ডিপ্লোমা হোল্ডাররা টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত: বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিবৃতি
- রুয়েট প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৬ PM , আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:১০ AM

সম্প্রতি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটরা ৯ম গ্রেডের টেকনিক্যাল চাকুরিতে ডিপ্লোমা হোল্ডারদের জন্য কোটা সুবিধা ৩৩ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা ও বিশেষ সুবিধার প্রতিবাদ জানিয়ে আজ শনিবার (২২ মার্চ) বিবৃতি প্রদান করেছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিবৃতিতে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কোটা ও বিশেষ সুবিধার দাবির বিরুদ্ধে আমাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও দাবি জানাচ্ছি। এই বিষয়টি আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু একটি দাবি নয়, বরং মেধার সঠিক মূল্যায়ন, ন্যায্য প্রতিযোগিতা এবং দেশের প্রকৌশল খাতে সমতার সংগ্রামের প্রশ্ন।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সেই সময় শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে মেধার ভিত্তিতে সমান সুযোগের দাবি তুলেছিল। এই আন্দোলন কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন হয়ে উঠেছিল, যার ফলে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটে এবং একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত কোটা ও বিশেষ পদোন্নতির দাবি এই আদর্শের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আমরা, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, এই দাবিকে অযৌক্তিক, বৈষম্যমূলক এবং মেধার প্রতি অবিচার হিসেবে দেখছি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং একটি কারিগরি শিক্ষা, যা টেকনিশিয়ান হিসেবে দক্ষতা অর্জনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি প্রকৌশলী হওয়ার পূর্ণাঙ্গ যোগ্যতা দেয় না। ডিপ্লোমা হোল্ডাররা টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত, এবং তাদের পেশাগত ভূমিকা ও মর্যাদা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সমান নয়। তবুও তারা সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রকৌশলী পদে নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নামের আগে 'ইঞ্জিনিয়ার' শব্দটি ব্যবহারের দাবি করে আসছে। এটি মেধার সঠিক মূল্যায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রকৌশল পেশার গৌরবকে ক্ষুণ্ন করে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই— 'No B.Sc. Engineering Degree, No Engineer'।
বিবৃতিতে তারা বলেন, নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ছিল মেধার ভিত্তিতে সমতা ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে বৈষম্য মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করা। সেই আন্দোলনে শত শত শিক্ষার্থী তাদের জীবন দিয়েছেন, যাতে কোটা ব্যবস্থার মতো বৈষম্যমূলক প্রথা বিলুপ্ত হয় । ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের এই দাবি সেই শহিদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। তাই আমরা দেশের সকল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান করে দাবি করছি যে, ৯ম গ্রেডের 'সহকারী প্রকৌশলী' পদে শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেওয়া হোক এবং এই পদে ডিপ্লোমা হোল্ডারদের জন্য ৩৩% 'পদোন্নতি কোটা বাতিল করা হোক, ১০ম গ্রেডের 'উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ১০০% ডিপ্লোমা কোটা বাতিল করে এটি বিএসসি ও ডিপ্লোমা—সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। ডিপ্লোমা হোল্ডাররা ১০-২০ গ্রেডে টেকনিশিয়ান হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন এবং আইন করে নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিপ্লোমা হোল্ডাররা নামের আগে 'ইঞ্জিনিয়ার' শব্দটি ব্যবহার করতে না পারেন।
সরকারের কাছে আরও আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হোক। এই বৈষম্যমূলক প্রথা দেশের প্রকৌশল খাতে মেধার প্রতিফলন ঘটতে দেয় না। আমরা চাই একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা, যেখানে সবাই তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এটি কেবল প্রকৌশলীদের জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও অপরিহার্য।