ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস
৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস  © টিডিসি ফটো

পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে এর মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক একটু ভিন্ন। এর মধ্যে নিহিত থাকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও শাসন। একজন ছাত্রের ভালো লেখাপড়ার পেছনে তার অভিভাবকের ও শিক্ষকের গুরুত্ব সমান। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও গভীর হওয়া প্রয়োজন। এক জন আদর্শ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ভূমিকায় কাজ করেন। সঠিক পরামর্শ দিয়ে জীবন গঠনে ভূমিকা রাখেন। আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস। একজন ছাত্রের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এসব নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাবিপ্রবি  প্রতিনিধি রিয়া মোদক-

একজন প্রকৃত শিক্ষকই ধারাবাহিকভাবে একজন ছাত্রকে সহজ থেকে কঠিনের দিকে, জানা থেকে অজানার দিকে, জ্ঞানের বিন্দু থেকে নিয়ে যান জ্ঞানসমুদ্রের দিকে। প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করা শিক্ষার্থীদের অন্ধকার হতে আলোর পথে নিয়ে যাওয়া এবং বাস্তব ও সত্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। শিক্ষকের আরেকটি পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। কিন্তু কতিপয় শিক্ষকের অপকর্ম, অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি, ছাত্র হয়রানি গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদাকে ম্লান করছে। এছাড়া ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যতদ্রুত সম্ভব শিক্ষকদের এই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে, সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তা না হলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে একটি প্রজন্ম, একটি জাতি তথা একটি দেশ। 
[আমজাদ হোসেন হৃদয়, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]

আমার কাছে আদর্শ শিক্ষক - শিক্ষার্থী সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, স্নেহ, শাসন এবং সহযোগিতার মিশ্রণ। এখানে নতুন চিন্তাভাবনা প্রকাশে, প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উপহাস বা বিচারের ভয় থাকবে না তারা ভুল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। তেমনি ভাবে শিক্ষার্থীদের থাকবে জানার আগ্রহ এবং সক্রিয়ভাবে শেখার প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকা তার পাশাপাশি থাকবে তাদের শিক্ষকদের অগাধ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক শুধুমাত্র শ্রেণীকক্ষের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সৎ, দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করবেন। কোনো অর্জনের স্বীকৃতি দেওয়ার সাথেসাথে ব্যার্থ হলে তাকে আরোও উৎসাহ প্রদান করতে হবে। শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে একাডেমিক এবং ব্যাক্তি জীবনের সমস্যাগুলো শিক্ষকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি এই সম্পর্কের মাঝে থাকবে স্পষ্ট একটি সীমানা, যা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সুস্থ শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্কের মূল উপাদান
[মুহিব্বুল্লাহ, শিক্ষার্থী,খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়]

বলা হয়, যে জাতির কাছে শিক্ষা নেই, সেই জাতি সম্পদের দিক দিয়ে যতই ধনী হোক না কেন তারা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আর এই শিক্ষাদানের মহৎ কাজটি জাতির মাঝে ছড়িয়ে দেন  শিক্ষকগণেরা। অর্থাৎ একটি জাতিকে যতটুকু  শিক্ষা দিবে বিশ্বের দরবারে সে জাতি ততটুকুই উপস্থাপন করতে পারবে। 

প্রকৃত শিক্ষাদানের কাজটি হয় ছাত্র-শিক্ষকের মধ্য দিয়ে। ছাত্ররা এই প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখে, অর্জন করতে শিখে সাফল্যের। একজন শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক যত বেশি অটুট থাকবে শিক্ষার গুরুত্বতে ছাত্ররা তত বেশি আগ্রহ পাবে। সম্মান, শ্রদ্ধা, শাসন- অনুরাগ মিলিয়ে তৈরি হয় ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক। একজন সন্তান এবং পিতার সম্পর্ক যেমন বন্ধুসুলভ হয় ঠিক তেমনি ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কও বন্ধুসুলভ হওয়া প্রয়োজন। কেননা ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের পিতার সমতুল্য মনে করেন। একজন শিক্ষক ছাত্রদের শুধু শিক্ষাই দেন না পাশাপাশি নৈতিকতাবোধ, মূল্যবোধ এবং আদর্শ মানুষ হতেও শেখায়। সুতরাং ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক বন্ধুসুলভ হওয়া প্রয়োজন। তবেই জাতি সাফল্যের শিখরে পৌছাবে।
[ইভা আক্তার, শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়]

বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের মাঝে কেবল ফরমাল সম্পর্ক থাকা উচিত হয়। একঘেয়েমি ক্লাস আর দূরত্ব রাখা স্বভাবের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা ভুলে যায়। আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে সম্পর্ক।সৌহার্দ্য-স্নেহ-ভালোবাসা-শ্রদ্ধা ও শাসনের মধ্য দিয়ে গড়ে তা টিকে থাকে অনেকদিন। শিক্ষকরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বুঝে যেন মোটিভেট করে, ভালো-খারাপ ছাত্র বিবেচনা না করে যেন কারো প্রতি আন্তরিকতার কমতি না রাখে এটাই শিক্ষার্থীদের চাওয়া।
[মাহবুব আলম রিয়াজ, শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়]


সর্বশেষ সংবাদ