালো ফলাফল হতে পারে আমার। কল্পনার বাইরে থাকা স্বপ্ন আল্লাহ তায়ালা পূরণ করে দিয়েছেন বলে তার নিকট শুকরিয়া আদায় করি আজও।

আপনার এই সফলতার পেছনের গল্প কী?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: আমি শুধু নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করে গেছি। সহায়ক হিসেবে ছিল বই, আর ভাগ্য নির্ধারক হিসেবে ছিলেন আল্লাহ। প্রবল ইচ্ছাশক্তি মানুষকে তার সর্বোচ্চ সফলতায় যেতে সাহায্য করে। আমি শুধু নিয়মিত পড়েছি, এজন্যই হয়ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাকে ফিরিয়ে দেয়নি। ঢাবিতে ৮১১ এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৫২৬তম ছিলাম। কিন্তু সবকিছু বাদ দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জীবন কেমন উপভোগ করছেন?
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো লাগছে। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থার মান আমাকে অভিভূত করেছে। আমি অনেক খুশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।

এমন কোনো গল্প আছে কি অ্যাডমিশন সম্পর্কিত যেটি আপনি বলতে চান? 
জুয়াইরাহ পারভীন জুহি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ঠিক দু-দিন আগে আমার দাঁতের অপারেশন হয়েছিলো। যেহেতু অসুস্থ ছিলাম পরিবার আমায় কোনোরকম চাপ দেয়নি যে আমাকে চান্স পেতেই হবে। কিন্তু আমার প্রবল আগ্রহ ছিল যে, আমি পাবলিকেই পড়বো। সেই ভাবনা থেকেই পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করি এবং এতো ভালো ফলাফল পাই।


সর্বশেষ সংবাদ