ত্রাণের নামে টাকা তুলে ম্যাজিস্ট্রেটের আত্মসাৎ

নিশাত ফারাবী
নিশাত ফারাবী  © সংগৃহীত ছবি

নিশাত ফারাবী ৩৮তম বিসিএসে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংযুক্ত আছেন। এই কর্মকর্তা করোনাকালে হতদরিদ্রদের ত্রাণসহায়তা দিতে সহকর্মী ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে নিজের মুঠোফোন নম্বরে টাকা নিতেন। 

জানা গেছে, পিএসসি কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্তির পর থেকেই নিশাত ফারাবী বিভিন্ন অজুহাতে প্রথমে ‘অসহায় ছাত্রকে সহায়তা’র নামে তহবিল সংগ্রহ করেন। এছাড়া সরকারি তথ্য ও সেবা নম্বরে (৩৩৩ কোড) দরিদ্র মানুষজন সহায়তা চাচ্ছে উল্লেখ করে তাদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করেন। ৩৮তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের কাছে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক মেসেঞ্জার আইডি (নিশাত ফারাবী অন্তরা) থেকে সম্বলহীন,গরীবদের জন্য ফান্ড কালেকশন করছেন এমন মেসেজ পাঠিয়ে তিনি এই অর্থ সংগ্রহ করেন। যদিও বর্তমান এই আইডিটি তিনি ডিঅ্যাকটিভেটেড করে রেখেছেন।

আরও পড়ুন: পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের দাবি

এদিকে নিশাতের ব্যাচের কর্মকর্তারা গত ১৯ ডিসেম্বর (রবিবার) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নিশাত বিভিন্ন অজুহাতে প্রথমে অসহায় ছাত্রদের নাম করে এবং পরবর্তী সময়ে সরকারি সেবা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করে সহায়তা চাওয়া মানুষের জন্য তহবিল গঠনের কথা বলে টাকা তুলেছেন। তবে সেই টাকা কাদের দেওয়া হয়েছে, তার প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

তার ব্যাচের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, টাকা তোলার ক্ষেত্রে তিনি সবাইকে মোটামুটি একই রকম কথা লিখে পাঠাতেন। এর মধ্যে একটি ছিল, সরকারি তহবিল পর্যাপ্ত নয়। তাই বেশি মানুষকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তহবিল গঠন করতে তার ওপর দায়িত্ব পড়েছে।

আরও পড়ুন: পালং শাকের অসাধারণ কিছু উপকারিতা

সহকর্মীরা আরও দাবি করেন, নিশাত নিজের পদবি ব্যবহার করে তার সহপাঠী ও প্রবাসীদের কাছ থেকেও একইভাবে টাকা সংগ্রহ করেন। একই ব্যক্তির কাছে একাধিকবার টাকা চাওয়া ও কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি তার বিষয়ে খোঁজ নিতে শুরু করলে প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে।

নিশাতের সহকর্মীরা ‘৩৮তম বিসিএস ক্যাডার পরিবার’ নামে একটি ফেসবুক পেজের কিছু স্ক্রিনশট দেখান। এতে দেখা যায়, গত ১৪ ডিসেম্বর  ভুক্তভোগী একজন এভাবে টাকা তোলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মন্তব্যের ঘরে অনেকেই তাদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেন।

বিতর্কের পর নিশাত ফারাবী অন্তরা নামের যে ফেসবুক প্রোফাইল থেকে টাকা চাওয়া হতো, সেই প্রোফাইল থেকে একটি পোস্টে ক্ষমা চাওয়া হয়। পোস্টে বলা হয়, তার হিসাব পরীক্ষা করে বাড়তি অর্থ পাওয়া গেছে। হিসাব থেকে কোনো টাকা তোলা হয়নি। সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার পরিবারের ফেসবুক পেজে দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা টাকা ফেরত পেয়েছেন। একজন নিশ্চিত করেন নিশাতের নম্বর থেকেই টাকাটি এসেছে। নিশাতকে বিভিন্ন জন ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তিনি মোট কত টাকা উঠিয়েছেন, তা জানা যায়নি। 

আরও পড়ুন: অধ্যাপনা ছেড়ে রাজনীতির মাঠে যারা

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিশাত ফারাবী বলেন, বিষয়টি ডিসি স্যার (ডিসি সিরাজগঞ্জ) হ্যান্ডেল করছেন। আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফারুক আহাম্মদ জানান, নিশাত প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ফিরে এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম বলেন, বিষয়টি এখনো আমি জানি না। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।