হাবিপ্রবিতে সেশনজট, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।  © সংগৃহীত

সেশনজটের কারণে বিপাকে পড়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনুষদে বিভাগ ভিত্তিক তীব্র সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ছয় মাসে এক সেমিস্টার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সময় লাগছে আট থেকে নয় মাস। ফলে চার বছরের স্নাতক শেষ করতে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগছে। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারনে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ছয়টি ব্যাচ (১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩) একসাথে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যায়নরত রয়েছে। তবে ২১, ২২ ও ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই তিনটি ব্যাচে করোনাজনিত ভর্তি বিলম্ব ছাড়া তেমন কোন জট নেই।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, একাডেমিক রুটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি 'ফর্মালিটিজ পেপার' মাত্র। রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরীক্ষা নিতে না পারায় সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক সংকট, বিভিন্ন বিভাগে ক্লাসরুম সংকটের কারনেও বেড়েছে সেশনজট। করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তার বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেকটাই হতাশ। 

এদিকে নির্ধারিত সময়ে কোর্স শেষ না হওয়ার কারনে শিক্ষার্থীদেরকে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থান করতে হচ্ছে। ফলে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ বহন‌ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সেশনজটের ফলে পরিবহন সংকট, আবাসিক সংকটসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সেশনজটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই অনুষদের ডিন অধ্যাপক মেহেদি ইসলাম বলেন, করোনার পূর্ববর্তী ব্যাচগুলো অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। তাদের এগিয়ে নিতে চারমাসের সেমিস্টার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যে একাডেমিক রুটিন দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো কয়েকদিনের গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে। করোনার ক্ষতি সহজেই নিরসন করা সম্ভব নয়। তবে আমরা সর্বদা চেষ্টায় আছি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করা যায়।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. নাজিম উদ্দীন বলেন, সেশনজট নিরসনের জন্য আমরা করোনার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। জট সৃষ্টির মূখ্য কারণ হচ্ছে শিক্ষক সংকট এবং অপর্যাপ্ত ক্লাস রুম। এছাড়াও একটি সমস্যা সেশনজটে ভুমিকা রাখছে, সেটি হলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে জমা দেবার প্রতি দায়িত্বহীনতা। অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যারা নির্দিষ্ট সময়ে খাতা মূল্যায়ন করে জমা দেন না। ফলে একটি বা দুইটি কোর্সের ফলাফলের জন্য সম্পূর্ণ রেজাল্ট প্রকাশ করতে দেরি হয়ে যায়। যার প্রভাব পরবর্তী ব্যাচ গুলোতেও পরে।

তিনি আরো বলেন, শুধু সেমিস্টার শেষ করলেই হবে না। লেভেল ১ এবং লেভেল ২ এ যে পড়াগুলো থাকে, সেগুলো অত্যন্ত বেসিক পড়াশোনা। এগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত না করেই পরীক্ষা দিয়ে পার হয়ে গেলে হবে না। বেসিক ভালো ভাবে গড়ে না উঠলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে ভোগান্তিতে পরতে হয়। এজন্য আমরা চাইলেও লেভেল ১ ও ২ এর কোর্সগুলোর ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নিতে পারি না। তবে লেভেল ৩ ও ৪ এ আমরা আরো দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করার প্রচেষ্টায় রয়েছি। মাননীয় উপাচার্য স্যার সেশনজট নির্মূলে অত্যন্ত তৎপর। বর্তমানে সব অনুষদেই প্রত্যেক সেমিস্টারে পূর্বের তুলনায় সেমিস্টার শেষ করতে গড়ে ২ থেকে ৩ মাস সময় কম লাগছে। আশা করি আগামীতে সেশনজট নিরসনে আমরা আরো অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ