টিটু মৃত্যুর চার বছর

বিচার হয়নি ঘাতকের, ভাল নেই পরিবার

তৌহিদুর রহমান টিটু
তৌহিদুর রহমান টিটু

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গাড়ি চাপা পড়ে মারা যান বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটু। এই ঘটনার দীর্ঘ চার বছর পার হলেও ঘাতক ড্রাইভারের বিচার হয়নি। এদিকে টিটুকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল পরিবার এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

চলতি বছরের নভেম্বরে টিটু মৃত্যুর চার বছর পূর্ণ হয়েছে। এই চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও টিটুর পারিবারিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে (টিটুর অবর্তমানে) তিন জনের লেখাপড়াসহ পরিবাবের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে টিটুর অসুস্থ বাবা মো: আব্দুল আজিজকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বেলেঘাট গ্রামের বাসিন্দা মো: আব্দুল আজিজ। তিনি পেশায় একজন কৃষক। পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনজনই পড়াশোনা করছেন। এদের মধ্যে একজন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, আরেকজন যশোর মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত এবং ছোট ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছে। মো: আব্দুল আজিজ বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্ত। যেখানে নিজের চিকিৎসার খরচই জোগাতে পারছেন না সেখানে পরিবার এবং সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াতো তাঁর জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। 

এদিকে টিটুর মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের কোনো একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকুরী দান এবং টিটুর নামে যেকোন একটি ভবনের নামকরণের আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। পরে এ ব্যাপারে একটি অঙ্গিকারনামাও করা হয়। কিন্তু আজ অবধি তার কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি।

আফরোজা আক্তার লাকি নামের টিটুর এক বোন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থোক বরাদ্দে (চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী চাকুরী) কর্মরত আছেন। গত তিন বছর ধরে তিনি এ থোক বরাদ্দে কাজ করলেও তাকে আজ পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হয়নি। এদিকে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

টিটুর পরিবারের সদস্যদের দাবি টিটুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভবনের নামকরণ করা হোক বা না হোক তার বোন আফরোজা আক্তার লাকির চাকুরীটি যেন স্থায়ী করে নেওয়া হয়। যাতে করে তাদের পরিবার কিছুটা হলেও ভালভাবে চলতে পারে।

এ বিষয়ে আফরোজা আক্তার লাকির সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘আমাদের স্বপ্ন ছিল টিটু একদিন শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবে। কিন্তু তা আর পূরণ হলো না। আমার বাবা এখন হার্টের রোগী। পরিবারের পরিবারের প্রধান চালিকা শক্তি সে। বর্তমান প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, যেন আমার চাকুরীটি স্থায়ী করে নেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য অধ্যাপক ড. এম শাহিনুর রহমান বলেন, ‘টিটুর মৃত্যুতে সত্যি আমরা মর্মাহত। এই মৃত্যুর মাধ্যমে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্যকে হারিয়েছি।’

টিটুর পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে এ ব্যাপারে যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেখানে আমার একাত্মতা থাকবে।’

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবাহী ভাড়ায় চালিত ঝিনাইদহগামী বাসে উঠার চেষ্টা করে। এসময় বাস চালক হঠাৎ বাসটি দ্রুত চালিয়ে নিয়ে গেলে সে বাসে উঠতে ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে সাগর পরিবহন নামের অন্য একটি বাস দ্রুতবেগে তার গলার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে শরীর থেকে গলা আলাদা হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় টিটু।

টিটু মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসে আগুন দেয়

 

এই ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা প্রধান ফটক ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর শুরু করে শিক্ষার্থীরা। টিটুর মৃত্যুর খবর পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সব শিক্ষার্থী এসে বিক্ষোভে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।

শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে থাকা ক্যাম্পাসের ভাড়া করা বাস ও মেডিকেল ভবনের পাশে বাসস্ট্যান্ডে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসগুলোতে আগুন দেয়। এর ফলে প্রায় ৪০টি বাস পুড়ে যায়। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর চালায়। এতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

পরে তারা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে ও কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর গুলী, রাবার বুলেট, লাঠি চার্জ করে। এ ঘটনায় ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গাড়ি পোড়ানোর ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫’শ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ 'শ জনকে আসামি করা হয়। তবে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence