‘ফানুসের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলেছে আমার ব্যবসা, কিছুই করতে পারিনি’

এনামুল হক
এনামুল হক  © ছবি : সংগৃহীত

নতুন বছরের প্রথম প্রহরে সেই উল্লাসই কাল হলো এনামুল হকের জন্য। ৩১ ডিসেম্বর রাতে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ওড়ানো এক ফানুস পুড়িয়ে দিয়েছে তার ব্যবসার সম্বল, এখন তিনি ঋণের দায়ে দিশেহারা।

এনামুল হক বলেন, 'গুদামে ছয় লাখ টাকার ঝুড়ি ছিল। আর শেড (ছাউনি) করতে এক লাখ খরচ। চোখের সামনে দাউ দাউ করে মালগুলো (ঝুড়ি) জ্বলছে। কিছুই করতে পারলাম না।' সেই কষ্টে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি, শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জানা যায়, যাত্রাবাড়ীতে একটি কাঁচাবাজার আড়তে ব্যবস্থাপকের কাজ করেন তিনি। বেতন ২১ হাজার টাকা। পরিবার নিয়ে থাকেন মাতুয়াইলে। বাড়তি আয়ের জন্য চাকরির পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসার পথ বেছে নিয়েছিলেন এনামুল হক। মাতুয়াইলে বাসার কাছে ১২ হাজার টাকা আগাম দিয়ে এক বছরের জন্য একটি বাসার ছাদ ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আম, টমেটো পরিবহনে প্লাস্টিকের ঝুড়ি রাখার গুদাম করা হয়। বাঁশের কাঠামোর ওপর প্লাস্টিকের ত্রিপলের ছাদ ও বেড়া দিয়ে নির্মিত সে গুদাম। সেই ছাদেই ঝলন্ত ফানুস পরে ছাই হয়ে গেছে এনামুলের স্বপ্ন।

আরো পড়ুনঃ কেরোসিন ঢেলে প্রাথিমিক শিক্ষিকার শরীরে আগুন দিলেন স্বামী

পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নেভায়। কিন্তু নেভার আগেই আধা ঘণ্টায় জ্বলে সব শেষ। তিনতলা সে ভবনের নিচে একটি সেলুনে কাজ করেন সজল কুমার শীল। ঘটনার দিন দোকানের সামনেই ছিলেন তিনি। রাত সোয়া ১২টার হঠাৎ ছাদে আগুন দেখেন। তিনি বলেন, ‘আশপাশের ভবনের অনেক মানুষই দেখেছে, একটি ফানুস এসে পড়ল ত্রিপলের ওপর। মুহূর্তেই আগুন লেগে গেল।’

ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী এনামুল হক। সন্তানদের লেখাপড়া, পিতামাতার চিকিৎসার খরচ, বাসাভাড়া, খাওয়ার খরচ—সবকিছু। তাই বাড়তি আয়ের পথ খুঁজছিলেন এনামুল হক। কাঁচাবাজারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ঝুড়ি বিক্রিটাকেই আয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। ঋণ করে শুরু করেন ব্যবসা।

এনামুল হক বলেন, ‘আমার মূলধন খুব একটা ছিল না। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে তিন লাখের মতো টাকা আনছিলাম। আর সমবায় সমিতি থেকে ঋণ করছিলাম ৭৫ হাজার টাকা। মালটা (ঝুড়ি) বিক্রি করে আস্তে আস্তে দিয়ে দিতাম।’

খ্রিষ্টীয় নববর্ষের রাতে ফানুসের কারণে ঢাকায় সাতটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি মাতুয়াইলের। একমাত্র এ ঘটনাতেই ক্ষতিও হয়েছে।

বাকিগুলোতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মাতুয়াইল ছাড়া ধোলাইখালের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা লেগেছে। বাকিগুলো স্থানীয় লোকজন মুহূর্তের মধ্যেই নিভিয়ে ফেলেছেন।

শুধু রক্ষা পাননি এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘ফানুস গুরুত্বপূর্ণ (কোনো) জিনিস নয়। কিন্তু এটা মানুষ উড়াইতেছে, আনন্দ করতেছে। এতে তো মানুষের ক্ষতি হইতেছে। তবে সরকারের কাছে আমার দাবি, এটা ভবিষ্যতে যাতে (মানুষ) না ওড়ায়। এটা বন্ধ করে দেওয়া হোক।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence