কুর্মিটোলা হাসপাতালে শয্যা-সংকট, বিড়ম্বনায় নতুন রোগীরা
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ PM , আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ PM

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শয্যা-সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন আসে এই হাসপাতালে। শয্যা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন তারা। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ কষ্ট করে অপেক্ষা করেন শয্যার আশায়।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শয্যার বাইরে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ঘাটতির কারণে অনেক সময় রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়। এমনকি আইসিইউ বেড খালি না থাকলেও নতুন রোগী ভর্তি করা সম্ভব হয় না।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) কুর্মিটলা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনকালে এন তথ্য জানা যায়।
এদিকে পটুয়াখালী থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসার আশায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন মো. কনু মোল্লা। তিনি জানান, ‘আমি পিত্তথলির সমস্যার পাশাপাশি চোখের সমস্যায় ভুগছি। এই দুই সমস্যার চিকিৎসার জন্যই এই হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু আজ আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলল এখন দেখানো সম্ভব নয়। দুই মাস পরে এসে আবার দেখাতে হবে। আমি তো মাত্রই এসেছি, এখনই ফিরে যেতে হচ্ছে।’
চোখের সমস্যার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চোখের সমস্যা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত। এ কারণেই মূলত এখানে এসেছিলাম। কিন্তু সেটারও কোনো চিকিৎসা আজ পাওয়া গেল না। বেড ফাঁকা নাই, তাই চলে যেতে হচ্ছে।’
উত্তরা থেকে আসা মোহাম্মদ শরীফ জানান, ‘আমি নাক, কান ও গলা বিভাগে এসেছি। নাকের সমস্যার কারণে চারটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সবাই একই কথা বলেছে। আমার নাকের ভেতরে মাংস বেড়ে টিউমারের মতো হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে অনেক খরচ হয়। তাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ডাক্তার দেখিয়েছি, তারা ভালোভাবে পরীক্ষা করে ওষুধ দিয়েছেন এবং নিয়মিত সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন। ডাক্তারদের ব্যবহার খুবই ভালো লেগেছে। তবে আমি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন ভর্তি করেনি জানি না।’
এ নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নীহার রঞ্জন নন্দীর কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আমরা সীমিত পরিসরে কাজ করছি এবং বিদ্যমান সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে রোগীদের সেবা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
তিনি জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে প্রায় ২০০ জন রোগীর জন্য একজন চিকিৎসক রয়েছেন। তবু চিকিৎসকরা দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে সময় আমরা উল্লেখযোগ্য সেবা দিতে সক্ষম হয়েছিলাম। এখনো আমরা যতটা সম্ভব নিখুঁত ও মানসম্মত চিকিৎসা প্রদানের চেষ্টা করে থাকি।’
তবে রোগীদের সন্তুষ্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টির মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, যা ব্যক্তি ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।’
উপপরিচালক বলেন , ‘আমাদের হাসপাতালের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন জনবল সংকট তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে এখানে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফের সংকট রয়েছে। তবে আমাদের এখানে মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি যথেষ্ট। এই হাসপাতালের রোগী বেশি ওভারলোড।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আশপাশে বিশাল জায়গা। এই একমাত্র কারণে এখানে অনেক রোগী আসে। প্রতিদিন এখানে বহির্বিভাগে ৬ থেকে ৭ হাজার রোগী আসেন বলে জানান তিনি।
এটি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ১ হাজার ২০০-এর অনুমোদন আছে। কিন্তু বর্তমান শয্যার সংখ্যা হলো ১ হাজার।
ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ‘হাসপাতালের শয্যা-সংকট একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের এখানে শয্যার বাইরে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করার সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় অনেক সময় বাধ্য হয়ে রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়। এমনকি আইসিইউ বেড খালি না থাকলে, সেই ক্ষেত্রেও ভর্তি করা সম্ভব হয় না।’
হাসপাতালের সার্বিক সেবাদানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি জেনারেল হাসপাতাল, তাই এখানে প্রায় সব ধরনের রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আমরা চেষ্টা করি যতটা সম্ভব রোগীদের এখানেই চিকিৎসা সেবা দিতে। কেবল শয্যা বা বিশেষ কোনো সুবিধার অভাবে রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হয়।’
জনবল ও অন্যান্য কাঠামোগত সংকট প্রসঙ্গে ডা. নন্দী বলেন, ‘ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ সংকটের বিষয়টি আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। কিছু উন্নয়ন প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এবং বাকিগুলোও ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে।’