সারাবিশ্বে তাপদাহে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ মানচিত্র প্রকাশ ইউনেস্কোর

জিম্বাবুয়ের একদল শিক্ষার্থী
জিম্বাবুয়ের একদল শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

২০২৪ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত অতিমাত্রায় গরমের কারণে বার বার স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে। মার্চের শেষের দিকে, দক্ষিণ সুদান ২২ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশে রেকর্ড করা তাপমাত্রার কারণে ৩ কোটি শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করে বার বার স্কুল বন্ধ করতে হয়। একই সাথে, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার খরার কারণে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং শিক্ষাদানের পরিবেশ খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নতুন মানচিত্র প্রকাশের মাধ্যমে ঝুকিঁ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)।   

জলবায়ু স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য

এই উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়া এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলো শিক্ষা খাতের পরিকল্পনা, বাজেট এবং কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়াও, জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে।

উদ্যোগের প্রথম দেশ জিম্বাবুয়ে

খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের মুখোমুখি হওয়া জিম্বাবুয়ে এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম ৩৫টি দেশের মধ্যে একটি, যারা এই উদ্যোগের কারিগরি সহায়তা পাচ্ছে। 

এই উদ্যোগের আওতায় কর্মশালা চালু রয়েছে। এই কর্মশালাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে বিদ্যমান তথ্যাদি বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শিক্ষা কার্যক্রমকে কীভাবে টেকসই করা যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলবে।

কারিগরি সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন পরিবেশ, পানি ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের মতো অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করছে। এভাবে শিক্ষার মাধ্যমে এবং শিক্ষার মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

এই ক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালাগুলোর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা জলবায়ু ও শিক্ষা বিষয়ক তথ্য নিয়ে কাজ করার এবং বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর ফলে কোন এলাকা খরা-প্রবণ, সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করা যাচ্ছে।  

এই কারিগরি সহায়তা জিম্বাবুয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়া এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলো তাদের নীতি ও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার সক্ষমতা তৈরি করছে।

বিশেষ মানচিত্র

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চিহ্নিত করতে বিশেষ মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে। এই মানচিত্র তৈরিতে ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের বৃষ্টিপাত, খরা, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার মাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।  

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় জিম্বাবুয়ে সরকারকে সহায়তা করার জন্য, আইআইইপি (আন্তর্জাতিক শিক্ষা পরিকল্পনা ইনস্টিটিউট) জলবায়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রবণতা এবং ২১০০ সাল পর্যন্ত এর সম্ভাব্য পরিবর্তন উল্লেখ করে ভৌগোলিক বিশ্লেষণ ও চিত্রায়নের একটি ধারাবাহিক সিরিজ তৈরি করেছে।

এই মানচিত্রগুলো কীভাবে তৈরি করা হল এবং কীভাবে এগুলো ব্যবহার করা হয়

আইআইইপি জিম্বাবুয়ে সরকারকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সহায়তা করার জন্য বিশেষ ধরনের মানচিত্র তৈরি করেছে।  এই মানচিত্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক তথ্য এবং আগামী সম্ভাব্য পরিবর্তন চিত্রিত করে।

তথ্য সংগ্রহ: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কুলের অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করে আইআইইপির ভৌগোলিক বিশেষজ্ঞরা ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতিটি প্রশাসনিক সীমানা এবং স্কুলের জন্য মাসিক বৃষ্টিপাত, খরা, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

তথ্য বিশ্লেষণ: সংগ্রহ করা তথ্য পরে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাইথন স্ক্রিপ্টের সাহায্যে এই তথ্যগুলোকে গ্রাফ, টেবিল (এক্সেলে) এবং মানচিত্রে (কিউজিআইএস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে) রূপান্তরিত করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্য আন্তঃসরকারি জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (আইপিসিসি) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

মানচিত্রের ব্যবহার

এই মানচিত্রগুলো কীভাবে কাজে লাগানো হয়, সে সম্পর্কে জানা যাক।

দক্ষতা বৃদ্ধি: আইআইইপি দেশের সরকারি মন্ত্রণালয় এবং তাদের সহযোগী সংস্থাকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রবণতা ও সম্ভাব্য পরিবর্তন বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে এই মানচিত্রগুলোকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সে বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছে। 

জলবায়ু সহনশীল পরিকল্পনা: এই মানচিত্রের সাহায্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জিম্বাবুয়ে সহ বিভিন্ন দেশে কোন এলাকার স্কুলগুলো বর্তমানে বা ভবিষ্যতে জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে থাকবে, সেটা চিহ্নিত করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ-ভিত্তিক প্রতিরোধ, প্রস্তুতি এবং মোকাবিলা কৌশল তৈরি করতে পারে। এর ফলে জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা নিশ্চিত করা যাবে।

বৃষ্টিপাতের মানচিত্র: ১৯৭৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের স্কুলগুলোর আশেপাশের গড় মাসিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখায়। মানচিত্রে স্কুলের আশেপাশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়া এলাকাগুলি নির্দেশ করে।

খরার মানচিত্র: মানচিত্রটি ১৯৮০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি স্কুলের বছরের কতটা সময় খরার মধ্যে ছিল, তা দেখায়।

তাপ স্ট্রেসের মানচিত্র: মানচিত্রটি ২০২৪ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর জেলাগুলো কতটা সময় তাপ স্ট্রেসের মধ্যে থাকবে, তার একটি আন্দাজ দেয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence