ভারতে তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, বাংলাদেশি যুবক আটক

নির্যাতনের ছবি
নির্যাতনের ছবি  © সংগৃহিত

ভারতে কয়েকজন মিলে এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশি এক যুবকসহ পাঁচজনকে আটক করেছে কেরালা পুলিশ। গ্রেপ্তার যুবকদের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। হৃদয় বাবু ওরফে টিকটক বাবু নামের ওই যুবক ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা। এছাড়া নির্যাতনের শিকার মেয়েটিও ওই এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মো. শহিদুল্লাহ বলেন, তারা কেরালা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই ঘটনায় পাঁচজনকে আটকের বিষয়টি জানতে পেরেছেন। আটকদের এক যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তিনি জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েটির বাবা হৃদয় বাবুসহ পাঁচজনকে আসামি করে মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্যাতনের শিকার মেয়েটি ও নির্যাতনকারীদের দেশে আনার চেষ্টা করা হবে।

হৃদয় বাবুকে শনাক্তের বিষয়ে শহিদুল্লাহ জানান বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক নারীকে নির্যাতনের ভিডিওতে যৌন নিপীড়নকারী যুবকের চেহারার সঙ্গে রাজধানীর হাতিরঝিলের মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। এরপর পুলিশের সাইবার পেট্রোলিং দলের সদস্যরা টিকটক বাবুর ফেসবুক আইডি শনাক্ত করে নির্যাতনকারী যুবকের সঙ্গে চেহারার মিল খুঁজে পান। ভিডিওতে সাদা গেঞ্জি পরা যুবকই হৃদয় বাবু।

তিনি জানান, গত বুধবার বাবুর মামাকে হাতিরঝিল থানায় এনে তাকে দিয়ে হৃদয় বাবুর সঙ্গে কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলানো হলে অপর প্রান্ত থেকে হৃদয় বাবু তাদের বলেন, তিন মাস আগে তিনি ভারতের কেরালায় এসেছেন। একপর্যায়ে মেয়েটিকে নির্যাতনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা ভারতের কেরালায় ১৫-১৬ দিন আগের। তার সঙ্গে অন্য যাদের দেখা গেছে তারা তার বন্ধু। পরে হৃদয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মেয়েটির মা-বাবার খোঁজ পান পুলিশ কর্মকর্তারা।

পরে হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও নিবন্ধন কার্ড এবং তার বিরুদ্ধে এর আগে রমনা থানায় দায়ের হওয়া একটি ডাকাতির মামলার এজাহার জব্দ করে পুলিশ। এরপর বৃহস্পতিবার মেয়েটির বাবাকে হাতিরঝিল থানায় নিয়ে আসা হয়।

অভিযুক্ত হৃদয়ের মা-বাবা জানান, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের জন্য মাস চারেক আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।

ভিকটিম মেয়েটির বাবার বরাত দিয়ে মো. শহিদুল্লাহ জানান, পাঁচ বছর আগে কুমিল্লার এক সৌদিপ্রবাসীর সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। কিন্তু অনেক দিন ধরে জামাতা তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। মেয়ের তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে। অভাবের কারণে মেয়ে সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ সুযোগে হৃদয় বাবু তাকে বিয়ে করার কথা বলে মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে মেয়েকে নিয়ে যায়। তিন মাস ধরে মেয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলো তার পরিবার।

শহিদুল্লাহ জানান, আমরা যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ফেসবুকে ওই ভিডিও ছড়ানোর পর কেরালা পুলিশ হৃদয় বাবুসহ পাঁচজনকে আটক করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হৃদয় বাবু ও তাঁর সহযোগীরা সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য এবং তাঁরা বাংলাদেশি।


সর্বশেষ সংবাদ