বই নেই, পাঠকও নেই ভোলার পাবলিক লাইব্রেরিতে

চরফ্যাশন পাবলিক লাইব্রেরি
চরফ্যাশন পাবলিক লাইব্রেরি  © টিডিসি ফটো

দীর্ঘ ৪৭ বছরের ইতিহাসে যেন সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে চরফ্যাশন পাবলিক লাইব্রেরি। উপকূলের এই প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আজও আধুনিকতার ছোঁয়া পায়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা লাইব্রেরিটি বর্তমানে এক করুণ বাস্তবতায় দিন পার করছে।

বই পড়ার যে নীরব বিপ্লব ঘটার কথা ছিল, তার জায়গায় কেবল শূন্যতা আর হতাশার গল্প। লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন একা লড়াই করছেন এই প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, লাইব্রেরিতে নেই কোনো পাঠক। ফরহাদ হোসেনের চোখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।

তিনি জানান, লাইব্রেরির জন্য পর্যাপ্ত বই নেই। পুরোনো বইগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন বই কেনার কোনো তহবিল নেই। পাঠকদের আকর্ষণ করার মতো পর্যাপ্ত রেফারেন্স বই কিংবা সায়েন্স ফিকশন, সাহিত্য, উপন্যাসের অভাব লাইব্রেরিকে পাঠকশূন্য করে তুলেছে। এতদিন ধরে চেষ্টা করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। নিজের জীবদ্দশায় লাইব্রেরির উন্নয়ন দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম।

জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম একটি উপজেলা দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন। আয়তনে দেশের আঠারটি জেলার চেয়ে বড় এ উপজেলা। বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে গড়ে ওঠা এ উপজেলা শহরে প্রায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা রয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদরাসাসহ রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রয়েছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ব্যাংক, বীমা, অফিস, আদালত, সরকারিসহ অসংখ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এখানে নেই আধুনিকমানের সুযোগ-সুবিধা সম্মিলিত সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি। উপজেলা প্রশাসনের পরিচালনায় যেটি রয়েছে, সেটিও নানান সমস্যায় জর্জরিত। যার জন্য চাকরিপ্রার্থী যুবক, গবেষকদের জন্য ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। রেফারেন্স গ্রন্থের জন্যে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে চরফ্যাশনের কয়েক জন বিদ্যোৎসাহী, শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগীদের সার্বিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এর পর দীর্ঘ ৪৭টি বছর কেটে গেলেও কেউ এর উন্নয়নের জন্য কোন নজর দেয়নি। যার ফলে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম। লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে অনেক চেষ্টা করেছি, অনেকের কাছে গিয়েছি, কোন সহযোগিতা পাইনি। যতদিন বাঁচি এখানে দায়িত্ব পালন করে যাব। নিজের জীবদ্দশায় লাইব্রেরিটির উন্নতি দেখে যেতে পারলে ভালো লাগত। আশা করি আগামী দিনে প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি হবে।

২১ টি ইউনিয়ন ১ টি পৌরসভা ও ৪টি থানা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। এ উপজেলায় প্রায় ৬ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। ১০টি কলেজ, ৩টি কামিল মাদ্রাসা, ৬টি ফাজিল মাদ্রাসা, ২ শতকের বেশি মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল আলিম মাদ্রাসা রয়েছে।

চরফ্যাশন পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালনা কমিটির সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি বিভিন্নজনের কাছে গিয়েছি পাবলিক লাইব্রেরির উন্নয়নের জন্য। এমনকি সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের কাছেও গিয়েছি। কিন্তু কেউ কোন সাড়া দেয়নি; ফলে খুড়িয়ে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম। পর্যাপ্ত বিভাগ ওয়ারী বই নেই। সাহিত্য, উপন্যাস, নাটক, রম্যরচনা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি, সায়েন্স ফিকশন, শিশুতোষ বইসহ রেফারেন্স গ্রন্থ ও ধর্মীয় গ্রন্থের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। আর্থিক দুরাবস্থার কারণে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা রাখা হয় না। মাত্র একটি পত্রিকা রাখা হয়। ফলে পাঠক রেফারেন্সের জন্য দু-চারদিন আগের কোন পত্রিকা খোঁজ করলে দেয়া যায়না। কিছু বই আছে অনেক পুরোনো, যা জোড়াতালি দিয়ে রাখা। এসব বই নেড়েচেড়ে পড়া সম্ভব নয়।

প্রভাষক ও গবেষক সিরাজ মাহমুদ বলেন, জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত গ্রন্থাগার হলো সমাজ উন্নয়নের বাহন। শিক্ষা উন্নয়নের মূল ভিত্তি। শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ উন্নয়ন মনস্ক হয়। গ্রন্থাগার শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। একটি জাতির মেধা, মনন, ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো বিতরণের সুযোগ পায়। লাইব্রেরি শব্দের বাংলা অর্থ গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগার হচ্ছে গ্রন্থের আগার বা সংগ্রহশালা। মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এবং মানুষের পাঠের জন্য বিভিন্ন গ্রন্থ যে ঘরে রাখা হয় তাই গ্রন্থাগার। এজন্য যে কোন উপজেলায় ঐ অঞ্চলের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত বইসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি সরকারি গ্রন্থাগার থাকা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের চরফ্যাশন উপজেলায় এরকম কোনো গ্রন্থাগার নেই। আশা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে নজর দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।

প্রভাষক বেলাল শামীম বলেন, একটি জাতির মেধা, মনন, ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উন্নয়ননের জন্য গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বই সমৃদ্ধ পাবলিক লাইব্রেরির। তিনি আরো বলেন, গ্রন্থাগার নিয়ে রবী ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরীসহ অনেকেই সাহিত্যিক পবন্ধ লিখেছেন। প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর উক্তি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে দেহের চিকিৎসা হয়, লাইব্রেরিতে চিকিৎসা হয় মনের। এ জন্যই প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রয়োজন। চরফ্যাশনের বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরিকে সরকারি করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গ্রন্থাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরির বইসহ যাবতীয় বিষয়ে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, অচিরেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence