মালয়েশিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ইন্সুরেন্সের অর্থ প্রাপ্তিতে সঙ্কট-হতাশা

শ্রমজীবী বাংলাদেশীরা
শ্রমজীবী বাংলাদেশীরা  © টিডিসি ফটো

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো মালয়েশিয়ায়ও শ্রমজীবী বাংলাদেশীদের পাড়ি দেওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। উচ্চশিক্ষা, শ্রমবাজারের ব্যাপ্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাহির দেশে বিনিয়োগসহ নানান কারণে বাংলাদেশিরা পাড়ি জমান। তবে দেশটিতে প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষ্রেত্র দিন দিন জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে যে-সকল প্রবাসী রয়েছেন তাদের মৃত্যু কিংবা এক্সিডেন্টে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ আদায়েও পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা।

প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কাজ করা সরকারের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, ১৯৯৩ সাল থেকে গত ৩১ বছরে ৫২ হাজার ৩৭১ প্রবাসীর লাশ দেশে এসেছে। এই ৩২ বছরের তথ্যই বোর্ডের কাছে আছে। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিবছরই লাশের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রবাসীরা বছরে ২২ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন। 

ছেলের ইন্স্যুরেন্সের টাকা পেতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিসি অফিসের মাধ্যমে প্রথমে আবেদন করি। কিন্তু ডিসি অফিস থেকে আমাকে বলা হয়েছে তারা আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এসে আমার আবেদনের কোনো হদিস পাইনি। প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে বলছে তারা আবেদন পায়নি। বিষয়টি নিয়ে দোটানায় রয়েছি। কবে নাগাদ ইন্সুরেন্সের টাকা পাব কিংবা আদৌও পাব কিনা সেটা অনিশ্চিত-মৃত প্রবাসী লাল চানের বাবা

প্রবাসী কর্মীরা মারা গেলে মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় সরকার। বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় সেটি পরিবহন ও দাফনের খরচ হিসেবে দেওয়া হয় সরকারি অনুদান। এছাড়া মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান আর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থাও করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তাদের অধীন সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে এসব সুবিধা পান প্রবাসী কর্মীর স্বজনরা।

আরও পড়ুন: কোটা সুবিধা কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

কিন্তু সম্প্রতি মালয়েশিয়া প্রবাসী মৃত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে লাশ হস্তান্তরের সময় পরিবহন ও দাফনের খরচ এবং মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান আর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পেলেও ইন্সুরেন্সের অর্থ পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। একাধিক ভুক্তভোগী দিনের পর দিন ঘুরেও ইন্স্যুরেন্সর অর্থ পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা আর হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন।

New Project - 2024-07-14T210400-768

কর্মক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকরা

পেশায় ড্রাইভার সুজাম মিয়া। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাসিনা তিনি। ২০২২ সালে একমাত্র ছেলে লাল চানকে বৈধ পথে মালয়েশিয়ায় পাঠান। কিন্তু প্রবাসে গমনের ১০ মাসের মাথায় কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকাকালীন রোড এক্সিডেন্টে মারা যান লাল চান। ছেলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে এককালীন ৩ লক্ষ টাকা পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিরক্ত হয়ে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিলাম: প্রধানমন্ত্রী

কিন্তু ছেলের মৃত্যুর প্রায় বছর পার হলেও মালয়েশিয়া থেকে ইন্স্যুরেন্সের অর্থ পায়নি তার পরিবার। এমনকি কবে নাগাদ অর্থ পাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জান নেই তাদের। বিষয়টি নিয়ে বারবার আসছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে।

কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে যে-সকল প্রবাসী ফেরত আসছেন, তাদের ইন্স্যুরেন্স বাবদ অর্থ নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। বিষয়টির সমাধানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বক্তব্য দিতে পারবে-শোয়াইব আহমাদ খান, অর্থ ও কল্যাণ শাখার পরিচালক ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড 

সুজাম মিয়া জানান, ইন্স্যুরেন্সের টাকা পেতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ডিসি অফিসের মাধ্যমে প্রথমে আবেদন করি। কিন্তু ডিসি অফিস থেকে আমাকে বলা হয়েছে তারা আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছে। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এসে আমার আবেদনের কোনো হদিস পাইনি। প্রবাসী কল্যাণ ভবন থেকে বলছে তারা আবেদন পায়নি। বিষয়টি নিয়ে দোটানায় রয়েছি। কবে নাগাদ ইন্স্যুরেন্সের টাকা পাব কিংবা আদৌও পাব কিনা সেটা অনিশ্চিত। 

একইরকম আরেক ভুক্তভোগী মেহেরপুরের আলম সরকার। তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দু’বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসেন। তিনি জানান, আমি সকল কাগজ জমা দেয়ার পরও ইন্স্যুরেন্সের অর্থ পাচ্ছি না। বারবার যোগাযোগ করলেও কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থ ও কল্যাণ শাখার পরিচালক শোয়াইব আহমাদ খান জানান, প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কিংবা মৃত্যুর পরে ফেরত আসলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে আমরা বিমান বন্দর থেকে বের হওয়ার সময় ভুক্তভোগীদের ৩৫ হাজার টাকার চেক এবং পরবর্তীতে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকি। যারা বৈধভাবে প্রবাসে যান তারা সবাই এই টাকা নিয়ম অনুযায়ী পেয়ে যান। কিন্তু মালয়েশিয়া থেকে যে-সকল প্রবাসী ফেরত আসছেন, তাদের ইন্স্যুরেন্স বাবদ অর্থ নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। বিষয়টির সমাধানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বক্তব্য দিতে পারবে। 

আরও পড়ুন: তিন হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেবে ইউরোপের চার দেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহকারী পরিচালক নাজমিন মিতা জানান, ডিসি অফিস থেকে আবেদন না আসার কোন কারণ নেই। তবুও ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যদি এখানে কোন জটিলতা থাকলে সেটি আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। তবে মালয়েশিয়ার যে-সকল প্রবাসী রয়েছেন তারা কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা দূতাবাসকে একাধিকবার স্পষ্ট তালিকা দিতে বলেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একাধিকবার মিটিংও করেছেন কিন্তু এখনও সমাধান আসছে না। মালয়েশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশে প্রবাসীদের এই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না।

 

সর্বশেষ সংবাদ