বইমেলায় বঙ্গবন্ধু ‘নিষিদ্ধ’, নেই কোনো বই কিংবা ছবি

শেখ মুজিবুর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমান  © সংগৃহীত

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অন্যতম বড় আয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবছরই বইমেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে একাধিক নতুন বই প্রকাশিত হতো। স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণে তার প্রতিচ্ছবি থাকত এবং মুজিব কর্নার বা বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের মতো বিশেষ স্থানও দেখা যেত। ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অনুষ্ঠিত এবারের বইমেলায় দেখা গেছে পুরো ভিন্ন আবহ। বইমেলায় যেন অঘোষিত নিষিদ্ধ হয়ে আছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই নেতা।

বইমেলার ১৪তম দিনে শতাধিক স্টল ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন কোনো বই প্রকাশিত হয়নি। এমনকি অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগের বইগুলোও স্টলে রাখেনি। বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক বই কেন নেই, এ সম্পর্কেও কিছু বলছে না প্রকাশনীগুলো। 

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) ২০১২ সালে প্রকাশ করে  শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। প্রকাশের পর বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর প্রায় প্রতি বছরই বইটি বিক্রির শীর্ষে থাকত। কিন্তু এবার তারা বইটি প্যাভিলিয়নে রাখেনি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক কোনো বইও প্রকাশ করেনি। পুরোনো বইও প্রদর্শন করছে না।  

ইউপিএল প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি নেই কেন? এ সম্পর্কে বিক্রয়কর্মীরা কোনো ‍উত্তর দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) এর প্রধান মাহরুখ মহিউদ্দিনকে একাধিকবার মোবাইলে কল করা হয়। তবে তিনি কল  রিসিভ করেননি।

ইউপিএল শুধু নয়, অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রকাশ করেছিল নানাধর্মী বই। সেসব প্রতিষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই পাওয়া যায়নি। আগামী প্রকাশনী ও সময় প্রকাশনী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশ করেছিল বেশ কিছু বই। এবার ওই দুই প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা যায়, সেখানেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো বই পাওয়া যায়নি। আগামী প্রকাশনীর একজন বিক্রয়কর্মী জানান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইগুলো স্টক আউট। নতুনভাবে আর ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর বই রাখলে কিংবা বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক বই স্টল বা প্যাভিলিয়নে প্রদর্শন করলে সেখানে হামলা হতে পারে—এমন আশঙ্কায় অনেক প্রকাশক বইগুলো মেলায় আনেননি।  এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি কোনো প্রকাশক কিংবা বিক্রয়কর্মী।  

বঙ্গবন্ধুর নামে স্টলও নেই
অন্যান্যবার বইমেলায় বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রচার কেন্দ্র’, ‘বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার’-এর মতো একাধিক স্টল থাকত। এসব স্টল মূলত বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বইকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত। কিন্তু এবার এমন কোনো স্টল নেই।

২০২০ সালের বইমেলায় বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে চারটি বিশেষ চত্বর নির্মাণ করা হয়েছিল—শিকড়, সংগ্রাম, মুক্তি ও অর্জন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আদলে প্যাভিলিয়নও বানানো হয়েছিল। এবার তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যেন কোথাও নেই বঙ্গবন্ধুর নূন্যতম বই কিংবা ছবি।

বদলে গেছে বইমেলার প্রতিপাদ্য ও রং
বইমেলার প্রতিপাদ্যও বদলে গেছে। এবার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’—যা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। সেই সঙ্গে বইমেলার রং নির্ধারণ করা হয়েছে লাল, কালো ও সাদা। লাল বিপ্লবের প্রতীক, কালো শোকের প্রতীক এবং সাদা আশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

মেলায় এবার ‘জুলাই চত্বর’ নামের একটি বিশেষ স্থান রাখা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ডাস্টবিনও দেখা গেছে, যা আগের বইমেলার চিত্র থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত।

বাংলা একাডেমির বক্তব্য
বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বই প্রকাশ ও প্রদর্শন নিয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। কোনো প্রকাশক যদি নিজে থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই প্রদর্শন করেন, স্টল-প্যাভিলিয়নে রাখেন, সেখানে বাংলা একাডেমি বাধা দেবে না।’


সর্বশেষ সংবাদ