বঙ্গমাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর র‍্যাগিংয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক ছাত্রী

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ  © ফাইল ফটো

জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জয়াকে রুমে ডেকে নিয়ে র‍্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর এ জান্নাতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। র‍্যাগিংয়ের পর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে ওই শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গতকাল সোমবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নূরুন্নাহার বেগম হলের ২৩৪ নম্বর রুমে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে রুমের মেঝেতে পড়েছিলেন; এরপর তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বরারব একটি লিখিত অভিযোগের বিষয়টি জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, আমি জাকিয়া সুলতানা জয়া, ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার ফিশারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নূর এ জান্নাত আপু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন। পরে আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে গত রোববার দুপুর ২.৫০ মিনিটে হলে আসি। হলে প্রবেশ করার পর আমাকে সিএসি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আদর ভাইকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

কিন্তু উক্ত অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। পরদিন রোজ সোমবার সকাল ৯:৩০ মিনিটে আমাকে ও এনিকে (প্রথম বর্ষে ১ম সেমিস্টার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী) হলের ২৩৪ নম্বর রুমে যেতে বলা হয় এবং উনার সঙ্গে দেখা করে ক্লাসে ঢুকতে বলা হয়। পরে ক্লাস মিস দিয়ে আমি ও এনি হলে যাই।

আমাকে আবার ওই একই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে আমাকে আমার জুনিয়র শিক্ষার্থী এনির সামনে ১০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এর ১ ঘণ্টা পর একটু একটু জ্ঞান এলে শিক্ষার্থীরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়।

এ নিয়ে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আমাকে হলে যে বিষয়ের জন্য ডাকা হয়েছে আমি সে বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কেন আমাকে হলে নিয়ে এরকম মানসিক নির্যাতন করা হল, তা আমি জানি না। আমি অসুস্থ থাকার পরও বেশ কয়েকবার আমাকে হলে ডাকা হয় এবং সেখানে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে; ঘটনার এক পর্যায়ে সেখানে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। 

তিনি আরও জানান, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে আমি প্রক্টর বরাবর  লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি চাই বঙ্গমাতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা যেন দ্বিতীয়বার না ঘটে। 

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অভিযুক্ত যুগ্ম আহ্বায়ক নুর এ জান্নাতের কাছে কোন বিচার দেননি জানিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এনি বলেছেন, আমি নূরে জান্নাত আপু বা অন্য কারো কাছে কোন বিষয়ে বিচার দেইনি। সে দিনই হলে গিয়ে তাকে আমি প্রথম দেখি। এর আগে তাকে আমি চিনতামও না। হলে আমাকে এবং জয়া (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) আপুকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে জয়া আপু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমার পরীক্ষা থাকায় কিছুক্ষণ পর হল থেকে আমি চলে আসি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নূর এ জান্নাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী আদর তার নামে বাজে কথা ছড়ানো হয়েছে বলে আমার কাছে জয়ার নামে বিচার দেয়। এ নিয়ে আমি জয়াকে আমার রুমে ডেকে জিজ্ঞেস করার এক পর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর আমরা তাকে মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।

কোনো শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়ে বিচার করার অধিকার তার রয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই অভিযুক্ত নেত্রী বলেন, আমি তার একজন বড় বোন হিসেবে তাকে জিজ্ঞেস করতেই পারি। তার রুমমেট আমাকে জানিয়েছে তার আগে থেকেই এ রকম সমস্যা ছিল, সেজন্য সে অসুস্থ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান জানান, প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে নেওয়ার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং এ নিয়ে সে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তার অভিযোগ আমরা পেয়েছি; সে অভিযোগের বিষয়ে এখন তদন্ত চলমান রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ