‘আমারও মনে হচ্ছে মা অপহরণ হননি’—বললেন মরিয়ম মান্নান

মরিয়ম মান্নান ও তার মা
মরিয়ম মান্নান ও তার মা  © ফাইল ছবি

‘মাকে পাওয়ার পরে আমারও মনে হচ্ছে মা অপহরণ হননি। সঠিকভাবে বলতে পারবে পিবিআই। যেহেতু তদন্ত করছে তারা, তাই সঠিক উত্তর তারাই দিতে পারবেন। আমি মিডিয়ার সামনে আসবো খুব তাড়াতাড়ি। সবার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো।’ এতদিন ধরে মাকে খুঁজে বেড়ানো মরিয়ম মান্নান এক গণমাধ্যমকে আজ বুধবার একথা জানিয়েছেন। এদিকে নিখোঁজ রহিমার দেওয়া তথ্যের সাথে ঘটনার মিল পাচ্ছে না পিবিআই।

মায়ের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে মরিয়ম বলেন, ‘কীভাবে বুঝবো মা একা একা চলে গেছেন, আমাদের ছেড়ে, আর ফিরবেন না! জানলে কোনোদিন জিডি মামলায় যেতাম না। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আমার প্রথম মনে হয়েছে মা অপহরণ হননি। কারণ, যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করছিলেন কী হয়েছে, তিনি বলেছেন তাকে মেরেছে। এক বছর আগে তাকে যারা যেভাবে মেরেছিল সেই ব্যাখ্যা করছেন মা। মাকে দেখে ভয় পাচ্ছি। মা আমাকে অবিশ্বাস করছেন। এখন মিডিয়া বা কারও সামনে আসতে চান না। মায়ের যত্ন নেওয়াটা জরুরি।’

এ বিষয়ে মরিয়ম আরও বলেন, ‘দেখুন আমার মা হারিয়েছে, আমরা খুঁজেছি তাকে। খুঁজতে হবে তাকে। আমার মনে হচ্ছে, মা অপহরণ হননি। তবে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমন কাজ– এটা ভাবা ভুল। আমার মা নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ। তিনি আমাদের ওপর রাগ করে গিয়েছেন। অভিযোগ আমাদের ওপর। আর একটা কথা, মা ভাবেননি আমরা মামলা করবো। মামলায় সরাসরি কারও নাম আমরা দিইনি। পুলিশ যখন বলেছে, আমরা কাদের সন্দেহ করি, তখন যাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল তাদের নাম সন্দেহ তালিকায় আনা হইছে। এখন মা আমাকেও সন্দেহ করছেন। আমার মায়ের যত্ন নেওয়া এখন সব থেকে জরুরি। মায়ের পাশে থাকার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই। আসলে আমি মায়ের পাশে থাকতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘মায়ের নিখোঁজের বিষয়ে আমার এবং আমার পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। তারপরও প্রশাসনকে বলবো তদন্ত করতে। আমি এবং আমরা যদি জড়িত থাকি, আমাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। মাকে খোঁজা কোনও অন্যায় না। আপনার মা হারালে আপনিও খুঁজতেন। মরিয়ম মান্নান বলেন, ‘মাকে পেয়েছি খুশি। ব্যক্তিগত, সামাজিক যত হেনস্তার শিকার হই না কেন, মায়ের হাত ছাড়বো না। মা গিয়েছেন, বলেননি আমাদের মামলা করতে। আমরা জানতামও না।’

উল্লেখ্য, রহিমার পরিবারের দাবি, ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রহিমা বেগম (৫২)। একঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে তার ব্যবহৃত স্যান্ডেল, ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর সন্তানরা মাকে পাননি। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করে পরিবার।

এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র‌্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন– খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল ঘটক ওরফে বেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ। এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এ মামলার তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একই সঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক নারীর লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। ২৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করা হয়। আদালত ২৫ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে ডিএনএ প্রোফাইল করার অনুমতি দেন।

এদিকে, ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার সৈয়দপুর থেকে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হলে রহিমা ২২ ধারার জবানবন্দিতে তিনি অপহরণ হয়েছিলেন বলেই দাবি করেন। এরপর সন্ধ্যায় আদালত বাদী আদুরীর জিম্মায় তাকে মুক্তি দেন। এরপর ওই রাতেই মেয়ে মরিয়ম ও আদুরী তাদের মাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় রহিমা বেগমের চিকিৎসা চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ