মানসিক ট্রমায় ছিলেন শহীদকন্যা লামিয়া
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩২ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫০ PM
জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া (১৭) মানসিক ট্রমায় ভুগছিলেন। ঘটনার আগে থেকেই তার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইতিপূর্বে, লামিয়া সঙ্গবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, যা তাকে চরম মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে দেয়।
আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
এ সময় লামিয়ার চাচা মোহাম্মদ সুলতান বলেন, ‘লামিয়া গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছেন। আমরা তো তাদের বাসায় ছিলাম না। আমরা মেডিকেলে এসে দেখি সে মৃত। তার চাচাতো ভাইয়েরা মেডিকেলে নিয়ে আসে। লামিয়ার মৃত্যুর পেছনে জড়িত অপরাধীদের ফাঁসি চাই। লামিয়ার মতো যেন এমন কারও সাথে না হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ জসিমের ফুফাতো ভাই দাবি করে বলেন, ‘লামিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পর সে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। যদিও স্বাভাবিকভাবে সে খুব হাসিখুশি স্বভাবের মেয়ে ছিল। আমি তার খোঁজখবর রাখতাম। সবশেষ ঈদের সময় দেখা করে কথা বলেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম, লামিয়া আসলে ওই ঘটনাটি মেনে নিতে পারেনি। এ ঘটনার জন্য লামিয়া নিজে হীনমন্যতায় ভুগছিল। তাই চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়েছিল। এ সময় তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।’
লামিয়ার বাবার বন্ধু মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘লামিয়া কয়েকদিন ধরে মানসিক ট্রমার মধ্যে ছিল। ২ দিন আগে তাকে নিউরোসইন্সে ট্রিটম্যন্ট দেওয়া হয়। একটু অস্বাভাবিক ছিল। রোম ফ্রি পেয়ে ভেতর থেকে লক করে দেয়। তারপর আরকি যা ঘটার তাই ঘটলো। লামিয়াকে হাসপাতালে আনা হয় রাত ৯ টা ৪৫মিনিটে। তার কিছুক্ষণ পর লামিয়ার মৃত্যুর কথা জানালে মা অচেতন হয়ে পড়েন। সকালে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে হাসপাতাল।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, লামিয়ার ছোট বোন মাদ্রাসায় পড়ে। সে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষকদের বলে আসলো যে তারা গ্রামে চলে যাবে। এসে দেখে গেইট লাগানো। গেট খোলা যাচ্ছিল না। পরে আশপাশের লোকজন এসে গেট খুলে দেখে, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে লামিয়া।’ এইসময় পরিবারের সদস্যরা জুলাই শহীদ জসীমের পরিবারের জন্য সরকারের কাছে সহযোগীতা চায়।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে কলেজছাত্রী লামিয়া নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। পরে তিনি নিজে বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।