‘ঈদ বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য অভিশাপ’

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ছবি

কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি স্কুলের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মো. আসাদ। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সবাই যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত; তখন আসাদ রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। কেননা ঈদে মাত্র ৩ হাজার ১২৫ টাকা বোনাস পাবেন তিনি। এই অর্থ দিয়ে স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা কাকে ঈদের নতুন জামা কিনে দেবেন তা নিয়েই দুশ্চিন্তা তার।

আসাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ছোট বেলায় জানতাম ঈদ মানে খুশি আর ঈদ মানে আনন্দ। শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের পর ঈদের ২/৩ মাস আগে থেকেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে যায়। ঈদ আমাদের জন্য একটা অভিশাপ। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে বাবা-মা, ভাই-বোন, বউ-মেয়েকে কিছু না দিয়ে কীভাবে ঈদের দিন ঈদের নামাজে যেতে পারি? তারা ভাবে আমি একটা চাকরি করি। আমাদের জন্য ঈদ মানেই লজ্জা, অপমান, দুঃখ ভারাক্রান্ত দিন। ঈদ শিক্ষক সমাজের জন্য অভিশাপ বয়ে আনে ।’

শারমিন নিপা নামে আরেক শিক্ষক বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের যেই টাকা ঈদ বোনাস হিসেবে দেওয়া হয়, তার চেয়ে গ্রামীণ এলাকার বাৎসরিক কাজের লোকও ঈদের সময় অনেক বেশি টাকা বোনাস হিসেবে পায়। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ঈদের জামা-কাপড়ও পায়। ৩ হাজার ১২৫ টাকা ঈদ বোনাসের নামে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রহসন করার মতো।’

শাহ আলম বাদশা নামে এক শিক্ষক জানান, ‘সিকি উৎসব ভাতা দিয়ে বর্তমানে নিজের জন্য কেনাকাটা করলে মা-বাবা, বউয়ের হয় না! বউয়ের জন্য কিনলে মা-বাবা, আমি নিজে বাকি থাকি, মা-বাবার জন্য কিনলে বউ এবং আমি বাকি থাকি! বেতন-বোনাস মিলিয়ে সবার জন্য টুকটাক কেনাকাটা হলেও আমার নিজের জন্য আর কিছু কেনা হয় না।’

নাহিদ পারভেজ পাভেল নামে আরেক শিক্ষক জানান, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদার বৈষম্য অনেক বেশি। সামনে তরুণ প্রজন্ম শিক্ষক হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা যখন, তখন দূর দূরান্তে শিক্ষক জিন্দা লাশ হয়ে পরেছে। ৩ হাজার ১২৫ টাকা দিয়ে কীভাবে ঈদ পার করবো তা জানি না। নিজের জন্য কিছু কেনা হবে না। শিক্ষকদের এমন করুণ অবস্থায় রেখে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’

ওমর ফারুক বলেন, ‘ঈদ শিক্ষকদের জন্য গলার কাঁটা । ঈদ বোনাসের নামে যে সামান্য অর্থ দেওয়া হয়, তা না দেওয়াই ভালো। বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন বলে বোনাস পাইছো, আমাদের কিছুই দিলা না। একেবারে না দিলে বলা যেত আমাদের মত শিক্ষকদের ঈদে বোনাস হয় না।’

শুধু এই পাঁচ শিক্ষকই নন; বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত কয়েক লাখ শিক্ষক আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঈদ বোনাস পাবেন ৩ হাজার ১২৫ টাকা। এই টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে কীভাবে ঈদ উদযাপন করবেন তারা? প্রশ্ন রেখেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে। একই সঙ্গে সরকারি, আধা সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন চলতি মাসে দেওয়া হলেও বেসরকারি শিক্ষকরা এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাননি। বিষয়টি চরম ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারীরা।

যদিও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তবে এটি কার্যকর হতে পারে ঈদুল আজহা থেকে। এ ছাড়া উৎসব ভাতা কতটুকু বাড়ানো হবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’


সর্বশেষ সংবাদ