ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, প্লাবিত ৩০ গ্রাম

বন্যায় হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন
বন্যায় হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন  © সংগৃহীত

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণের ফলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার একাধিক গ্রামে হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ে। বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।

পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুইটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকার দুইটি স্থানে ভেঙেছে। এছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুইটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পরশুরামের উত্তর ধলিয়া এলাকার বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই ঘরের ভেতরে পানি ঢুকতে শুরু করে। বাধ্য হয়ে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ছাদে আশ্রয় নিয়েছি। গত বছর বন্যার সময়ও সবকিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক বছর না যেতেই আবারও আমাদের স্বপ্ন ভেসে যাচ্ছে পানির স্রোতে।

একই উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ চররামপুর এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই চরনগর বাঁধের প্রবেশ মুখ বন্ধ করা হয়নি। সময়মতো এই জায়গাটি সঠিকভাবে রক্ষা করা হলে পানি ঢোকার সুযোগ থাকত না। প্রতিবছর কিছু অসচেতন লোকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।

ফুলগাজীর উত্তর বগাদানা এলাকার বাসিন্দা সাকিল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই বাঁধ ভেঙে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ চোখে পড়ে না। যেটুকু মেরামত করা হয়, তা বেশিদিন টেকে না। আমরা চাই, এমন একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণ হোক, যাতে আমাদের ঘরবাড়ি, স্বপ্ন, জীবন সবকিছু বারবার পানিতে ডুবে না যায়।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, উপজেলায় তিনটি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। তাদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার (৯ জুলাই) উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। 

পরশুরামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, মাঠপর্যায়ে থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। মানুষজন এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা দুই দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। বুধবার ও বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রাত ১২টার পর মুহুরী নদীর পানি কিছুটা কমেছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও বাঁধ ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী উপজেলায় ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরাম উপজেলায় ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!