চুরির টাকায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে তালাকের সিদ্ধান্ত, অতঃপর...
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৪ AM , আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১০:১৬ AM

দিনাজপুরে চুরির টাকায় মোহরানার আড়াই লাখ টাকা শোধ করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিনারা বেগমকে তালাক দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্বামী জহুরুল। এজন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই চুরির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে হাকিমপুর উপজেলার ১ নম্বর খট্টা মাধবপাড়া ইউনিয়নের ভারতের সীমান্তবর্তী মংলাবাজারে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজন মিয়া।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার মংলাবাজারের আফতাব উদ্দিনের ছেলে জহুরুল হক, একই ইউনিয়নের সাতকুড়ি গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে সাহাজুল ইসলাম (২৬) এবং নওদাপাড়া বিলেরপাড় এলাকার মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে তাইজুল ইসলাম (২৫)। তারা তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে মাদকসেবন ও বিভিন্ন চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার মংলা বাজারের কাপড় ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের দোকান থেকে ৭ লাখ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় হাকিমপুর থানায় মামলা করেন তিনি। ঘটনার কয়েকদিন পর একই এলাকার যুবক জহুরুল তার চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন। তার সঙ্গে আর সংসার করবেন না বলে শ্বশুরবাড়ির লোকদের চাপ দেন। তিনি পেশায় দিনমজুর। মোহরানার আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করবেন বলেও জানান। গত শুক্রবার স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বসে তালাকের সিদ্ধান্ত নেন।
তারা আরও জানান, এ সময় বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া কাপড় ও আসবাব গোছাতে শুরু করেন তার স্ত্রী মিনারা বেগম। এক পর্যায়ে ঘরের এক কোনায় লুকিয়ে রাখা মোটা অঙ্কের টাকা দেখতে পান। বিষয়টি উপস্থিত লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে শুরু হয় নানা জল্পনা। এ সময় তাকে মারধর করলে চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
গ্রেপ্তার জহুরুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, ‘আমাক নাকি ওই (স্বামী) ছাড়াছাড়ি করবে। আমাক মারধর করে ঘরোততে বার (বের) করে দিছে। ওই ঘরোত কী যেন করোছেলো। আমি শুল্লি (ছিদ্র) দিয়ে দেখিছি ওই কী যেন বার করোছে। আমি ঘরোত জিনিসপত্র গোছাবার যায়ে ম্যালা ট্যাকা দেখিছি। তখন আমি ট্যাকার কতা মানষোক কয়ে দিছি। এই ট্যাকা দিয়ে ওই (স্বামী) আমাক ছাড়ে দিলো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘ওর ফুফু কইছে এই বউ ছাড়ে দি, তোক এর চেয়ে ভালো বিয়া করামু। মুই (ফুফু) পনেরো হাজার ট্যাকা দিম। আর তোর প্যাটে (গর্ভে) যদি বাচ্চা ভালো থাকে তাহলে তোর বাচ্চাক দেখাশোনা করা হবে। ফুফু ওরা প্লান করিছে, আজ দুপুরের পরে আমাক ছাড়াছাড়ি করে দিবে।’
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তার বাড়িতে গিয়ে দেখি কয়েকজন তাকে বেঁধে রেখেছে। সে আমার দোকান থেকে টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছে।’
এ বিষয়ে হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন মিঞা বলেন, উপজেলার মংলাবাজারে একটি কাপড়ের দোকানে চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত জহুরুল হক ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি জহুরুল হকের বাড়ি থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার উদ্ধার করেছেন স্থানীয় লোকজন। চুরি হওয়া বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আসামিদের দিনাজপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।