দারিদ্র্য-বাল্যবিবাহসহ নানা কারণে বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহ নেই ৪৮ শতাংশ শিশুর

কভিডসহ নানা কারণে শিক্ষালয়গুলো থেকে ঝরে পড়ছে শিশুরা
কভিডসহ নানা কারণে শিক্ষালয়গুলো থেকে ঝরে পড়ছে শিশুরা  © ফাইল ছবি

দেশের প্রচলিত আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় আর্থিক কষ্ট বা সীমাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয় বিমুখ হচ্ছে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। বর্তমানে দেশের প্রাথমিক শিক্ষালয়গুলোয় ফিরে আসতে অনীহা রয়েছে এমন শিশুদের হার ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর মাধ্যমিকে পর্যায়ে এ হার ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ বলে উঠে এসেছে ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। এতে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দেশীয় শিক্ষার নানা সংকট, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে গণসাক্ষরতা অভিযান। এতে সহযোগিতা করেছে ক্লিয়ার ও এফসিডিও। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আর্থিক কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে—দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৬ দশমিক ৬ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু ঝরে পড়ে আর্থিক কারণে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তন থেকে তোলা। ছবি: টিডিসি ফটো।

এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন-২০২৩ এর এবারের এ প্রতিবেদনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, জেলা শহর এবং সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বসবাস করা শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার মোট ১২টি কারণ খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা।

এর মধ্যে আর্থিক কারণ ছাড়াও রয়েছে—গৃহকর্মে সাহায্য করা বা পারিবারিক আয়বর্ধক কাজে জড়িত থাকা অথবা শিশু শ্রম, দীর্ঘায়িত কভিড-১৯ অতিমারি, বাল্যবিবাহ, শিক্ষায় ছাত্রদের অনীহা অথবা মেয়েদের লেখাপড়ায় অনীহা, স্কুলের সময়সূচি, স্কুলের দূরত্ব, দুর্বল পরিবহণ ব্যবস্থা, ভাষার সমস্যা এবং স্কুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে শিক্ষার্থীপ্রতি বছরে পরিবারের ব্যয় ১৪ হাজার, মাধ্যমিকে ২৭

কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গৃহকর্মে সাহায্য করা বা পারিবারিক আয়বর্ধক কাজে জড়িত থাকা অথবা শিশু শ্রমের কারণে ঝরে পড়ছে প্রাথমিকে ১৩ দশমিক ৭ এবং মাধ্যমিকের ঝরে পড়াদের ২১ দশমিক ১ শতাংশ শিশু। এছাড়াও দীর্ঘায়িত কভিড-১৯ অতিমারিতে প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৩ এবং মাধ্যমিকের ২০ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিল ঝরে পড়াদের দলে। তাদের সাথে বাল্যবিয়ের কারণে যুক্ত হয়েছে প্রাথমিকের ৩ দশমিক ৯ এবং মাধ্যমিকের ৩৯ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থী।

এডুকেশন ওয়াচে এবারের প্রতিবেদনে প্রাপ্ত প্রধান অনুসন্ধানের মধ্যে রয়েছে—শিশুদের স্কুলে পড়ার অবস্থা এবং ড্রপআউট, মহামারি পরবর্তী স্কুল চ্যালেঞ্জগুলির সাথে মোকাবেলা করা, শিশুদের শিক্ষার জন্য পারিবারিক অর্থনৈতিক বোঝা, শিক্ষক, প্রযুক্তি এবং শেখার ক্ষতি এবং পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ, কি করা হয়েছিল এবং করা যেত, শিক্ষা কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ।

আরও পড়ুন: ভাগ অংশের সমাধান পারে না প্রাথমিকের ৯৫% শিশু

এছাড়াও এবারের প্রতিবেদনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেশের শিক্ষায় চলমান সংকট সমাধানে বেশকিছু সমাধান তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—অতিরিক্ত ক্লাস, দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের শেখন প্রক্রিয়া সহজতর করা, অতিরিক্ত ক্লাস পরিচালনা, অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি, হোম ভিজিট এবং অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ ও অভিযোজন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মতো অতিরিক্ত কাজ করা শিক্ষকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা করার প্রস্তাব।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩ এর মুখ্য গবেষক ড. মনজুর আহমদ বলেন, ২০২২ সালের পর চার দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রাথমিকে এবং ছয় শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে নেই। সরকারের যে ঝরে পড়ার হিসাব, এটা অনেকাংশে তার অতিরিক্ত। সে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দ্বিতীয় শ্রেণিতে এত বেশি ঝরে পড়ার কথা না।


সর্বশেষ সংবাদ