৯ বছর ধরে অনুপস্থিত
প্রধান শিক্ষক স্বামীর স্বাক্ষরে বেতন তুলছেন স্ত্রী ‘সহকারী শিক্ষিকা’
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২১ PM , আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২১ PM
ভোলার মুজিবনগর ইউনিয়নের চর নিউলিন বাংলাবাজার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি এবং সহকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সহকর্মীদের অভিযোগ, এসব অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার কারণে প্রধান শিক্ষক ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
জানা যায়, ২০০০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ বছর পর এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৯২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে এনটিআরসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত ২ জনসহ ৫ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী আছে। এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক কালে-ভদ্রে স্কুলে গেলেও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউস ২০১৫ সনে নিয়োগ পাওয়ার পর একদিনের জন্যও স্কুলে যাননি। প্রধান শিক্ষক তার স্ত্রীর নামে সহকারী শিক্ষক পদে এমপিওভুক্ত করিয়ে গত নয় বছর ধরে তার হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। তার বদলি হিসেবে অন্য শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হয়।
স্বামী প্রধান শিক্ষক হওয়ায় স্কুলে না গিয়ে ও ০৯ বছর ধরে বেতন তুলছেন বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদাউস।
এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক নিয়মিত পরীক্ষার ফি ও অন্যান্য খাতের অর্থ আদায়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছেন। চলতি এসএসসি ফরম পূরণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি বিদ্যুৎ বিলের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিত বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দ এবং অর্জিত আয়ের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের সদ্যবিলুপ্ত ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা দাতা সদস্য মো. বাবুল মিয়া জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আলমিরা,পুরাতন টিন-কাঠ, সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতার,ল্যাপটপ, কম্পিউটার, সোলার প্যানেল সব বিক্রি করে খেয়েছেন। একই ভাবে তিনি বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা। তিনি আওয়ামী লীগের একজন নেতা হওয়ায় তার অনিয়মের কাছে অসহায় ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকরা।
এমনকি অর্থ নিয়ে বিরোধের জেরে প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষক মো. লাবলুকে মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এই বিষয়ে সহকারী শিক্ষক লাবলু দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রধান শিক্ষক রিজার্ভ তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য সহকারী শিক্ষকদের কাছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চান। টাকা নিতে হলে ২০২২-২৩ সালের অর্জিত আয়ের হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ কমিটি গঠন এবং ওই কমিটির মাধ্যমে টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করলে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে অশোভন আচরণ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. নাফিস বলেন, আমি পাঁচ বছর এই বিদ্যালয়ে পড়েছি। জান্নাতুল ফেরদাউস নামে কোনো শিক্ষককে কখনো দেখিনি।
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন এবং তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেছেন, একটি মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের হয়রানি করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ এসেছে এবং তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।