ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত বিদেশী বন্ধু দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন না তো!
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২০, ১২:০০ PM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০, ১২:০০ PM
নিত্য-নতুন কৌশলে মানুষকে প্রতারিত করতে প্রতিদিন নানা রকম প্রতারণার ফাঁদ পেতে যাচ্ছে প্রতারকরা। আপনার অসাবধানতা বা অসচেতনতার সুযোগে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অথচ একটু সতর্ক থাকলেই এড়ানো যায় এ ধরনের অনেক প্রতারণার ঘটনা। জনসচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে সম্প্রতি পুলিশের জালে ধরা পড়া প্রতারণার একটি অভিনব কৌশল তুলে ধরা হল।
গিফট পাঠানোর নাম করে ছলে-বলে-কৌশলে প্রতারকরা আপনাকে প্রলোভিত ও ব্ল্যাকমেইল করে আপনার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া বিদেশী বন্ধু, তিনি হয়ত একজন মার্কিন সেনা অফিসার অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা ইংল্যান্ড-আমেরিকার একজন ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে তার আইডি কার্ডের ছবি দেখাবে। কিন্তু আপনার এই বিদেশী বন্ধুটি আসলে একজন প্রতারক।
আপনি পুরুষ হলে সাধারণত একটি সুন্দরী নারীর ফেসবুক আইডি থেকে, আর আপনি নারী হলে সুদর্শন কোনো পুরুষের আইডি থেকে আপনাকে রিকোয়েস্ট পাঠানো হবে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার সাথে সাথেই তিনি আপনার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠার চেষ্টা করবেন। ঘনিষ্ঠতার এক পর্যায়ে বিদেশী বন্ধু আপনাকে বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ আপনার দেয়া ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে একটি গিফটবক্স পাঠাবে।
সেই বক্সে আইফোন, আইপ্যাড, ডলার বা পাউন্ডসহ অন্যান্য মূল্যবান উপহার সামগ্রী থাকবে বলে জানাবে। আপনাকে গিফট পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গিফটের ছবি তুলে এবং ভিডিও করে আপনাকে পাঠাবে। আপনি সরল মনে বিদেশি বন্ধুর সমস্ত কার্যক্রম বিশ্বাস করবেন। মনে মনে বেশ আনন্দও অনুভব করবেন।
গিফট পাঠানোর এক থেকে দুইদিন পরেই এই চক্রের সদস্যরা ঢাকা বিমানবন্দর অথবা চিটাগাং বিমানবন্দর এর নাম করে আপনাকে ফোন করে আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে বলে জানাবে। বিষয়টি আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য তারা সেই পার্সেলের একটি ছবি আপনার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাবে এবং তিনি যে একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তা বোঝানোর জন্য তার আইডি কার্ডের একটি ছবি পাঠাবে।
কাস্টমস অফিসার অথবা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিনিধি পরিচয়ে আপনাকে ফোন করে জানানো হবে যে আপনার নামে পাঠানো বক্সে মূল্যবান সামগ্রী এবং কিছু ডলার-পাউন্ড আছে। আপনার বিদেশী বন্ধু এই জিনিসগুলো পাঠানোর সময় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বাবদ অর্থ পরিশোধ করেননি। আপনাকে এই বক্সটি নিতে হলে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বাবদ নগদ কিছু টাকা দিতে হবে।
আপনি বিষয়টি বিদেশি বন্ধুকে জানালে সে বলবে, ব্যস্ততার কারণে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করতে পারেননি। কিন্তু পার্সেলের ভিতরে অনেক পাউন্ড বা ডলার আছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করে নেয়ার পরেই তুমি সেখান থেকে এই অর্থ পরিশোধ করে দিতে পারবে। আপাতত তুমি ধার করে ওদেরকে টাকা দিয়ে দাও।
আপনি অর্থ প্রদানে রাজি হলে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দানকারী কিংবা কুরিয়ার সার্ভিস পরিচয় দানকারী ব্যক্তিটি আপনাকে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেবে অর্থ পরিশোধের জন্য। আপনি যখন অর্থ পরিশোধ করবেন তখন এই চক্রের সদস্যরা বলবে আপনার পার্সেল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং একটি বড় মেশিনে স্ক্যান করা হচ্ছে।
বড় মেশিনে স্ক্যান করার পর প্রতারক চক্রের সদস্যরা আপনাকে জানাবে, সেখানে বড় অংকের পাউন্ড বা ডলার আছে এবং এটা এয়ারপোর্ট অথরিটির নজরে পড়েছে এবং এই অর্থ সন্ত্রাসবাদের কাজে ব্যবহৃত হবে না মর্মে Anti-terrorism সার্টিফিকেট লাগবে। এই সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য আপনাকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ করতে হবে। প্রতারকদের দেয়া ব্যাংক একাউন্টে অর্থ পরিশোধ করার পর তারা আপনাকে একটি ভুয়া Anti-terrorism সার্টিফিকেট দেবে।
প্রতারকরা এভাবে আপনাকে জাতিসংঘের সনদ, ইন্টারপোলের সনদ ইত্যাদি সনদ দেয়ার নাম করে আপনার কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেবে। এভাবে ক্রমাগত অর্থ নেয়ার পর প্রতারকরা একসময় আপনাকে জানাবে যে আপনার পার্সেল এর ভিতরে কিছু গোল্ড বার আছে এবং আপনি যদি এই গোল্ডবারগুলো এখান থেকে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে না নেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে চোরাচালানের মামলা, মানিলন্ডারিং মামলাসহ বিভিন্ন মামলা হবে। প্রতারকরা এভাবে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়েও আপনার কাছ থেকে অর্থ আদায় করবে।
প্রকৃতপক্ষে এয়ারপোর্টে কোন গিফট আসে না। আপনাকে প্রতারিত করার জন্যই আপনার বিদেশী বন্ধু এবং তার এদেশীয় সহযোগীরা পুরো বিষয়টি সাজায়। আপনার সচেতনতাই পারে আপনাকে এ ধরনের প্রতারণা থেকে মুক্ত রাখতে। বিদেশি বন্ধুর পাঠানো গিফট এর বিনিময়ে কারো ব্যাংক একাউন্টে বা বিকাশ নাম্বারে টাকা প্রদান থেকে বিরত থাকুন।
নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি, নিরাপদ জীবন গড়ি। প্রতারণার শিকার হলে বিলম্ব না করে পুলিশকে অবগত করুন।
সূত্র: বাংলাদেশ পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ।