২৩ বছরে পদার্পণ করলো বশেমুরবিপ্রবি
- বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০ AM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০২:২৩ PM
২০০১ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাসের মাধ্যমে জাতির পিতার জন্মভূমি গোপালগঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বশেমুরবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল আলম খানকে প্রকল্প পরিচালক নিযুক্ত করে গোপালগঞ্জে পাঠানো হয়। প্রকল্প পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন, জমি অধিগ্রহণ এবং জমি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেন।
২০০১ সালের ৮ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর একই বছরের ১৩ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯ জুলাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম. খায়রুল আলমকে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
এরপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ২০০৯ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজটি পুনরুজ্জীবিত করে।
২০১০ সালের ৫ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে নিয়োগ করেন এবং ২০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আইন-২০০১ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসআরও জারি করে। পরবর্তীতে ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে মোঃ জিল্লুর রহমান প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে পুনরায় ৪ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে চারটি অনুষদ; প্রকৌশল, বিজ্ঞান, ব্যবসা অধ্যয়ন এবং মানবিক অনুষদের অধীনে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক্স, গণিত, ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজি বিভাগ চালু করা হয়। প্রতি বিভাগে ৩২ জন করে মোট ১৬০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৭টি অনুষদের অধীনে ৩৩টি বিভাগে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য মতে, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নিয়োজিত রয়েছে ২৭২ জন শিক্ষক। এর পাশাপাশি ১১২ জন কর্মকর্তা ও ২৫১ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে চলছে বশেমুরবিপ্রবি।
৫৫ একরের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে একটি ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, ৫ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৫ তলা বিশিষ্ট ৩টি এবং ২ তলা বিশিষ্ট ২টি আবাসিক হল। এদের মধ্যে বিজয় দিবস হল, স্বাধীনতা দিবস হল ও শেখ রাসেল হল ছাত্রদের জন্য এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও শেখ রেহানা হল ছাত্রীদের জন্য।
এছাড়া রয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরি ভবন, ক্যাফেটারিয়া, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, মন্দির, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ২টি ডরমিটরি, ১টি পিএইচডি ডরমিটরি, কর্মচারীদের জন্য ৩টি স্টাফ কোয়ার্টার, পানি শোধনাগার। নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- মেইন গেট, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৭টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে- জয়বাংলা চত্ত্বর, আই+ওয়ান চত্ত্বর, ফুচকা চত্ত্বর, শেখ হাসিনা চত্ত্বর, শহীদ মিনার, আইআর চত্ত্বর, আইন চত্ত্বর, অর্ঘ্য চত্ত্বর, লিপুস ক্যান্টিন, বালুর মাঠ, সোবহান সড়ক, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, লেকপাড়, টিলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি, ডিবেটিং সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাব, বিএনসিসি, রোভার, শিল্প ও সাহিত্য সংঘের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যান্ড দল সাদাকালো, কূপজল-সহ বেশ কিছু সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪ বছর মেয়াদে এ পর্যন্ত ৩ জন উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ড. এম. খায়রুল আলমের দায়িত্বকাল শেষ হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোঃ নাসিরউদ্দিনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। তার ৪ বছরের দায়িত্বকাল শেষে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে নানা কারণে অপসারিত করা হয়। এরপর ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসেবে পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. একিএম মাহবুব।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গর্বিত জন্মস্থানে তারই নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মানুষের প্রত্যাশার পারদটা একটি উঁচুই। ২০০২ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ ৮ বছর বন্ধ না থাকলে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৩ বছরে পদার্পণের মাহেন্দ্রক্ষণটি হতে পারতো আরও বেশি সমৃদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘প্রত্যাশাতো অনেক আছে কিন্তু সেই তুলনায় প্রাপ্তি কম। আমি নিজেই সন্তুষ্ট না। আগে আমি এর চেয়ে বেশি গতিতে কাজ শেষ করেছি। তারপরও এখানে ৫-৭ বছরে যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল সেটা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রচেষ্টায়ই এই পরিবর্তন হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের লোকবল নেই। কর্মকর্তা নেই, শিক্ষক নেই।’
উপাচার্য বলেন, ‘ইউজিসি আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ দেয় না আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দিতে দেয় না। আমাদের শতাধিক শিক্ষক প্রয়োজন অথচ ইউজিসি আমাদের এক ডজন শিক্ষকের পোস্টও দেয়না।’
অবকাঠামোর সংকটের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, অবকাঠামোর ক্ষেত্রেও এখানে সুনির্দিষ্ট প্লান নেই। যে মেইন গেট ছয়মাসে হওয়ার কথা সেটি শেষ হতে এখন আরও ছয়মাস লাগবে, ম্যুরালের কাজ শুরুই হয়েছে কিছুদিন আগে। লাইব্রেরি আটভাগের একভাগ নির্মাণ হয়েছে অথচ প্রথম ফেজেই এটা পুরোপুরি শেষ হওয়া উচিত ছিল। এখন আমি চেষ্টা করব তৃতীয় ফেসে এটি শেষ করার। ক্যাফেটেরিয়া চালু করেছি তবে খাবারে আরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। ল্যাবসহ অন্যান্য অবকাঠামোর জন্য নতুন জায়গা অধিগ্রহণেরও কাজ চলছে।
সমাবর্তন আয়োজনের পরিকল্পনা আছে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি চেষ্টা করবো আগামী এক বছর বা আমার মেয়াদের মধ্যেই সমাবর্তন আয়োজন করার। এর জন্য অনেক কাজ করতে হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই এ উপলক্ষে একটা কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরুর চিন্তাভাবনা করছি।’