নিবন্ধনে সাড়া ৪৩টির, ১২৪ ইংরেজি মাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বোর্ড

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড  © লোগো

বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত দেশের ইংলিশ মিডিয়াম (ইংরেজি মাধ্যম) স্কুলগুলোর মধ্যে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়ে দফায় দফায় সময় দিয়েও প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়ায় এমন উদ্যোগ গ্রহণের কথা ভাবছে সরকারের এই সংস্থাটি। বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে নিবন্ধনহীন অথবা নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়েছে— এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বোর্ডের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। বোর্ডের বেঁধে দেওয়া ওই সময় শেষ হয়েছে গত বছরের ১৩ অক্টোবর।

আরও পড়ুন: আইন ও নীতিমালা ছাড়াই চলছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা

এরপর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু রাখা রাখলেও পেরিয়ে গেছে ৩ মাস। যদিও এর মধ্যে বোর্ডের আহ্বানে সাড়া দেয়নি খুব বেশি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বোর্ডের তালিকাভুক্ত ১৬৭টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করেছে মাত্র ৪৩টি প্রতিষ্ঠান। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই থেকে যাচ্ছে তদারক সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

এবার বোর্ডের কাছে নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ১৮টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এর বাইরে নতুন করে নিবন্ধনের আবেদন করেছে ১৭টি এবং সাময়িক শিক্ষাক্রম পরিচালনার আবেদন জানিয়েছে ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বোর্ড তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, শিক্ষাক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সক্ষমতাসহ প্রয়োজনীয় বিষয়াদি বিবেচনাপূর্বক নিবন্ধন অনুমোদন বা বাতিল করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

এর মধ্যে নতুন করে নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড স্কুল, গুলশান ইন্টা. স্কুল, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল, ইবেনেজার ইন্টা. স্কুল, দি নিউ স্কুল ঢাকা, হার্ডকো ইন্টা. স্কুল, নাইস ইন্টা. স্কুল, অক্সফোর্ড ইন্টা. স্কুল, ইউনিভার্সাল টিউটোরিয়াল, সানবিমস, হিড ইন্টা. স্কুল, ডিপিএস এসটিএস, জিপিএস ইন্টা. স্কুল এবং মানারাত ইন্টা. স্কুল।

আরও পড়ুন: অনিবন্ধিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বন্ধের হুঁশিয়ারি

আর সাময়িক শিক্ষাক্রম পরিচালনার জন্য বোর্ডের কাছে অনুমোদন চেয়েছে সেলিম ইউজডম স্কুল, অর্কিড ইন্টা. স্কুল, জুভেনাইল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (শাখা), সেইন্ট যোসেফ, স্প্রিংডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, তানজিমুল উম্মাহ ইন্টা. তাহফিজুল স্কুল, স্টেম এবং গ্লেনরিচ ইন্টা. স্কুল।

বোর্ডের চিঠির জবাবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে পেনফিল্ড স্কুল ঢাকা, দি রেডিয়াস ইন্টা. স্কুল, প্রিমিয়ার স্কুল ঢাকা, ড্যাফোডিল ইন্টা. স্কুল, চিটাগাং গ্রামার স্কুল, বাচহা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, গ্রেস ইন্টা. স্কুল, স্কুল এজ, এস এফ এক্স গ্রিন হেরাল্ড ইন্টা. স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টা. স্কুল ঢাকা, লর্ডস ইন্টা. স্কুল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টা. স্কুল, কানাডিয়ান ম্যাপল ইন্টা. স্কুল, খালেদা রশিদ এডুকেয়ার স্কুল, অ্যাভেরোস ইন্টা. স্কুল এবং গাইডেন্স ইন্টা. স্কুল।

বোর্ড বলছে, ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন গ্রহণ করার পর তারা সেটি নবায়ন করে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই অনিবন্ধিতই থেকে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বোর্ড থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন না নিয়েই পাঠদান করছে। ফলে নিবন্ধন না থাকা ও অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না বোর্ড। সেজন্য প্রয়োজনে অবৈধ ও অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বোর্ডের পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন: অনুমোদন নেই অর্ধেকের বেশি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের

ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা সাক্ষরিত ওই চিঠির নির্দেশনায় তখন বিদ্যালয়গুলোকে জানানো হয়েছিল, সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন বা নিবন্ধন নবায়ন করা না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাময়িক নিবন্ধন অথবা নিবন্ধন প্রত্যাহার করা হবে।

নির্দেশনায় বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেসরকারি স্কুল-সমূহের রেজিস্ট্রেশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ জুনিয়র ক্যামব্রিজ, ক্যামব্রিজ (‘ও’ লেভেল) এবং সিনিয়র ক্যামব্রিজ (‘এ’ লেভেল) প্রতিষ্ঠান যা সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হতে নিবন্ধন করতে হবে। একই বিধিমালার ৩ ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন-ভিন্ন বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত কোন বেসরকারি স্কুল স্থাপন বা প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত হতে পারবে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বিধিমালা মোতাবেক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট হতে নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উক্ত নির্দেশনার আলোকে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করলেও কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করা হতে বিরত থাকায় বিধিমালার আবেদন ফরম ‘ক’ অনুযায়ী তথ্যাবলি পূরণপূর্বক নির্ধারিত ফি-সহ আবেদনের অনুরোধও জানানো হয়েছে ওই নির্দেশনায়।

একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ইআইআইএন নম্বর অনুযায়ী ফি প্রদান, বিধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধন সনদের শর্ত মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটি গঠন, মাসিক বা বছরে শ্রেণিভেদে আদায়কৃত টিউশন ফি, ভর্তি ফি, খেলাধুলা ফি, টিফিন ফি, মুদ্রণ ফি এবং অন্যান্য ফি এর পরিমাণ ও বিবরণ ইত্যাদি বিষয়ে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট উল্লেখ-সহ অবহিত করার বিধান অনুযায়ী তা প্রতিপালনেরও আহ্বানও ছিল তদারক সংস্থাটির।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা’র কাছে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের জন্য চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান সবকিছু নিয়ম মতো করে, তারাই সাড়া দিয়েছে। এ সংখ্যা খুবই কম। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক করবো। প্রতিষ্ঠানগুলো বোর্ডের কথা না শুনলে আমরা তা বন্ধ করে দেবার মতো কঠোর ব্যবস্থাও নিতে পারি।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত দুটিসহ ১৩৯টি। এর মধ্যে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেলের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ এবং ৯২টি। এ ছাড়াও জুনিয়র স্কুল রয়েছে ১৫টি। তবে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএমএসএবি) বলছে, দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫০ এর বেশি। তবে ঢাকা বোর্ড বলছে, তাদের কাছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে—এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৬৭।


সর্বশেষ সংবাদ