যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

১০ মাস ধরে বেতনহীন শিক্ষকরা, ক্লাস হয় না নিয়মিত

যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বেতন না হওয়ায় ঠিকমতো ক্লাস নিচ্ছেন না শিক্ষকরা। শিখন ঘাটতিতে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী। যদিও অধ্যক্ষের দাবি, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। ব্যয় কমিয়ে বেতন দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা না মানা, প্রশাসনিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ অনেক পুরোনো। নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হলেও দুর্নীতি থামেনি। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা এবং স্কুলের টাকায় মামলা পরিচালনার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। স্কুলের ফান্ডের টাকায় মামলা পরিচালনার কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

‘এতদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকলে শিক্ষকরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি কেন? বেতন না হলে তারা পাঠদানে অমনোযোগী হবেন এটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’—অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, চেয়ারম্যান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড

জানতে চাইলে মরিয়ম বেগম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে মামলা পরিচালনার বিষয়টি সত্য নয়। আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে আসেন। এসে বক্তব্য নেন। আমি ফোনে বক্তব্য দিতে পারবো না।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠনটিতে বর্তমানে দেড় শতাধিক শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন এমপিওভুক্ত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখা মিলিয়ে নিয়ে ১২০ জন নন-এমপিও শিক্ষক রয়েছেন। এই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে। অর্থাৎ ভর্তি ফি, টিউশন এবং অন্যান্য আয় থেকে। তবে গত প্রায় ১০ মাস ধরে নন-এমপিও শাখার শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখানো হয়। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সবশেষ বেতন পেয়েছিলেন নন-এমপিও শিক্ষকরা।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষক মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেন মরিয়ম বেগম। এ ছাড়া গত ২৭ জানুয়ারি হোসনে আফরোজা শিল্পী নামে আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দুইটি মামলা পরিচালনার যাবতীয় ব্যয় স্কুলের ফান্ড থেকে ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে। মামলা দুইটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

‘অভিভাবকরা যে অভিযোগ করেছেন, তার কিছুটা হলেও সত্যতা রয়েছে। প্রাইভেট না পড়িয়ে তো উপায় নেই। শিক্ষকদের প্রায় ১০ মাস ধরে বেতন বন্ধ। পরিবার নিয়ে তারা চলবেন কীভাবে? শিক্ষকদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। বেতন আমাদের অধিকার। কিন্তু সেটি আমরা দাবি করতে পারছি না। বেতন দাবি করলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইল ফোনে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়।’—প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক

শিক্ষক নিয়মিত বেতন না হওয়ায় শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চেয়ে ব্যক্তিগতভাবে পড়ানোয় প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে হয়রানি করার অভিযোগও উঠেছে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অভিভাবকরা অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুলে অনেক সমস্যা রয়েছে। সময় মতো ক্লাস না হওয়া এর মধ্যে অন্যতম। অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম এবং মনিরুজ্জামানের রেষারেষির কারণে প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সন্তানকে কোথাও নিয়ে যেতে পারছি না। সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তিত।’

প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার এক বলেন, ‘অভিভাবকরা যে অভিযোগ করেছেন, তার কিছুটা হলেও সত্যতা রয়েছে। প্রাইভেট না পড়িয়ে তো উপায় নেই। শিক্ষকদের প্রায় ১০ মাস ধরে বেতন বন্ধ। পরিবার নিয়ে তারা চলবেন কীভাবে? শিক্ষকদের এই কষ্ট দেখার কেউ নেই। বেতন আমাদের অধিকার। কিন্তু সেটি আমরা দাবি করতে পারছি না। বেতন দাবি করলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইল ফোনে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়।’

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এতদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকলে শিক্ষকরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি কেন? বেতন না হলে তারা পাঠদানে অমনোযোগী হবেন এটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রতিষ্ঠানের অর্থে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার কারো নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের সুযোগ কারো নেই। অভিযোগ পেলে এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence