শুরুর দিকে ঢাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে কোনো দল করতো না

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ  © সংগৃহীত

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রথম ব্যাচের একজন ছিলেন মুহম্মদ হাফিজুর রহমান। ভর্তি হয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছর অধ্যয়নকালের নানান স্মৃতিকথা ১৯৮৪ সালে ক্যাসেটে ধারণ করেছিলেন ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মেজবাহ কামাল। পরবর্তীতে মুহম্মদ হাফিজুর রহমানের ছেলে আনিসুর রহমান 'শতাব্দীর সাথে সাতচল্লিশ বৎসর' নামক পুস্তকে এসব স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ২০০৯ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহামিলন উপলক্ষ্যে বের হওয়া সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনায় এই স্মৃতিকথা ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রথম ব্যাচ’ শিরোনামে তুলে ধরেছেন তার মেয়ে অধ্যাপক হুসনে জাহান। নিচে পাঠকের উদ্দেশ্যে সেই লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হল- 

আমার ছেলে প্রশ্ন করেছিল, ‘নানাও কি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন?’ ‘হ্যাঁ বাবা, নানা তো ঢাকা ইউনিভার্সিটির ১৯২১ সালের প্রথম ব্যাচের অর্থনীতির ছাত্র।’

প্রকৃতপক্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে অনেকের মতো আমারও পারিবারিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বললেও অত্যুক্তি হবে না। আমার স্বামী প্রফেসর নুরুল আলম, আমার ভাই প্রফেসর আনিসুর রহমান, আমার বোন প্রফেসর হোসনে আরা কামাল, আমার অপর বোন আখতার জাহান, প্রফেসর আয়েশ মুনীর এরা সবাই এই ইউনিভার্সিটির কৃতি ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন।

ইতিহাসের প্রফেসর মেজবাহ কামাল ১৯৮৪ সালে আমার শয্যাশায়ী পিতা মুহম্মদ হাফিজুর রহমানের অর্ধেক জীবনের স্মৃতিচারণ ক্যাসেটে ধারণ করেছিলেন। সে তথ্য ভাই আনিসুর রহমান 'শতাব্দীর সাথে সাতচল্লিশ বৎসর' নামক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ৪ বছর অধ্যয়নকালের স্মৃতিকথা সেই বই থেকে নিচে উদ্ধৃত করলামঃ :......

“ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রথম ব্যাচ

আমি (হাফিজুর রহমান) গেলাম প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ-তে ভর্তি হবার জন্য। তখন দেখলাম সেখানে Admission close হয়ে গেছে। তখন কি করব, তখন চলে আসলাম ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হলাম। তখন আমার স্কুল ফ্রেন্ড কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হলো। একজন মোহন গুহ, ময়মনসিংহ বাড়ি ওর, স্কুলে আমার সঙ্গে পড়েছে, ভালো ছেলে ছিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটি নতুন হয়েছে এ বছর ওপেন করবে, সেখানে চলো। আমি সেখানে চলে আসলাম। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। সেখানে ওই সমস্যা কোথায় থাকব। কাজী এমদাদুল হক সাহেব তখন ওখানে ছিলেন, প্রথম ছিলেন নর্মাল হাইস্কুলের হেড মাস্টার। এই ভিক্টোরিয়া পার্কের ওখানে একটা স্কুল, ওইখানে। ওঁর সঙ্গে দেখা করলাম। উনি বললেন আচ্ছা বাসায় এসে তুমি, খবর টবর নিয়ে বললেন। তো এইভাবে ওঁর ওখানে থেকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। ওঁর বাসা ছিল মাহুতটুলিতে।

প্রশ্ন: তার মানে ইউনিভার্সিটিতে আপনারাই প্রথম ব্যাচ?

উত্তর: আমরাই প্রথম ব্যাচ ।

প্রশ্ন: এটা কোন সালে?

উত্তর: ১৯২১ সাল। মাহুতটুলি থেকে হেঁটে আসতাম ইউনিভার্সিটিতে। সাবজেক্ট নিলাম তখন ওই অনার্স ইন ইকনমিক্স, আর সাবসিডিয়ারি ইংলিশ আর Mathematics তখন আমাদের সময় একটা ইংলিস টেস্ট হতো। ভর্তির পরে হতো। আর মুসলিম হলে আমি attached student ছিলাম।

সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বইয়ের প্রচ্ছদ

প্রশ্ন: attached ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে?

উত্তর: একটাই হল ছিল তখন। Main জায়গা যেটা এখন Medical College, এটা তো University building, ওই নিচের তলায় ক্লাস হতো। নিচের তলায় ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি, ইউনিভার্সিটির ক্লাসও। আর দোতলায় ছিল হোস্টেল, আর যেটা এখন Medical হাসপাতালে রুগীদের কেবিন, ওই যে নিচের তলাটা, ওটা খুব বড় হল ছিল। এখন তো কেবিন-টেবিন করে ফেলেছে। এটা ছিল ডাইনিং হল, পাঁচশ' ছেলে একসঙ্গে বসে খেত। Annual Dinner হতো তখন, মুসলিম হল তো তখন নতুন হয়েছে। Sir F. Rahaman Muslim হলের প্রভোস্ট, অমায়িক লোক ছিলেন। সকলের সঙ্গে মেলামেশা করতেন। বাইরেও তাঁর নাম ছিল। উনি আলীগড় ইউনিভার্সিটিতে ছিলেন হিস্ট্রিতে। Annual Dinner-এ সব বড় বড় লোকেরা আসত। Dr. Ziauddin আলীগড় ইউনিভার্সিটির Pro- Vice Chancellor, এরা সব আসত। আরও অনেক বড় বড় লোক আসতেন। তারা সব ইউনিভার্সিটি কোর্টের মিটিং Attend করতেন। They were nominated as member of the University court, তাঁরা Annual Dinner-এ আসতেন। খুব শান-শওকতে Annual Dinner হতো। বক্তৃতা হতো, খাওয়া-দাওয়া হতো। উনি একবার বক্তৃতায় বলছিলেন Like Louis the 14 I feel that I am the Muslim Hall. খুব অমায়িক এবং ভদ্রলোক ছিলেন পরে University'র Vice Chancellor হয়েছিলেন। যাই হোক, ইউনিভার্সিটিতে খুব ভালো ভালো প্রফেসর সব জায়গা থেকে বেছে আনা হয়েছিল।

প্রশ্ন: আপনাদের ডিপার্মেন্টে কে কে ছিলেন?

উত্তর: আমাদের ডিপার্মেন্টে প্রথম আনা হয় হপকিন্‌স এর Dr. Parandrikar. বম্বের। উনি ছিলেন Dr. Bhanderkar. নাম শুনেছেন কিনা জানিনা, History'র তিনিও ছিলেন। Dr. Parandrikar ছিলেন আমাদের প্রফেসর। আর টিচারদের মধ্যে ছিলেন S.B Ayyer. আর একজন ছিলেন মতিলাল দাশ, পরে চলে গিয়েছিলেন। আর ছিলেন দেবেন ব্যানার্জী। ছিলেন K.B Shaha (কৃষ্ণ সাহা)। আর মুসলমানদের মধ্যে ছিলেন, যার আমরা খুব বেশি উৎসাহ পেয়েছি, Mr. Abul Hossain. ওই লেখক আবুল হোসেন। তিনি ছিলেন পলিটিক্সে। উনি পরে ML হয়েছিলেন। আর ছিলেন আবুল কাসেম সাহেব, ইংলিশ-এ। আর আরবী-ফার্সীতে ছিলেন অনেক। Dr. Sadani- আরবী ফার্সীতে বড় বড় সব আনা Shahidullah সাহেব ছিলেন বাংলা আর মিলিয়ে। আর কাজী মোতাহার হোসেন সাহেব ছিলেন ফিজিক্স-এ। এরা সব নিচের দিকে ছিলেন সেই সময় আর কী। তারপরে পাস করে কেউ কেউ ওখানে জয়েন করেন। ইসলাম সাহেব, আলতাফ হুসেন।

যাই হোক, আমরা attached student হিসেবে পড়াশোনা করেছি। ইউনিভার্সিটির ফাংশন-এ মাঝে মাঝে Attend করেছি। ইউনিভার্সিটি Function, all night function-4 ডিবেট-টিবেট ও হতো, সেসব জায়গায় মাঝে মাঝে Attend করেছি, যতটুকু সময় দিতে পেরেছি। তবে এখানে এই একটা ছিল কী, যেমন বললাম যে আবুল হোসেন সাহেব বা ইউনিভার্সিটির টিচাররাও তাদের সঙ্গে ক্লাসের বাইরেও যোগযোগ থাকত। তারা ছেলেদের সঙ্গে আলাপ টালাপ করতেন। তাদের কাছে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সেগুলো তারা সুন্দর করে বোঝাতেন। আর আবুল হোসেন সাহেব বিশেষ করে আমাকে খুব বেশিই উৎসাহ দিতেন। স্যার এফ রহমান সাহেবও আমাকে খুব উৎসাহ দিতেন। Subsidiary English-এ First হয়েছিলাম। সেটা উনি জানতে পেরে খুব encourage করেছেন যে, দ্যাখো, তোমার First class পাওয়া চাই কিন্তু I want you to get a first class এরকমভাবে বলতেন। তো Dr. Parandrikar শেষের দিকে চলে যান এখান থেকে, ওই Bombay র Christian College-এ প্রফেসর হয়ে। তখন আসেন, Mr. Sinha, উনিও পিএইচডি হয়েছিলেন পরে, কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে। আমরা তিন জন অনার্সে First Class পাই। একজন ছিলেন কুমুদরঞ্জন রায় চৌধুরী । সিলেটে বাড়ি। ভালো ছেলে এবং আমি আর হেদায়েত-উল-ইসলাম। ভালো Sportsman ছিলেন। আজিজুল ইসলাম, ওর বড় ভাই হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট। ছিলেন। তো এই হেদায়েত-উল ইসলাম আমার বিশেষ ফ্রেন্ড ছিল। আমার নোট নিয়ে পড়তো টড়তো । সে First class third হয়েছিল। আমি Second, কুমুদ রঞ্জন চৌধুরী first হয়েছিল।

প্রশ্ন: আপনার সাথে total ছাত্র কত জন ছিল?

উত্তর: Economics-এ বোধ হয় ২৫-৩০ জন ছিল।

প্রশ্ন : এর মধ্যে মুসলমান কত জন ছিল?

উত্তর: মুসলমান ওই আমি আর হেদায়েত-উল-ইসলাম। আর কেউ মুসলমান ছিল না।

প্রশ্নঃ অন্য ডিপার্টমেন্টে?

উত্তর: অন্য ডিপার্টমেন্টে ঢের ছিল।

প্রশ্ন: মুসলমান যেসব ছাত্ররা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, সাধারণভাবে এদের পারিবারিক অবস্থা কেমন ছিল?

উত্তর: ভালোমন্দ ছিল। অনেকে স্কলারশিপ পেয়ে এসেছে। কেউ কেউ আবার ইউনিভার্সিটি থেকে.হল থেকে কিছু কিছু সাহায্য পেয়েছে। scholarship, stipend কিংবা seat, এই সব পেয়েছে। আর আরবী, ফার্সীতে অনেক ছিল। আব্দুল জব্বার, তারপরে ফজলুল করিম, তারপরে সিরাজুল ইসলাম সাহেব, তারপরে কাজির হোসেন সাহেবের ছেলে। ওরা অবশ্যি বাইরে থেকে এসেছে। জাকির হোসেন, আজিমুদ্দীন আহমদ, তারা আবার আলীগড় থেকে এখানে পড়তো আসে, আলতাফ হোসেন আবার এখানকার স্টুডেন্টস ছিলেন জহুরুল ইসলাম, হিস্ট্রিতে ফার্স্টক্লাস পেয়েছিলেন।

প্রশ্ন: তো ছাত্র সংখ্যা তুলনামূলকভাবে হিন্দু বেশি ছিল?

উত্তর: হিন্দুই বেশি ছিল। তখন ছাত্র ছিল সব মিলিয়ে about 3000, মুসলিম সব মিলিয়ে হয়ত হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। সব সাবজেক্ট নিয়ে। ল'র স্টুডেন্ট ছিল আবার অনেকেই। তারপর হিস্ট্রিতে ছিল, আরবী-ফার্সীতে তো ছিলই। আমাদের হলে, মুসলিম হলে অবশ্য Provision ছিল যে ঢাকা হলে মুসলিম ছেলে থাকতে পারে, তার দরকার হয়নি আর কী। কার্জন হলের উত্তরে যেটা, এটা ছিল ঢাকা হল।

প্রশ্ন: তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংখ্যা কেমন ছিল?

উত্তর: ছাত্রীর সংখ্যা খুব কম ছিল। আমাদের ইকনোমিক্সে একটি মাত্র মেয়ে ছিল সুসমা সেনগুপ্ত। ডক্টর নরেশ সেনগুপ্ত প্রফেসর অব ল' তারই মেয়ে। তো ওই নিয়ম ছিল কী আমরা বসার পরে টিচারের সঙ্গে তিনি আসতেন। বসতেন এক পাশে। সমস্ত ডিপার্মেন্টে এই নিয়ম ছিল। আবার বেরিয়ে যাবার সময় টিচারের সঙ্গে যেতেন।

সংকলক: অধ্যাপক হুসনে জাহান

প্রশ্ন: আমরা একটা কথা শুনেছি। কোনো ছাত্র যদি কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায় তাহলে তাকে টিচারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর যদি অনুমতি না নিত তাহলে নাকি পাঁচ টাকা জরিমানা করা হতো।

উত্তর: ওটা আমি ঠিক জানি না। আমরা কোনোদিন কথা বলার চেষ্টাও করিনি। আমাদের পরে এসেছেন একটি ভদ্রমহিলা মুসলমান, ফজিলাতুনন্নেসা, তাঁর নাম শুনে থাকতে পারেন। হিন্দু মেয়ে বোধ হয় আরও দু-একজন মাঝে মাঝে আসতো, বাংলাতে এসেছে, বাংলাতে ডক্টর দে ছিলেন প্রফেসর, তার ক্লাসে হিন্দু মেয়ে কয়েকজন এসেছে।

প্রশ্ন: তাহলে আপনাদের সময়ে মেয়েদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল। হয়তো আপনাদের গ্রামে প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় ছিল।

উত্তর: ছিল, যেমন ময়মনসিংহে বিদ্যাময়ী গার্লস স্কুল ছিল। নামকরা স্কুল ছিল। অন্যান্য গ্রামে হয়তো পড়ার ব্যবস্থা ছিল, তবে সেখানে হিন্দুই বেশি আসত, মুসলমান খুব কম আসত ।

আচ্ছা, ইউনিভার্সিটি Life সম্বন্ধে আমি আরও কতগুলো পয়েন্ট বলতে চাই। আমি কলকাতায় পড়ে এসেছি, পরে ঢাকাতেও পড়েছি। এখন এখানকার আমাদের ইউনিভার্সিটির কতগুলো বৈশিষ্ট্য ছিল, সেগুলো অবশ্যি এখনও আছে, যেটা কলকাতা থেকে অনেকটা পৃথক ছিল। আমি আগেও অনেকবার বলেছি যে এখানে ছাত্র শিক্ষকদের সম্বন্ধ অনেকটা ঘনিষ্ঠ ছিল। Education এর দুটি দিক আছে। ছেলেপেলেরা ইস্কুলে কয় ঘণ্টা থাকে? পাঁচ ছয় ঘণ্টা, বাকি সময় তো বাড়িতে থাকে। কাজেই তাদের ওই সময়টার Education সেটারও প্রয়োজন। এই Social respect, আমাদের ঢাকাতে এই সুবিধাটুকু দেওয়া হয়েছিল। Social respect of Education, অবশ্যি Attached Student পুরোপুরি সেটা ভালো করতে পারতো না। তবে যারা হলে থাকত, তাদের জন্য Hall Union. তার Elective principles. Hall Union Provost-কে সাধারণ President থাকতেন । আর

Elected Vice President, Secretary তার Cabinet. এগুলো  Sir F. Rahaman Introduce করেছিলেন, এই Cabinet System Election-এর একটা মহড়া হতো। এই এক পরে পরে তো Election হতো, Election এর মহড়া হতো, Canvassing ইত্যাদি করতো, একটা Training হতো, Hall union, এবং তার মধ্যে Debate এর ব্যবস্থা, এসব ছিল। এছাড়া ডাইনিং হল Management এটাও একটা বেশ Problem ছিল। এক এক ছাত্রকে এক এক মাস Charge দেওয়া হতো, এবং প্রত্যেকের ভিতর Competition হতো কে ভালো manage করতে পারে, ভালো খাওয়াতে পারে। কেউ কেউ এরকম করত সারা মাস কোনো রকমে চালিয়ে শেষের Dinner ভালো করে দিত। তারপরে games outdoor, এসব ব্যবস্থা। এগুলো ধরেন কলকাতায় আমরা ছিলাম, সেখানে কলেজের কোনো টীম হতো না। সেই Areans team or Mohammadan Sporting team. অন্যান্য সমস্ত টীম এইরকম সেখানে ছিল। কিন্তু কলেজে এ রকম কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

অবশ্যি কলেজে Common Room একটা থাকত। Indoor Games হতো। তো এখানে সব Indoor, Outdoor game এর ব্যবস্থা। তারপরে লাইব্রেরি, Reading Room ইত্যাদি। সাধারণত ছেলেদের ভিতরে একটা আলাপ-আলোচনা এবং Teachers-দেরও। আমাদের সময়ও ছিল কি teacher-রা assigned ছিল Particular হলে প্রত্যেকদিন থাকতো। কাজেই Social aspect of the education was better looked after here এবং এটাই help করত অনেককে In there life. সেজন্য এর পরবর্তীকালে undivided Bengal-এ এবং বাংলাদেশেও পাকিস্তান আমলে কিংবা পরেও যারা public life-এ official life কিংবা unofficial life এ important role play করেছে, বেশিরভাগই মুসলিম হলের স্টুডেন্ট। তারপর অবশ্যি এখন অনেকগুলো হল হয়েছে। সেই ইয়েটা, এখন পর্যন্ত তো অনেকটা কাঠামো রয়েছে।

তবে পার্থক্য এই ছিল, আমাদের সময়ে, ওই যে হলে ছেলেরা, এখন যা দেখতে পাওয়া যায়। কারও হাতে কোনো বন্দুক-পিস্তল, লাঠিসোঁটা এগুলো ছিল না। হলে বাইরের লোক, Guest, আত্মীয়-স্বজন আসলে দুদিন তিনদিন থাকত। কিন্তু তারা বরাবর থেকে, বছর থেকে পলিটিক্স করত না। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।

প্রশ্ন: আচ্ছা, Indoor games তখন ঢাকায় কি কি খেলা হতো, কলকাতায় কি কি খেলা হতো?

উত্তর: বেশির ভাগই কেরাম থাকত। আর তো বিশেষ কিছু মনে নেই।

প্রশ্নঃ দাবা?

উত্তর: হ্যাঁ, দাবা খেলা হতো। ঢাকাতে বড় দাবারু ছিলেন আমাদের কাজী মোতাহার হোসেন সাহেব।

প্রশ্ন: উনি কি তখন ছাত্র?

উত্তর: উনি যখন ঢাকাতে আসেন তখন উনি হয় M.Sc Final এর ছাত্র কিংবা Already Assistant হিসেবে join করেছেন। উনি তো দাবার মশগুল খেলোয়াড় ছিলেন।

প্রশ্ন: টেবিল টেনিস তখনও আসে নি?

উত্তর: না। এমনি টেনিস খেলা হতো। টেনিসে আমাদের মুসলিম হলে একজন ভালো খেলোয়াড় ছিল নুরুল ইসলাম।

প্রশ্ন: আর কলকাতায় কি কি খেলা হতো?

উত্তর: কলকাতার তো খেলা দেখার সুযোগ হয়নি। মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে যেতাম, মোহামেডান স্পোটিং এর খেলা দেখতে সবাই যেত।

প্রশ্ন: কলেজে যে অভ্যন্তরীণ খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল, তার মধ্যে কি ছিল?

উত্তর: কলেজে ছিল লাইব্রেরি, Common hal. লাইব্রেরি ছিল ভালো আমাদের প্রেসিডেন্সি কলেজে। আর Common room ছিল। Common room-এ বইটই পড়া, তারপর খেলারও ব্যবস্থা ছিল। ওই ক্যারাম ট্যারাম জাতীয় খেলা।

তবে ওই ছাত্ররা, লেকচার শুনে চলে আসলো। কেউ সন্ধ্যায় চলে আসলো। কেউ লাইব্রেরিতে পড়ল। এরপর আর টিচার-স্টুডেন্ট-এ কোনোরকম যোগাযোগের সম্ভাবনা ছিল না। তো এটাই একটা বৈশিষ্ট্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হয়েছে। বিশেষ করে Sir f Rahaman সাহেব। তিনি তো আলিগড় থেকে এসেছিলেন আলিগড়ের কতকটা প্যাটার্নে এসব Introduce করেছিলেন । এবং সেটা বেশ ফলপ্রসু হয়েছিল।

তো আমি attached student হিসেবে খুব বেশি part নিতে পারতাম না। মাঝে মাঝে নিয়েছি। খেলাতে না, ওই ডিবেট-টিবেট-এ। একবার ডিবেট হয়েছিল। সেটা Created a commotion. Ayyer সাহেব ছিলেন Economics-এর একজন টিচার। উনি একটা প্রস্তাব একবার আনলেন: Anarchism and Bolshevism are the only hopes of mankind. তো সেটা পত্রিকায় আসলো। সেটা আসার পরে University Authority-র ভিতরে একটা Commotion-এর মতো হলো, যে এটা কি রকম প্রস্তাব, এটা পাস হয়ে গেলে সব কম্যুনিস্ট হয়ে যাবে নাকি? CL Rank তখন ছিলেন ইংলিশের রীডার। তারা এর বিপক্ষে। ছিলেন। এদিকে আলতাফ হোসেন কোন পক্ষে ছিলেন মনে নেই। কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে। বেশ সোরগোল হয়েছিল এটা নিয়ে। তখন কি এ ধরনের ডিবেটগুলোতে টিচাররাও অংশগ্রহণ করতেন?

উত্তর: হ্যাঁ, টিচাররাও অংশ নিতেন। স্টুডেন্টরাও নিত। আর ইউনিভার্সিটিতে একবার ইলেকশনে দাঁড়িয়েছিলাম। As Secretary. আর আমাদের সঙ্গে ছিলেন আজীমুদ্দিন আহমদ, বরিশালের As vice-President, আমাদের opponent ছিলেন। Shalahuddin Ahmed. তিনি পরে গভর্নরও হয়েছিলেন। অবশ্যি আমরা হেরে গিয়েছিলাম। তারপরে অফিসের মধ্যে। I was a member of the university union. Dr. Jenkins President. এছাড়া অন্য কোনো Office university-তে আমি গ্রহণ করিনি।

প্রশ্ন: ইউনিভার্সিটি ইউনিয়ন মানেটা কি আপনি একটু বুঝিয়ে দেবেন?

উত্তর: : তখন University Union আলাদা ছিল। এক হলে হলে যার যার ছিল ইউনিয়ন। আর University union একটা আলাদা ছিল, Combined.

প্রশ্নঃ যেটাকে আমরা ডাকসু বলি এখন?

উত্তর: হ্যাঁ, এখন যেটাকে ডাকসু বলে। প্রত্যেক হল থেকে চার জন করে। তিনটা হল ছিলো তো প্রত্যেক হল থেকে চার জন করে মেম্বার হতো, আর উপরে একজন টিচার থা্কতেন।

প্রশ্নঃ এই চারজন কি Nominated ছিল?

উত্তর: Nominated ছিল।

প্রশ্ন: আচ্ছা একটা জিনিস- সে সময় তো, ধরুন অনেকগুলো আন্দোলন হচ্ছে। আপনার অসহযোগ আন্দোলন বা খেলাফত আন্দোলন হচ্ছে। তখন একদিকে Congress আছে, আর একদিকে মুসলিম লীগ তো তখনও হয়নি। However, ওই যে বিভিন্ন যে মতগুলো ছিল, কম্যুনিস্টরা ছিল। এইসব বিভিন্ন মতের ধারক Student-রা কি ছিল? থাকলে তাদের মধ্যে Inter- relation টা কেমন ছিল।

উত্তর: তখন এসব বিভিন্ন মতের students-দের মধ্যে ওই ধরনের ছিল না ঠিক। এমনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে অনেকে মতামত রাখতো, কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো দল করতো না, অমুক দল, এগুলো ছিল না। অবশ্যি 'বিদেশি বর্জনের' যখনই হয় তখন bonfire-এ আমরাও শরীক হয়েছি। দেশি কাপড়-চোপড় পড়ে 'গৃহদাহ' এসব করেছি। তো এছাড়া আলাদা দল করে। কিছু করা আমার মনে পড়ে না।

প্রশ্ন: এখন যে রকম ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, এরকম কোনো সংঘর্ষ আপনার মনে পড়ে না?

উত্তর: না। এরকম সংঘর্ষের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। হয়তো রাতারাতি কেউ একটা কাগজ বের করে ফেলতো, মতানৈক্য অনেক হতো। কিন্তু মারামারি হতো না।

সংকলক: এমএ, ১৯৫৩, ইংরেজি; অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি ও সাধারণ শিক্ষা বিভাগ, ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি

তথ্যসূত্র: সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়— ২০০৯ সালে  ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহামিলন উপলক্ষ্যে বের হওয়া প্রকাশনার দ্বিতীয় খন্ড থেকে নেওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ