সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যক্রম পেছাল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩৪ AM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩৪ AM
জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর কথা ছিল। কিন্তু তা শুরু করতে পারছেনা সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছিলেন। এ কার্যক্রম আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে চালু হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রনালয়ের একটি সূত্র বলছে।
পেনশন কার্যক্রম চালুর সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের কর্তাব্যাক্তিরা বলছেন, সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে যে অবকাঠামো দরকার তার কিছুই এখনও হয়নি। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা একটি পরিচালনা কমিটি দরকার। কমিটি পরিচালনার জন্য আলাদা একটি কার্যালয় স্থাপন দরকার। নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ এবং কার্যালয় স্থাপন করতে না পারায় এখন এটির কার্যক্রম জুলাই থেকে চালু করা যাচ্ছে না।
এদিকে আপাতত কাজ চালিয়ে নিতে গত ৫ জুলাই অর্থ বিভাগের বাজেট ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা উপবিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানকে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন একই উপবিভাগের আরেক অতিরিক্ত সচিব মো. গোলাম মোস্তফা। আরও সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ মাসে কোনোভাবেই কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব নয়। তবে আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বরে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
সর্বজনীন পেনশন কি?
৫০ বছরের অধিক বয়সীরাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর তারা আজীবন পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। চাঁদার পরিমান ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত।
প্রাথমিকভাবে এই স্কিমের আওতায় চারটি শ্রেণিকে টার্গেট করা হচ্ছে: বেসরকারিখাতের চাকরিজীবী, প্রবাসী বাংলাদেশি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অস্বচ্ছল ব্যক্তিসমূহ।
আরও পড়ুন: পায়ে হেঁটে হজ করতে মক্কা যাচ্ছেন কুমিল্লার আলিফ
অস্বচ্ছল ক্যাটাগরিতে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসরতদের রাখা হবে। তবে তাদের কিভাবে চিহ্নিত করা হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অতি-দরিদ্র হিসেবে সরকারি সুবিধাভুক্তদের এ ক্যাটাগরিতে রাখা হতে পারে। তাদের মাসিক চাঁদার হার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রিকশাওয়ালা, হকার, গৃহকর্মী, পথে পণ্যসামগ্রী বিক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অন্তর্ভুক্ত হবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যক্তিদের মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা হতে পারে।অন্যদিকে, বেসরকারিখাতের চাকরিজীবীদের চাঁদার হার সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ হতে পারে। এদের মধ্যে শুধু অস্বচ্ছলদের চাঁদায় ৫০ শতাংশ সহায়তা করবে সরকার। বাকিদের চাঁদায় সরকারের কোন অবদান থাকবে না।
পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্তরা তাদের চাঁদার বিপরীতে সরকার থেকে সুদ পাবেন। তবে এই সুদহার কতো হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে তা ব্যাংকের আমানতের সুদহারের চেয়ে বেশি, কিন্তু সঞ্চয়পত্রের বিদ্যমান সুদ হারের চেয়ে কিছুটা কম হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সুদহার নির্ধারণের হিসাব করছে মন্ত্রণালয়। আবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম দিয়েও পৃথকভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই সুদহার চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তারা।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় আছে ১৮-৫০ বছর বয়সী নাগরিকরা। প্রাসঙ্গিক আইনে ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হলেও, পরে বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে তাদেরকে এর আওতায় আনা হয়।
বিধিমালা অনুসারে, ৫০ বছরের অধিক বয়সীরাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে অন্যদের মতো ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন না তারা। বরং, ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর তারা আজীবন পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। অর্থাৎ, কেউ ৬০ বছর বয়সে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হলে, তিনি ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর ৭০ বছর বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন।