সহসাই রাজপথ ছাড়ছেন না কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা

কোটা সংস্কার আন্দোলন
কোটা সংস্কার আন্দোলন  © সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা পদ্ধতি নিয়ে আপিল বিভাগের রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে তাদের সুস্পষ্ট তথ্য প্রদান করতে হবে। তা না হলে তারা রাজপথ ছাড়বেন না।

আজ বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে কোটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে আপাতত কোটা থাকছে না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। 

এদিকে, রায় শোনার পরও রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আটকে রাখছেন। সরেজমিনে শাহবাগসহ বিভিন্ন মোড়ে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। এসময় তারা এই রায় প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা গেছে।

এ বিষয় শাহবাগে আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, গত ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্ট থেকে ২০১৮ সালে যে পরিপত্র ছিল, সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয় এবং আজকে সেটি শুনানি রয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করছি যদি সেই ৫ জুনের রায়টি, সেটিকে আবার যদি স্থগিত করা হয় এবং ২০১৮ সালের যে পরিপত্র, সেটিতে যদি ফিরে যাওয়া হয়, তাহলে আমাদের জায়গা থেকে মহামান্য হাইকোর্টকে আমরা স্বাগত জানাবো। 

তিনি বলেন, এর মাঝেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যেগুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত পূর্ণাঙ্গ রায়টি বেশ কিছুদিন পর প্রকাশিত হবে। সেই পূর্ণাঙ্গ রায় দিয়ে পরিপত্রটি আবার অবৈধ ঘোষণা হতে পারে। আমরা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারছি না আজকের এই দিনে শুনানির মাধ্যমে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল হবে। তৃতীয়ত, আমরা যে এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনটি করছি এটি প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির বিষয়বস্তু নয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণি অর্থাৎ বাংলাদেশের যারা সকল গ্রেডে চাকরি করবে সবার কথা বলছি।”

তিনি বলেন, আমাদের যে এক দফা এক দাবি, এর আংশিক প্রতিফলন আমরা এখানে দেখতে পাই। ২০১৮ সালের যে পরিপত্র সেখানে কোনো কোটা নাই। সংবিধান অনুযায়ী যারা অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠী তাদের জন্য একটু সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা প্রতিবন্ধী রয়েছে আমরা যদি তাদের এখনো অনগ্রসরের কাতারে মনে করি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের লোকজন রিট করার পর ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ হয়ে যায়, তাহলে বাকি যে দুইটি জনগোষ্ঠী রয়েছে এদের মধ্যে কেউ রিট করবে না বা রিট করে আবার অবৈধ ঘোষণা করবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নাই।

“অর্থাৎ আমরা যদি এই তিনটি জায়গা থেকে লক্ষ্য করি হাইকোর্টের যে রায়, এটি আমাদের পূর্ণাঙ্গ কোন মেসেজ দেয় না। আমরা বিশ্বাস করি নির্বাহী বিভাগের কাছে থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ এবং পরিপত্র এই সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান  দিতে পারবে।”

আন্দোলনের অন্যতম আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আজকের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো রায়কে আমরা স্বাগত জানায়। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের কিছু নির্দেশনা দিচ্ছি, প্রথমত আজকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনস্থল ত্যাগ করবো না। দ্বিতীয়ত অতি উৎসাহী হয়ে আনন্দ মিছিল বের করার জন্য মাঠ ছেড়ে যাওয়ার কোন পুনপরিকল্পনা করব না। 

“আমরা যারা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করছি, যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ থেকে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য না পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। যে আন্দোলনের মূল গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি ছিল এক দফা দাবি, সেই জায়গা থেকে আমরা বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। কোন সুবিধাবাদী পক্ষ যদি আদালতে রায়কে কাজে লাগিয়ে আন্দোলন স্থল ত্যাগ করতে চাই তাদেরকে আমরা সুবিধাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।”

তিনি বলেন, আমাদের মূল দাবি ছিল সকল প্রকার গ্রেডের অনৈতিক কোটার যৌক্তিক দাবি আদায়ে যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ থেকে সঠিক তথ্য না পাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।


সর্বশেষ সংবাদ