ছাত্র অবস্থায়ই সফল ফ্রিল্যান্সার শাকিল, মাসিক আয় লক্ষাধিক

শাকিল আহমেদ
শাকিল আহমেদ  © সংগৃহীত

যশোর এম এম কলেজের বিবিএ ছাত্র শাকিল আহমেদ। পড়াশোনার পাশাপাশি করছেন ফ্রিল্যান্সিং। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি। সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পেয়েছেন ‘ন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স ২০২৩’-এ সম্মাননা। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন  তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ফ্রিল্যান্সিং-এর শুরুর গল্পটা কেমন ছিল?
শাকিল আহমেদ: শুরুটা ২০১৪-২০১৫ সালের দিকে যখন আমি এসএসসিতে পড়তাম তখন থেকে। তবে এটা নিয়ে আমি ঘাটাঘাটি শুরু করি যখন আমি ক্লাস ৮ বা ৯ এ পড়তাম। আমি আয় করা শুরু করি এসএসসির পর থেকে। আমার বাসায় একটি কম্পিউটার ছিলো ওটাতেই আমি কৌতূহলবসত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম। প্রযুক্তি বিষয়ে আমার খুবই আগ্রহ ছিলো তাই বসে বসে বিভিন্ন কিছু নিয়ে জানতাম।  সেসময় ইন্টারনেট এক্সেস খুব বেশি একটা ছিলো না তাই আমি সাধারণ জিনিসগুলোই যেমন গেমিং, মুভি দেখা ইত্যাদি করতাম। ধীরে ধীরে আমি যখন জানতে পারি অনলাইন থেকে আয় করা সম্ভব তখন আমি চেষ্টা করা শুরু করি। একটার পর একটা যায়গায় চেষ্টা করা শুরু করি ব্যর্থ হতাম, কেন ব্যর্থ হতাম তা নিয়েও কাজ করতাম। তারপর ১২-১৩ বছর চলে যাওয়ার পর এখন অনেক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা হয়েছে আমার। মাসের পর মাস গিয়েছে যে আমি কাজ নিয়ে থাকতাম দিনের আলো দেখার সুযোগ হয়নি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কেন বেছে নিলেন? ফ্রিল্যান্সিং-এ এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনি মনে করেন?
শাকিল আহমেদ: আমি ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেকগুলো ক্যাটাগরিতেই কাজ করেছি ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং যার মধ্যে এসইও, অ্যামাজন সেলিং, ই-কমার্স ইত্যাদি। গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে আসার মূল কারণ হলো আমি এখানে আমার সৃজনশীল দক্ষতাটি কাজে লাগাতে পেরেছি। আমি যখন এখানে কাজ শুরু করি আমি অনেক প্রশংসা পাই, অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড থেকে আমার কাজের প্রশংসা করা হতো যা আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করে। তারপর আমারও মনে হয় আমি ভালো করতে পারবো তাই আমি নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলি। আমার ওভারল ক্যারিয়ার ১৩ বছরের যার মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন করছি ৩ বছর যাবত।  

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের প্রথম কাজ এবং আয়ের অনুভূতি কী?
শাকিল আহমেদ: আমার প্রথম কাজটি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নিয়েই ছিলো। একটা পাঁচ ডলারের কাজ দিয়ে আমার যাত্রা শুরু। তবে তখন আমার দক্ষতা তেমন ছিলো না ক্লায়েন্ট আমার কাজে খুব একটা খুশি হয়নি। আমি বুঝতে পারি আমার নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে। তারপর আমি কিছুদিন কাজ করা বন্ধ করে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুতে কোন বিষয়গুলো বাধা হিসেবে কাজ করেছে এবং সেগুলো থেকে কীভাবে বের হয়েছেন?
শাকিল আহমেদ: বাধা বলতে আমার বাবার চাকরির সুবাদে আমি যেহেতু ঢাকার বাইরে থাকতাম আমার আশেপাশে প্রযুক্তি নিয়ে ঘাটাঘাটি করে বা এ বিষয়ে আগ্রহী এমন কাউকেই পাইনি। আমার নিজের থেকেই সম্পূর্ণভাবে সব শুরু করতে হয়েছিলো। মেন্টর  হিসেবে কাউকেই পাইনি। কোনো কাজ করতে গেলে তাতে সফল না হলে কেন হইনি বা কি করা যেতে পারে এমন পরামর্শ দেয়ার মতো অভিজ্ঞ কাউকেই পাইনি। আমার মনে হয় তখন ঢাকার বাইরে যারা থাকতো তাদের সবাইকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো। আমার প্রচুর রিসার্চ করতে হয়েছিলো। এখন যেমন গুগলে বা ইউটিউবে সব পাওয়া যায় তখন সেটা ছিলো না। এই দিকনির্দেশনার দিকটা ছাড়া আমার আর কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।      

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ে ব্যর্থতার কী কী কারণ হতে পারে?
শাকিল আহমেদ: এখন সবাই এটাকে অর্থ আয়ের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করা শুরু করে। কিন্তু আমি যখন করি তখন নিজ আগ্রহ বা জানার জন্যই শুরু করি যা পরবর্তীতে আমাদের পেশা হিসেবে রূপ নেয়। আমাদের শেখা টাকা ইনকামের জন্য ছিলো না আমাদের শেখাটা ছিলো জানার জন্য। শুধু ফ্রিল্যান্সিং না, আপনি যেকোনো কাজেই নিজের আগ্রহ থেকে যদি না করেন তাহলে কখনোই ভালো করা সম্ভব না। অনেকে মনে করে তিন মাসের একটা কোর্স করেই এখানে ভালো আয় করা সম্ভব কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা না। এটা একটা স্ট্রাগলের ব্যাপার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞতার ব্যাপার। আমরা স্কুল কলেজে যেমন ১৫-১৬ বছর পড়ার পর ওই বিষয়ে একটা চাকরিতে যাই এখানে ভালো একটা অবস্থান তৈরির জন্য অন্তত ৫ বছর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা যদি এটাকে একটা অর্থ ইনকামের মাধ্যম হিসেবে কাজ করি এবং মনে করি ৬ মাসের মধ্যে এত টাকা আয় করবো তাহলে সম্ভব নয়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের জন্য সঠিক গাইডলাইনটি কী হতে পারে?
শাকিল আহমেদ: প্রথমত খুবই ক্লিয়ার ভিশন রাখতে হবে। এই ক্ষেত্রে যারা সফল খুব ভালো অবস্থানে আছে তদের কতটা সময় লেগেছে সে ব্যাপারে ধারণা রাখা। আমার ধারণামতে কেউই ৫-৭ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া এখানে ভালো অবস্থানে নেই। এখানে আসার আগে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে এখানে ধৈর্য নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সময় এবং শ্রম দিতে হবে। এটা কোনো রাতারাতি হয়ে যাওয়ার বিষয় না। হয়তো স্বল্প সময়ের মধ্যে ছোটখাটো পরিমাণে আয় করতে পারবেন কিন্তু আপনি যদি দীর্ঘ সময় এবং ভালো একটি অবস্থান করতে চান তাহলে আপনাকে এখানে এ শ্রমটা দিতেেই হবে। সে পরিশ্রমটা দেয়ার ৫-১০ বছর পর আপনি আপনাকে একটা খুব ভালো অবস্থানে দেখতে পাবেন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন ফ্রিল্যান্সার এর পোর্টফোলিও বিল্ড আপ করার ব্যাপারে কিছু বলুন।
শাকিল আহমেদ: এটা একেক সেক্টরের একেক রকম হয়ে থাকে। যারা নতুন কাজ শুরু করে তারা কাজ শিখে সাথে সাথে আবেদন করা শুরু করে। কিন্তু ক্লায়েন্টকে এট্রাক্ট করতে হলে আমাদের খুব ভালো একটা পোর্টফোলিও থাকতে হবে তাছাড়া নতুন যারা আসে যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাদের মুখের কথায় ক্লায়েন্ট কখনোই কাজ দিবে না। আবার ফ্রিল্যান্সিংয়ের একেক সেক্টরের জন্য একেক প্ল্যাটফর্ম কাজ করে যেমন আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চান তাহরে লিংকডইন আপনাকে কাজ পেতে সাহায্য করবে আবার গ্রাফিক্সের জন্য এই প্ল্যাটফর্ম কাজে দিবে না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে?
শাকিল আহমেদ: প্রথমত ফ্রিল্যান্সাররা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার মধ্যে পরে তা হলো পেমেন্ট গেটওয়ে। বাংলাদেশে এখনো কাজ শেষে নিজের পেমেন্ট নেওয়ার সময় অনেক সমস্যার মুখোমুখি হই। যারা ভালো অস্থানে থাকে তারা হয়তো বাইরের দেশে কোনো কোম্পানির সাথে যোগাযোগ থাকায় সেখান থেকে নিয়ে নিতে পারে কিন্তু যারা নতুন তাদের খুবই সমস্যার মধ্যে পরতে হয় যেহেতু আমাদের দেশে পেপাল নেই। দ্বিতীয়ত আমরা ইন্টারনেট নিয়ে খুবই ভোগান্তিতে থাকি। দুই তিনটা ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে রাখার পরেও দেখা যায় হুটহাট নেট সমস্যা দেখা যায়। আমাদের পুরো কাজটাই যেহেতু ইন্টারনেট ভিত্তিক তাই এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায় আমি কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সাথে মিটিংয়ে আছি আমার কয়েক লাখ টাকার ডিল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু হুট করে নেট চলে গেল যেটা খুবই আনপ্রফেশনাল দেখায়। আমি অন্য কোনো দেশের কাউকে এমনটা হতে দেখিনি কিন্তু আমার সাথে এটা অনেকবার হয়েছে। একটু বেশি টাকা লাগলেও যদি সম্ভব হয় আমাদের প্রফেশনালদের জন্য ভালো মানের স্টেবল একটা ইন্টারনেট সেবা সম্ভব হয় তাহলে আমার মনে হয় অনেকেই রাজি হবে এ বিষয়ে। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা এই সেক্টরে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় খুব ভালো করছে কিন্তু এইসব সমস্যাগুলোর জন্য তারা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনার সময় দেয়ার জন্য।
শাকিল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence